যুবলীগ নেতা তৌহিদুলের মৃত্যুতে এলাকায় স্বস্তি
মোঃ রাজু খান, ঝালকাঠি
প্রিন্টঅঅ-অ+
ঝালকাঠিতে যুবলীগ নেতা ও র্যাবের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী তৌহিদুলকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের গগন বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বিনয়কাঠি ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুলকে গগন বাজারে আক্রমণ করে দুর্বৃত্তরা। এসময় তৌহিদুলকে লাঠি, লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। হত্যার পরে দুর্বৃত্তরা মৃতদেহ টেনে নিয়ে পার্শ্ববর্তি বাবুগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত মুশুরিয়া এলাকার একটি খালে ফেলে দেয়।
স্থানীয়রা মৃতদেহটি তুলে খালের পাশের রাস্তায় রাখে। খবর পেয়ে বাবুগঞ্জ বিমানবন্দর থানা পুলিশ ও সদর থানা পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে লাশটি শনাক্ত করে। হত্যাকান্ডের পর লাশটি বিমানবন্দর থানা পুলিশের আওতায় উদ্ধার হওয়ায় ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে স্বজনরা জানিয়েছে।
তৌহিদুল সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের সঞ্জয়পুর গ্রামের আঃ হাই সিকদারের পুত্র। রাতেই ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আঃ রকিব এবং সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ঝালকাঠি সদর থানার ওসি (তদন্ত) আঃ সালাম বলেন, তৌহিদুলের মৃতদেহ বরিশাল বিমানবন্দর থানায় নেওয়া হয়েছে। সেখানে ময়না তদন্তের পর মামলা হবে। তদন্তে কারা এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তা বেরিয়ে আসবে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৌহিদুল-মুহিদুল দু’ভাই হঠাৎ সন্ত্রাসের জগতে আভির্ভূত হয়েই ঝালকাঠির সীমান্তবর্তী বিনয়কাঠি ইউনিয়ন ও তার আশেপাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষ বাহিনীর হামলায় মুহিদুলের একপা পঙ্গু করে ফেলার পর একক নেতৃত্বে তৌহিদুল ও তার বাহিনী দলমত নির্বিশেষে এক মূর্তিমান আতংকে পরিণত হয়। খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়, সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজী, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অপ্রতিরোধ্য সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঝালকাঠি যুবলীগের সাংগঠনিকভাবে সামান্য একটি পদে নাম রেখে ঝালকাঠির উত্তর জনপদের মানুষ তৌহিদুল বাহিনীর হাতে এক প্রকার জিম্মি হয়েছিল। তার এ বাহিনীর ক্যাডারদের হাত থেকে মসজিদের ইমাম, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, ঠিকাদার-ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নারীরা কেউই রেহাই পেতো না এবং তাদের হাতে নির্যাতিতরা অধিকাংশই থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করার সাহস না পেতোনা বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, গত ১২ মার্চ ঠিকাদার রিপনের পকেটে থাকা ১ লাক্ষ ২০ হাজার টাকা, ২ টি মোবাইল ও হেলমেট ছিনিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে ঝালকাঠি থানায় ৫ জন নামধারীসহ ১৫ জনকে আসামী করে ঝালকাঠি থানায় ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি মামলা (নং-১২) দায়ের করা হয়। তৌহিদ বাহিনী ঠিকাদার রিপনের কাছে ২ লাখ টাকা চাদা দাবী করে আসছিলো বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এর পূর্বে গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত ৮ টার দিকে একটি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, গ্রাম্য চিকিৎসক ও মসজিদের ইমাম হাফেজ সৈয়দ আহমেদ (৬০) এর কাছে চাঁদা চেয়ে না পেয়ে হাতুড়ি দিয়ে নির্মম কায়দায় মারধর করে এবং হাত পা ভেঙ্গে দেয় তৌহিদ বাহিনী। বরিশালে গ্রাম্য চিকিৎসকের ট্রেণিং শেষে বাড়ি ফেরার পথে গগন বাজারে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে এ বাহিনী তার উপর হামলা চালিয়ে নগদ ১২ হাজার টাকা, মোবাইল, এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েসহ নিজের জন্য ক্রয়কৃত নতুন কাপড় ও ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। এ ব্যাপারেও সদর থানায় তৌহিদুল ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের এবং সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।
এর তিন দিন পূর্বে ৩০ জানুয়ারী স্থানীয় দৈনিক অজানা বার্তা পত্রিকার সাংবাদকর্মী মো: ইমাম হোসেন কল্যানকাঠি টেম্পু স্ট্যান্ডে সরকারী বই কালোবাজারে বিক্রির ছবি তোলার সময় তৌহিদুলের নেতৃত্বে তার বাহিনীর ক্যাডাররা মারধর করে মোবাইল, ক্যামেরার মেমোরী কার্ড ও সাথে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয় যায়। এ ব্যাপারে ঝালকাঠি থানায় অভিযোগ দায়েরের প্রায় ১৫ দিন পরে এজাহার রেকর্ড করা হয়।
গগন বাজার এলাকায় এক ইউপি সদস্যকে মারধর, এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে মারধর করে উল্টো রাজনৈতিক মামলায় ঢুকালে পরীক্ষা দিতে না পারা এবং কয়েকদিন পূর্বে জনৈক এক বৃদ্ধের ঘরে ২ বোতল পেট্রোল রেখে তাকে বোমাবাজ বানানের পরিকল্পনা করে তৌহিদ বাহিনী।
তৌহিদুলের বিরুদ্ধে গত ২০০৩ সালে গগন স্কুলের তৎকালিন প্রধান শিক্ষক গোলাম কিবরিয়াকে চাঁদা না দেওয়ায় গুলি করে হত্যার চেষ্টা, খুলনার এক ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে কয়েক লাখ টাকা আদায়, বঙ্গবন্ধুর ছবি পায়ের নিচে ফেলে ভেঙ্গে ফেলা, কমপক্ষে অর্ধশত স্কুলছাত্রী ও গৃহবধূর ইজ্জতহরণ এবং তাদের ভিডিও করে পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের ঘটনা ঘটিয়ে আসছিল।
তার বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা ও অর্ধশত জিডিসহ শত শত অভিযোগ থাকলেও সে বহাল তবিয়তে অবস্থান করতো। তৌহিদুল নিহতের খবর পেয়ে এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।