তালা-কলারোয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত
উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও কপোতাক্ষের উবছে পড়া পানিতে জেলার কলারোয়া ও তালা উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম তলিয়ে গেছে। পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে বীজতলাসহ প্রায় দুই হাজার বিঘা জমির আমন ধান। প্রতিদিন পানি বাড়তে থাকায় ওই জনপদের মানুষ ঘরবড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন স্কুল মাদ্রাসাসহ এলাকার উচু স্থানে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে। ত্রাণের অভাবে অভূক্ত শতাধিক মানুষ। তালা-কলারোয়ার প্লাবিত এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।
কলারোয়া উপজেলার দিয়াড়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নন জানান, পানিতে তার এলাকার দিয়াড়া মাঠপাড়া, আবাদপাড়া, সানাপাড়া, মিরডাঙ্গা ও পাকুড়িয়ার প্রতিটি বাড়ির অর্ধেক পরিমান তলিয়ে গেছে। ইউনিয়নের ছয়শ পরিবারের প্রায় ২৫০০ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যাত্র আশ্রয় নিয়েছে। ২৫টি কাঁচা বাড়ি ধসে পড়েছে। ৩০ বিঘা জমির আউশ-আমন ধানের বীজতলা। আগাম রোপন করা একশ বিঘা জমির ধান ও ৫৫ টির মতো মাছ চাষের পুকুরসহ ঘের ভেসে গেছে। বিভিন্নস্থানে আশ্রয় নেওয়া এসব অভূক্ত মানুষদের বরাদ্ধ না থাকায় কোন ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। তিনি দ্রুত সরকারি সহায়তা প্রদানের আহবান জানান।
দিয়াড়া সিনিয়র মাদ্রাসার পরিত্যক্ত ভবনে আশ্রয় নেওয়া রবিউল সানার স্ত্রী আলেয়া বেগম (৪২) জানান, ঘরবড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় চার সদস্যের পরিবার নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন। রান্না খাওয়ার জন্য ঘরে চাল ডাল নেই। দুই বেলা শুকনো রুটি খেয়েই থকাতে হচ্ছে।
আশ্রয় কেন্দ্র থেকে গোলাম মোস্তফা, আব্দুস সাত্তার, ইনছার আলী, বাবলু, আতিয়ার রহমান ওয়াজেদ আলীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, এলাকার প্রতিটি বড়ি পানিতে স্থান বিশেষ ৩ থেকে ৭ ফুট পর্যন্ত নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। মাঠের ফসলও পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। গরু ছাগলসহ সহায় সম্বল নিয়ে তারা ঘর বড়ি ছেড়ে দিয়েছেন।
কলারোয়ার জয়নগর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শেখ ফিরোজ আহম্মেদ জানান, পানির চাপে কপোতাক্ষের বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে তার এলাকার উত্তর ক্ষেত্রপাড়া, দক্ষিণ ক্ষেত্রপাড়া, বেলেমাঠ ও মোল্যা পাড়ার বাড়ি ঘরে পানি উঠে গেছে। পানিতে ইউনিয়নের প্রায় ৭০০ বিঘা জমিন ফসলসহ আটটি বাড়ি ক্ষতি হয়েছে। নদের উপছে পড়া ঢলে এলাকায় প্রতিদিন ১৪ ঘন্টায় দুই থেকে তিন ইঞ্চি করে পানি বাড়ছে। পলি জমে নদী ভরাট ও তাতে প্রচুর পরিমানে কচুরি পানা থাকায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।
কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন জানান, তিনি পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
তালা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, তার ইউনিয়নের গোপালপুরে বাঁধ ভেঙে পানি গ্রামের ভিতরে প্রবেশ করছে। স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে এলাকার মানুষকে নিয়ে বাঁধটি সংস্কার করে দেওয়ায় ২১টি গ্রাম প্লাবনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।
তালার ইসলামকাটি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রঞ্জন রায় বলেন, ইসলামকাটি ইউনিয়নের দুটি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
তালা-কলারোয়া সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্যাহ জানান, তিনি কপোতাক্ষ নদের পানি নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গ্রামে ঢুকছে এমন খবর পেয়ে তালা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান বাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেছেন বলে জানান।
কলারোয়া-তালা পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার কপোতাক্ষ তীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তালা উপজেলার ধানদিয়া ইউনিয়নের উত্তর সারসা, দক্ষিণ সারসা, কুটিঘাটা ও কৃঞ্চনগর এলাকার বেশ কিছু বাড়ীতে পানি উঠে গেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের আমন বীজতলা। নষ্ট হয়েছে তরীতরকারী শাকসবজির ক্ষেত।
কপোতাক্ষ নদের সাগরদাড়ি, কোমরপুর গোলাঘাটান কাছিকাটাসহ ১৩টি পয়েন্দে নদীর উপর পারাপারের জন্য বাঁশ দিয়ে সাকো তৈরী করা রয়েছে। এসব বাঁশের সাকোয় কচুরিপনা আটকে থাকায় নদের পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে পানি নিস্কাশন হচ্ছে না।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।