- হোম
- >
- ধর্ম ও জীবন
- >
- ইফতারের ফজিলত ও মরতবা
ইফতারের ফজিলত ও মরতবা
এই পবিত্র রমজানুল মোবারকের অন্যতম দান হলো ইফতার। রসূল (স.) বলেন: কেউ যদি রমজান মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় তাহলে ঐ ইফতার করানোটা তার গুনাহ মাফের ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে এবং সে একটি রোজার সওয়াব পাবে।
ইসলামের যেকোনো বিধানই তাৎপর্যবহ। রোজা পালনে ইফতারের অপরিসীম গুরুত্ব এবং সময়মতো ইফতার করার মধ্যে রয়েছে অশেষ সওয়াব ও কল্যাণ। রোজা পালনে ইফতারের বিধানটি মোটেই সাধারণ বিষয় নয়। এর ভেতর রয়েছে আল্লাহভীতি, নিষ্ঠা, সংযম এবং প্রবৃত্তি দমনের চরম নিদর্শন। সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মানুষের আত্মশুদ্ধি, সংবেদনশীলতা, পারস্পরিক সহমর্মিতা, গরিবের প্রতি ধনীদের ভালোবাসার উপলব্ধি ঘটে এবং এটি আরো বেশি উজ্জ্বল ও উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
একজন রোজাদার ইফতারের দ্রব্যসামগ্রী সামনে রেখে নির্দিষ্ট সময়ের অপেক্ষায় বসে থাকেন। এতে যে কী এক অপার আনন্দ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তখন এক অপূর্ব দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। কী কঠিন প্রতীক্ষা। সারা দিন অভুক্ত থেকে ইফতারির সরষে পরিমাণ সুস্বাদু খাদ্যসামগ্রী এক সেকেন্ড আগেও স্পর্শ করা যায় না। আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের এই ইফতার মুহূর্তে ফেরেশতাদের ডেকে বলবেন, দেখো তো, আমার বান্দাদের ধর্মভীরুতার কী অপূর্ব রূপ।
হজরত রাসুলে করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা ইফতারের সময় হওয়ামাত্র ইফতার করে নাও। এতটুকু বিলম্ব করো না। এ সম্পর্কে তিরমিজি শরিফে উল্লেখ আছে, আমি ওই ব্যক্তিকে সর্বাধিক ভালোবাসি যে ইফতারের সময় হওয়া মাত্র ইফতার করে নেয়। আবু দাউদ শরিফে আছে, হজরত রাসুলে পাক (সা.) যখন ইফতার করতেন, তখন বলতেন, আমার তৃষ্ণা নিবৃত্ত, আমার শিরা-উপশিরা সিক্ত হয়েছে এবং আল্লাহ পাক পরওয়ারদেগারের পুরস্কার নির্ধারিত হয়ে গেছে। ইফতারের সময় হালালদ্রব্য দ্বারা ইফতার করা মহা পুণ্যের কাজ।
ইফতারের দোয়া : 'আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া বিকা আমানতু আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়ালা আলা রিজকিকা আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।' ইফতারের সময়টি যেমন সুনির্দিষ্ট, তেমনি এ সময়ে আল্লাহ পাকের কাছে রোজাদার ব্যক্তির দোয়াও কবুল হওয়ার পরম মুহূর্ত।
নিজে একাকী ইফতার করার যেমন সাওয়াব রয়েছে, তেমনি অন্যদেরও ইফতার করানোতেও আরো বেশি মাহাত্ম্য, ফজিলত ও পুণ্য আছে, যা পবিত্র হাদিসগ্রন্থগুলোতে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এ বিষয়ে বায়হাকিতে বর্ণিত আছে, হজরত রাসুলে পাক (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতারি করাবে, সে এক রোজাদার ও গাজীর তুল্য সাওয়াব অর্জন করবে। হজরত রাসুলে মকবুল (সা.) আরো ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মাহে রমজানে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে ব্যক্তির জন্য গুনাহ মাফ এবং রোজাদার ব্যক্তির সমতুল্য সাওয়াব প্রাপ্ত হবে।
একবার সাহাবিরা আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী, আমাদের মধ্যে এমন অনেক লোক রয়েছে, যাদের ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই। জবাবে রাসুলে মকবুল (সা.) বললেন, কাউকে পেট ভর্তি করে ইফতার করাবে-এমন কোনো শর্ত নেই। কেউ রোজাদার ব্যক্তিকে একটি মাত্র খেজুর বা পানি দ্বারা ইফতার করালেও সে সাওয়াব লাভ করবে। ইফতারের ফজিলত ও মরতবা সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, রমজান মাসে কোনো রোজাদার ব্যক্তিকে কেউ যদি সামান্য পানি দ্বারা ইফতার করায়, আল্লাহপাক রোজ কেয়ামতে তাঁকে হাউজে কাওসারের পানি পান করাবেন, যাতে তার বেহেশত গমন পর্যন্ত কোনো তৃষ্ণাই অনুভব হবে না।
অন্য আরেক হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, কেউ হালাল রুজি দ্বারা রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করালে রমজানের প্রতিটি রাতে তাঁর জন্য ফেরেশতারা আল্লাহর দরবারে রহমত কামনা করবেন এবং স্বয়ং জিবরাইল (আ.) পবিত্র কদরের রাতে তাঁর সঙ্গে মোলাকাত করবেন। মোট কথা, সারা দিন সিয়াম শেষে একজন রোজাদারের ইফতার করা ও করানোর মধ্যে রয়েছে আনন্দ ও অশেষ নেয়ামত এবং বরকত।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।