পিলারে আটকে আছে ছাতকের সুরমা সেতু
ছাতকের সুরমা নদীর উপর ২০০৬ সালে শুরু হয়েছিল সেতুর নির্মান কাজ। তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওযার কথা ছিল। এক বছরের মধ্যে আট কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর চারটি স্তম্ভ (পিলার) নির্মাণ করা হয়। এর পর প্রকল্পটি এডিপি থেকে বাতিল করা হয়। ফলে বন্ধ হয়ে পড়ে কাজ। দীর্ঘ আট বছর ধরেই নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেতু নির্মান কাজ শেষ করতে ৫১ কোটি টাকার একটি সংশোধিত প্রকল্প যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। সেটি অনুমোদন হলে পুণরায় সেতুর কাজ শুরু হবে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পরিকল্পনাহীনভাবে কাজ শুরু করায় এই সেতুর ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সংযোগ সড়ক তৈরির সুযোগ না থাকায় সেতুটির কাজ আর শুরু না হতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। এতে করে নদীর মধ্যে স্তম্ভ নির্মাণের আট কোটি টাকার পুরোটাই ‘জলে গেলো’ বলে দাবি তাদের।
এলাকাবাসি জানান, সুনামগঞ্জের হাওর বেষ্টিত উপজেলা ছাতক ও দোয়ারাবাজারের সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সুরমা নদীর উপর একটি সেতু নির্মানের দাবি দীর্ঘদিনের। বিএনপি নেতৃত্বাধিন চার দলীয় জোট সরকারের আমলে এলাকাবাসীর স্বপ্নের এই সেতুর কাজ শুরু হলেও একবছর পরই তা বন্ধ হয়ে যায়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) সুনামগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ছাতকের সঙ্গে দোয়ারাবাজার উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ছাতক পৌর শহরের বাজনামহল এলাকায় সুরমা নদীর ওপর ২০০৪ সালে এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। একই বছরের ২৩শে আগষ্ট ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এরপর সরকারের একটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেতুর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর কোনো কাজ হয়নি।
২০১০ সালে সেতুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য জন্য ৫১ কোটি টাকার একটি নতুন প্রকল্প যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু এর কোনো অগ্রগতি নেই। প্রকল্পটি অনুমোদিত না হলে সেতুর কাজ আর নাও হতে পারে বলে জানিয়েছেন সওজ’র কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর ছাতক শহর অংশে তিনটি পাকা পিলার ও নদীর ওপারে আরও দুটি পিলারের কাজ করা হয়েছে। সেতুর দুই পাড়ের সংযোগ অংশের কিছু পাকা কাজও হয়েছে। এ ছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি। নদীর পূর্ব পাড়ে সেতুর ঠিক মুখেই গড়ে উঠেছে আকিজ গ্রুপের কারখানাসহ আরো বেশকয়েকটি কারখানা। রয়েছে রেলওয়েসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ফলে সেতু নির্মিত হলেও সংযোগ তৈরি করতে ঝামেলায় পড়তে হবে। এ কারনে সেতুটির নির্মান কাজ শুরু হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
ছাতকের খোমনা এলাকার বাসিন্দা রশীদ আহমদ বলেন, যতটুকু জানতে পেরেছি এই সেতুর কাজ আজ শুরু হবে না। নির্মিনাধীন সেতুর কাছাকাছি গড়ে উঠা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সেতুটির কাজ শুরু না করার চাপ দিচ্ছে। সেতুর কাজ শেষ হলে সংযোগ সড়কের জন্য তাদের ক্ষতি হতে পারে ভেবেই চাপ দিচ্ছে তারা। এছাড়া এই সেতুটি পরিকল্পনাহীনভাবে নির্মান কাজ শুরু করা হয়েছিলো। এই অবস্থায় এই সেতু আর হবে কি না, মানুষের মধ্যে সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সওজ সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আমিন জানান, সেতুর কাজ ৩০ ভাগ হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়। সেতুর কাজ পুণরায় শুরুর জন্য ৫১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে। এ প্রকল্প অনুমোদন না হলে হয়তো সেতুর কাজ আর হবে না।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।