- হোম
- >
- ধর্ম ও জীবন
- >
- রোজার ঐতিহাসিক তাৎপর্য
রোজার ঐতিহাসিক তাৎপর্য
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ১৯ জুন, ২০১৫
প্রিন্টঅঅ-অ+
রোযা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। আদি কাল থেকেই রোযা মানুষের আত্মসুদ্ধির পথ হিসেবে প্রচলন আছে। যেমন মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন-“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমনটি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববরতীদের ওপর,যাতে তোমরা তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।” এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,রোযা পূর্ববর্তী যুগেও ফরজ ছিল।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অনুসারে রোযার ইতিকথা নিম্নে তুলে ধরা হলো –
* হযরত আদম (আঃ)-এর যুগে রোযা
পৃথিবীর বুকে সর্বপ্রথম কে রোযা রেখেছিলেন? এ প্রশ্নের জবাবে হযরত খিযির ইবনে হুবাইশ (রহঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম- আইয়্যামে বীজ কি? উত্তরে তিনি বললেন-আল্লাহ পাকের নিষিদ্ধ ফল খেয়ে হযরত আদম (আঃ) জান্নাত থেকে দুনিয়ায় প্রেরিত হন এবং তাঁর দেহের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। তাঁর এই দুর্দশায় ফেরেশতাগণ আল্লাহর সমীপে কান্নাকাটি করে হযরত আদম (আঃ)-এর মুক্তি কামনা করেন। ফলে আল্লাহ পাক হযরত আদম (আঃ)-এর নিকট এই মর্মে ওহী পাঠালেন যে, আপনি চন্দ্রমাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখে রোযা রাখুন। হযরত আদম (আঃ) তা-ই করলেন। ফলে তাঁর দেহের রং আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠল। একারনে এই তিনটি আইয়্যামে বীজ বা উজ্জ্বল দিন বলা হয়।
* হযরত নূহ (আঃ)-এর যুগে রোযা
হাদিস শরীফে হযরত নূহ (আঃ)-এর যুগে রোযার প্রমাণ পাওয়া যায়। হযরত রাসুল (সাঃ) ইশরাদ করেন- “ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন ছাড়া হযরত নূহ (আঃ) সারা বছর রোযা রাখতেন।”
(ইবনে মাজাহ্ )
তাফসীরে ইবনে কাসীরে উল্লেখ আছে, হযরত নূহ (আঃ)-এর যুগে প্রতিমাসে তিনদিন রোযা রাখার হুকুম ছিল। হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগ পর্যন্ত বহাল ছিল। শুরুতে মুসলমানগণও মাসে তিন দিন রোযা রাখতেন।মাহে রমজানের একমাস রোযা পালনের হুকুম সম্বলিত আয়াত নাযিল হলে, তা রহিত হয়ে যায়।(তাফসীরে ইবনে কাসীর)
* হযরত মুসা (আঃ)-এর যুগে রোযা
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিজরত করে মদীনায় আগমণ করার পর দেখলেন যে, ইয়াহুদীরা আশুরার দিন রোযা পালন করছে। তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন- এটি কি ধরনের রোযা ? জবাবে তারা বলল, এটি আমাদের জন্য একটি পবিত্র দিন। এদিনে আল্লাহ তা’আলা তাঁর দুশমন ফির’আউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে হত্যা করে বনী ইসরাঈলকে নাজাত দিয়েছেন। তাই এ দিনে শুকরিয়াস্বরূপ হযরত মুসা (আঃ) রোযা রাখতেন।(বোখারী শরীফ)
এ হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয় যে, হযরত মুসা (আঃ)-এর যুগেও রোযা ছিল এবং সে ধারা বনি ইসরাইল ও ইয়াহুদীদের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগ পর্যন্ত বজায় ছিল।
* হযরত দাউদ (আঃ)-এর যুগে রোযা
হযরত দাউদ (আঃ)-এর জন্মের সময় কৌতুহলী জনতা তাঁর মাতা মারইয়ামকে তাঁর জন্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করতে থাকলে, উত্তরে তিনি বললেন -“আমি দয়াময় আল্লাহর উদ্দেশ্যে মান্নত করে রোযা রেখেছি। সুতরাং আমি কোন কিছুতেই কোন মানুষের সঙ্গে বাক্যলাপ করবো না। ”
(সুরাহ্ মারইয়াম,২৬)
জাহেলী যুগে কুরাইশ ও মুশরিকদের রোযা উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-‘জাহেলী যুগে কুরাইশরা আশূরার দিনে রোযা রাখত।’ (বোখারী শরীফ) সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে,রামাজানের একমাস সিয়াম সাধনা নির্দিষ্ট হবার পূর্বে বিশ্বের সকল জাতিই কম-বেশি রোযার সাথে পরিচিত।
** ইসলামের রোযা
ইসলামী শরীযতে রামাজানের রোযা ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরী সনের শা’বান মাসের মাঝামাঝি সময়ে। এর পূর্বে মুসলমানদের ওপর রোযা ফরজ ছিল কি-না, এব্যাপারে মতভেদ আছে । কারো কারো মতে, রামাজানের পূর্বে কোন রোযা ফরজ ছিল না। আবার কারো কারো মতে, আশুরার রোযা ফরজ ছিল। আবার কারো কারো মতে,আইয়্যামে বীজের রোজা ফরজ ছিল। পরবর্তীতে রামাজানের বিধান অবতীর্নের পর তা রহিত হয়ে যায়।
ইসলামের সেই প্রাথমিক রোযার সময়ে নিয়ম ছিল যে, সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার করার সময় থেকে নিয়ে ঘুমাবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্বামী-স্ত্রী সহবাস করা যাবে। কিন্তু রাতে একবার ঘুমিয়ে পড়লে, তার জন্য সবকিছু নিষিদ্ধ হয়ে যেত। এতে অনেক সাহাবী (রাঃ) নানা রকম অসুধিবার সম্মুখীন হন।
সাহাবায়ে কেরামের এসব সমস্যার সমাধানকল্পে আল্লাহ তা’আলা আয়াত নাযিল করেন-“তোমাদের জন্য রামাজানের রাতে স্ত্রী সহবাস বৈধ করা হয়েছে। আর খাও এবং পান কর, যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা (সুবেহ সাদিক) তোমাদের নিকট পরিস্ফুট হয়ে ওঠে।” (সুরাহ্ বাকারা, আয়াত ১৮৭)
আমাদের সৌভাগ্য যে,আমাদের জন্যই একমাস ব্যাপী রোযা ফরজ করা হয়েছে। মাহে রমজান মাসের প্রতিটি ফরজ অন্য যে কোন মাসের ৭০টি ফরজের সমান। রোজা আমাদের জন্য রহমত,মাগফেরাত, এবং নাজাত’রে সুসংবাদ নিয়ে হাজির। আমরা যেন,রোজার হক যথাযথ ভাবে আদায় করতে পারি এই কামনাই করি। আমিন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।