কুকুরের দুধ পান করে বেঁচে আছে শিশু!
জাকির হোসেন পিংকু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রিন্টঅঅ-অ+
অবিশ্বাস্য হলেও কুকুরের দুধ পান করে বেঁচে আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রত্যন্ত ও দূরবর্তী ভোলাহাট উপজেলার নয় বছরের শিশু সেলিম। মাত্র সাত মাস বয়সে ভাগ্যর নির্মম পরিহাসে ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের পঞ্চানন্দপুর গ্রামের সেলিমের পিতা লালচাঁনের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তার মায়ের। কোলের শিশু সেলিম মায়ের সাথে চলে আসে বজরাটেক-সবজা স্কুলপাড়া গ্রামের গরীব নানার বাড়ীতে। পরে তার মায়ের আবার বিয়ে হয় অন্যখানে। সেলিমের মাকে নিয়ে তার সৎ পিতা চলে যায় চট্রগ্রামে।
নানা বাড়ীতে অযত্ন আর অবহেলায় বেড়ে উঠতে শুরু করে সেলিম। গরীব নানা ভ্যান চালিয়ে কোন রকমে অভাবি সংসারটা চালায়। এ সময় জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় খাবারটুকুও সেলিমের ভাগ্যে জুটে না ঠিকমত। একটু বড় হলে হাঁটি হাঁটি পা পা করে সেলিম যখন চলতে শুরু করলো তখন আশেপাশের এবাড়ী ওবাড়ী থেকে নিজের খাবার জুটিয়ে নিত। এভাবেই আরেকটু বড় হলে রাস্তার মোড়ে ও হাট-বাজারে সে তার তার ঠিকানা খুঁজে নেয়। এসময় এমনকি নিজের ক্ষুধা মিটাতে হাট-বাজারে থাকা কুকুরের দুধ খেয়েও শিশু সেলিম নিজের জীবন বাঁচায়। প্রায় প্রতিনিয়তই কুকুরের দুধ খেতে থাকে সে। কুকুরগুলিও সেলিমকে অন্য কুকুরছানাদের মত সন্তান স্নেহে তাদের দুধ খাওয়াতে থাকে সেলিমকে। এতে আশেপাশের মানুষেরা কেউ খুব মজা পায় আবার কেউ অদ্ভূত চোখে তাকিয়ে ঘটনার রহস্য খুঁজে। কিন্তু দু’মুঠো খাবার দিয়ে সেলিমকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি তেমন কেউ।
সম্প্রতি উপজেলা সদর মেডিকেল মোড়ে এক সংবাদকর্মীকে দোকানে চা খেতে দেখে সেলিম এসে টাকার জন্য আবদার করে। এমন সময় আশে পাশের অনেকেই বলে উঠে সে কুকুরের দুধ খেয়ে বড় হয়েছে। ঘটনাটি শুনে প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিলো না সাংবাদিকের। কিন্তু শিশু সেলিমকে জিজ্ঞেস করতেই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলো সে নিজেই। জানালো তার ক্ষুদ্র বঞ্চনাময় জীবনের অভিজ্ঞতার কথা। এদিকে দরিদ্র নানার পক্ষে নিজ সংসার চালিয়ে সেলিমের তেমন খোঁজ রাখা আর সম্ভব হয়নি। অপরদিকে আধ-পাগল বাবা লালচাঁন ছেলে কোখায় কি করে সেটাও দেখেনি কখনও। মা-বাবার আদর যত্নের অভাব আর নানার সংসারের অনটনই ঠেলে দিয়েছে সেলিমকে বাস্তব জীবনের কঠিন পরীক্ষায়। এখন সেলিমের অবলম্বন বাজার এলাকার মা কুকুরগুলো। আর মানুষের কাছে সাহায্য চাইলে কুকুরের দুধ খাওয়ার জন্য অনেকেই তাকে পাশ থেকে তাড়িয়ে দেয়। ছোট শিশু সেলিমের পাশে অবলম্বন হয়ে যদি কুকুর দাড়াতে পারে তবে কোথাও কি কোন হৃদয়বান ব্যক্তি নাই তার পাশে দাঁড়ানোর ?
এ দিকে ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমানের কাছে কুকুরের দুধ পান করা শিশুটির কোন শারীরিক বা মানসিক সমস্যা হতে পারে কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, পাগলা কুকুর জলাতংক-র্যাবিস ও অনান্য রোগ জীবানু বহন করে। সে রকম কুকুরের দুধ খেলে সমস্যা হওয়ার কথা কিন্তু আলোচ্য শিশুটির যেহেতু দীর্ঘ দিন যাবৎ কুকুরের দুধ খেয়েও দিব্যি ভাল আছে ফলে ধারনা করা যায় ঐ সব কুকুর রোগ জীবানু বহনকারী ছিলো না। এখন আর তার তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবার কথা নয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই সমাজবাসীর মানবতার। সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য একটু সহানুভূতি কি সেলিম পেতে পারে না এই সভ্য সমাজের নিকট থেকে ??
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।