আগামিকাল শিল্পকলায় ভাস্কর নভেরা আহমেদের স্মরণসভা
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ১৬ জুন, ২০১৫
প্রিন্টঅঅ-অ+
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে বরেণ্য শিল্পী ভাস্কর নভেরা আহমেদ স্মরণে তাঁর বর্ণিল ও কর্মময় জীবন নিয়ে আগামিকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬.৩০টায় একাডেমীর জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আলোচনাসভা আয়োজন করা হয়েছে।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই, শিল্পসমালোচক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ও স্থপতি রবিউল হুসাইন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন একাডেমীর চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ভাস্কর্যশিল্পের অন্যতম অগ্রদূত এবং প্রথম বাংলাদেশী আধুনিক ভাস্কর নভেরা আহমেদ। ২৯ মার্চ ১৯৩৯ সালে সুন্দরবন এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। চাচা নাম রাখেন নভেরা। ফার্সি শব্দ নভেরা’র অর্থ নবাগত, নতুন জন্ম। কর্মসূত্রে তাঁর বাবা সৈয়দ আহমেদ কর্মরত ছিলেন সুন্দরবন অঞ্চলে। তবে পৈত্রিক নিবাস চট্টগ্রামের আসকারদিঘির উত্তর পাড়।
পরবর্তীতে বাবার চাকরিসূত্রে কিছুকাল কলকাতায় অবস্থান করায় নভেরা’র শৈশব কেটেছে কলকাতা শহরে।বিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালেই তিনি নাচ, গান শেখার পাশাপাশি মাটি দিয়ে মডেলিং করতেন। তিনি কলকাতার লরেটা থেকে প্রবেশিকা ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত বিভাগের পর তারা পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান বাংলাদেশ কুমিল্লায় চলে আসেন। এসময় নভেরা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। পিতার অবসর গ্রহণের পর তাদের পরিবার আদি নিবাস চট্টগ্রামে গিয়ে বসবাস শুরু করে এবং এরপরে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন।
পরবর্তী ১৯৫০ খ্রি: আইন শিক্ষার জন্য তাকে পাঠানো হয় লন্ডনে। তবে শৈশব থেকেই নভেরার ইচ্ছা ছিল ভাস্কর্য করার, তাই তিনি সিটি অ্যান্ড গিল্ডস্টোন কার্ভিং ক্লাসে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৫১ খ্রি: তিনি ভর্তি হন ক্যাম্বারওয়েল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটসে ন্যাশনাল ডিপ্লোমা ইন ডিজাইনের মডেলিং ও স্কাল্পচার কোর্সে সেখানে পাঁচ বছর মেয়াদের ডিপ্লোমা কোর্স করার পর ১৯৫৫ খ্রি: তিনি ইতালির ফ্লোরেন্স ও ভেনিসে খাস্কর্য বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন।
শিক্ষা জীবন শেষে ১৯৫৬ খ্রি: জুন মাসে নভেরা দেশে ফিরে আসেন। সে সময়ে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মানের উদ্যোগ চলছিল। ভাস্কর হামিদুর রহমানের সাথে নভেরা আহমেদ শহীদ মিনারের প্রাথমিক নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু করেন।
তিনি প্রায় ৪৫ বছর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্যারিসে বসবাস করেন। আমাদের দেশের স্থাপত্য ভাস্কর্যের সর্বপ্রথম উদাহরণ হচ্ছে শিল্পী হামিদুর রহমান, ভাস্কর নভেরা আহমেদ এবং স্থপতি জাঁ দেলোরা কর্তৃক নকশাকৃত ভাষা আন্দোলনের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। জাঁ দেলোরা তখন সরকারের স্থাপত্য বিষয়ক উপদেষ্টা।
সৈয়দ শামসুল হক তাঁর হৃৎকলমের টানে সংকলনটিতে এ-প্রসঙ্গে বলেছেন হামিদুর রহমান চিত্রকর, ঢাকার শহীদ মিনারের পরিকল্পণাকারী শিল্পী দুজনের একজন অপর জন ভাস্কর নভেরা আহমেদ। তিনি এছাড়াও লিখেছেন মনে পড়ে গেল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশা করেছিলেন যে দুজন তাদের একজনের কথা আমরা একেবারেই ভুলে গিয়েছি।
প্রথমত আমরা জানিনা এই শহীদ মিনারের নকশা কারা করেছিলেন, যদিওবা কেউ জানি তো জানি শুধু শিল্পী হামিদুর রহমানের নাম। খুব কম লোকেই চট করে মনে করতে পারেন যে হামিদুর রহমানের সঙ্গে আরো একজন ছিলেন। হামিদুর রহমানের সঙ্গে বলাটা ভুল হবে দুজনে এক সঙ্গে এই শহীদ মিনারের নকশা করেছিলেন। অপর সেই ব্যক্তিটি হচ্ছে নভেরা আহমেদ।
ভাস্কর নভেরার প্রথম একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছিল ১৯৬০ সালের ০৭ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় গণ গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার।
মৃত্যুর পূর্বে বছরখানেক ধরে নভেরা আহমেদ শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ২০১৫ সালের ০৫ মে মঙ্গলবার প্যারিসের স্থানীয় সময় রাত ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে ৭৬ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।