জলবায়ু ট্রাষ্ট ফান্ডের অর্থায়নে নির্মিত ঘর পাচ্ছে না গৃহহীনরা
উচ্চ আদালতের মামলায় নিষেধাজ্ঞার কারণে সরকারি ভাবে জলবায়ু ট্রাষ্টের অর্থায়নে আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ্যদের জন্য নির্মাণ করা সাড়ে চারশ পাকাঘর বুঝে দিতে পারেনি সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ। তবে উপকুলীয় জনপদের গৃহহারা মানুষ ঘরপেয়েও বসবাস করতে না পারার কারণে চরমক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এদিকে আইনি জটিলতায় কারণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুই বছর ধরে তাদের কাজের অর্থ ছাড় করাতে পারছে না। প্রায় ৬ কোটি টাকা এখনও ছাড় করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আইলায় ক্ষতিগ্রস্থদের পুন:বাসনে সাতক্ষীরায় উপকুলীয় অঞ্চলে চলছে গৃহনির্মান কার্যক্রম। সুপেয় পানির প্রাপ্তির জন্য করা হয়েছে পুকুর খনন। ইতোমধ্যে সরকারের দেওয়া পাকা বাড়ী পেয়ে গৃহীন মানুষ ফিরে পেয়েছে নতুন ঠিকানা। একসময় যেখানে ছিল খুপড়ে ঘর সেখানে সরকারী ভাবে তৈরী করা হচ্ছে পাকা আবাসন। প্রকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ পাকা ঘর পেয়ে খুশির আমেজে রয়েছে।
২০০৯ সালের ২৫ মে সুন্দরবন উপকুলীয় জেলা সাতক্ষীরায় আইলার তান্ডবে লন্ডভন্ড হয় গ্রামের পর গ্রাম। মুহুর্তে পানির সাথে মিশে যায় কাচা ঘর বাড়ী। উপকুলীয় জনপদের মানুষ আশ্রয় নেয় আশ্রয় কেন্দ্রসহ উচুস্থানে। এর পর সরকার জলবায়ু ট্রাষ্ট ফান্ডের অর্থায়নে সাতক্ষীরা জেলায় ২১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যায়ে গৃহনির্মান কার্যক্রম প্রকল্প গ্রহন করে। ২০১২ সাল হতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দুই বছর মেয়াদি এই প্রকল্পটি গ্রহন করা হলেও সময় বাড়ীয়ে ২০১৫ সাল পর্যন্ত করা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সুন্দরবন উপকুলীয় সাতক্ষীরায় প্রকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ী নির্মান ও সুপেয় পানি সংরক্ষন প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ ৪৫৩ টি পাকা ঘর নির্মান কাজ শুরু করে। একই সাথে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় সুপেয় পানি সংরক্সনের জন্য ১০ টি পুকুর খনন করা হয়। এরই মধ্যে সরকারের উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্থ করতে ২০১৩ সালে আশাশুনির মাদারবাড়ীয়া গ্রামের জিএম নুরুজ্জামানসহ তিন জন হাইকোর্টে একটি রীট মামলা দায়ের করে। তার পরও থেমে থাকেনি কাজ। আদালত ঘর হস্তান্তর বন্দ রেখে গৃহ নির্মান কাজ চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দিলে চলতে থাকে পাকা ঘর নির্মান কাজ। এদিকে সম্প্রতি হাইকোটে রীট আবেদন দায়ের করা ৩ জন বাদী তাদের অভিযোগ প্রত্যাহার করেনিয়েছে। কিন্ত এখন সম্পূর্ন অর্থছাড় না হওয়ায় প্রকল্পের সঠিক সময়ে গৃহনির্মান কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় উপকুলীয় অঞ্চলের মানুষের দাবী আইনী প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত নির্মানকৃত পাকা ঘর ক্ষতিগ্রস্থদের হাতে তুলে দেয়া হোক। এদিকে আশাশুনি উপজেলার অনেক গৃহহারা পরিবারের জন্য নির্মান করা ঘর জেলা পরিষদ বুঝে না দিলেও তারা বসবাস শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ যেসব মানুষ সরকারের জলবায়ু ট্রাষ্ট ফার্ন্ডের অর্থায়নে পাকা ঘর পেয়েছে তার দারুন খুশি। আশাশুনির পরিতোষ মন্ডল,আব্দুর রশিদ, সাইফুল ইসলাম দাবী করেন ঘরের পাশাপাশি সরকারী ভাবে যেন স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। এবং পর্যাপ্ত সুপেয় পানি সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত পুকুর খননসহ বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহন করে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার দাবী উপকুলীয় জনপদের মানুষের।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকুলীয় জনপদে একদিকে যেমন মানুষ বসবাসের জন্য সরকারী ঘর পাচ্ছে অন্যদিকে সেখানে বিদ্যুৎ বিবস্থার উন্নতি বাস্তাঘাট সংষ্কারসহ টেকসহ বেড়ী বাধ দেয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, জলবায়ু ট্রাষ্টের অর্থায়নে প্রায় ঘর নির্মানের কাজ শেষের দিকে। তবে প্রকল্পের সম্পূর্ন অর্থ ছাড় হলে দ্রুত সুফলভোগিদের মাঝে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ প্রশাসক মুনসুর আহমেদ জানান, বর্তমান সরকার উপকুলীয় গৃহহারা মানুষের বসবাসের জন্য পাকা ঘর দিয়েছে। ইতোমধ্যে নির্মান কাজ শেষের দিকে। তবে একটি স্বার্থনেষী মহল সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করতে নানা ধরনের অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তিনি জানান, দ্রুত উচ্চ আদালতের রীট মামলার বিষয়টি নিষ্পত্তি করে গৃহহারা মানুষের মাঝে নতুন পাকা ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।