ভারতের মেঘালয়ের শিলং সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বেশি কথা বলতে দেয়নি সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এমনকি তিনি কথা বলতে শুরু করলে তাঁর মুখ ঢেকে আসামিদের জন্য নির্ধারিত কক্ষে নিয়ে যায় পুলিশ সদস্যরা।
আজ বুধবার দ্য শিলং টাইমস পত্রিকা তাদের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে। পত্রিকাটি জানায়, সালাহ উদ্দিন আহমেদ দাবি করেছেন, বাংলাদেশ থেকে অপহরণের পর চোখ বেঁধে তাঁকে শিলংয়ে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
সোমবার শিলংয়ের একটি রাস্তায় ইতস্তত ঘোরাঘুরি করছিলেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। এ সময় সন্দেহজনকভাবে চলাফেরার কারণে তাঁকে আটক করে শিলং পুলিশ। এরপর চিকিৎসার জন্য প্রথমে তাঁকে শিলং সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি নিজেকে বাংলাদেশের সাবেক প্রতিমন্ত্রী দাবি করলে সন্দেহ হয় পুলিশের। পরে তাঁকে মানসিক চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্স (মিমহ্যানস) হাসপাতালে।
সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মনোচিকিৎসক ডা. এ কে রায় জানান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। তবে তিনি হৃদরোগ ও কিডনি সমস্যায় ভুগছেন বলে চিকিৎসকদের কাছে জানান। এরপর তাঁকে আবার শিলং সিভিল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে শিলং সিভিল হাসপাতালে সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভর্তি আছেন এ খবর পাওয়ার পর থেকে সেখানে ভিড় করতে থাকেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা। সেখানে নিজের পরিচয় দিয়ে সালাহ উদ্দিন বলেন, দুই মাস আগে ঢাকার উত্তরার একটি বাড়ি থেকে তাঁকে অপহরণ করেছিল অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। তিনি আরো কথা বলতে চাইলে তাঁর সঙ্গে অবস্থান করা পুলিশ সদস্যরা তাঁর মুখ ঢেকে দেয় এবং হাসপাতালে কারাগারের জন্য নির্ধারিত কক্ষে নিয়ে যায় তাঁকে।
সোমবার ভোরে শিলংয়ের গলফ লিংক এলাকায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা একটি মারুতি জিপসি গাড়ি থেকে সালাহ উদ্দিনকে ফেলে যায় বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে শিলং পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
দীর্ঘ দুই মাস পর গত সোমবার সকালে শিলংয়ে বিএনপির এই নেতার দেখা পাওয়া যায়। এখন তিনি পুলিশের হেফাজতে শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ভারতে অনুপ্রবেশের কারণে ফরেনার্স অ্যাক্টে তাঁর বিরুদ্ধ মামলা হয়েছে। তবে মামলা হলেও হাসপাতালে থাকায় তাঁকে এখনই আদালতে ওঠানো যাচ্ছে না।
এর আগে গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে হাসিনা আহমেদ তাঁর স্বামীর বেঁচে থাকার কথা ও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের কথা জানিয়েছিলেন। সালাহ উদ্দিন আহমেদ শিলংয়ের একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
গত ১৯ মার্চ গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চরাঞ্চলে সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধান পাওয়ার গুজব উঠেছিল। পরে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কারো সন্ধান পায়নি।
গত ১০ মার্চ থেকে ‘নিখোঁজ ছিলেন’ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তাঁর পরিবার ও দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
তবে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আটক করা হয়নি বলে দাবি করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধান চেয়ে ১১ মার্চ রাতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গুলশান ও উত্তরা পশ্চিম থানায় যান তাঁর স্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ। তবে কোনো থানাই তাঁর জিডি গ্রহণ করেনি
সালাহ উদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি দেন তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।
রাজধানীর উত্তরার একটি বাড়ি থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ১০ মার্চ—এমন অভিযোগ করে থানা পুলিশের পাশাপাশি উচ্চ আদালতের দারস্থ হয় সালাহ উদ্দিনের পরিবার।
১২ মার্চ হাসিনা আহমেদের করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে কেন খুঁজে বের করা হবে না এবং রোববার তাঁকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। গত ২০ এপ্রিল হাইকোর্ট আগামী ছয় মাস সালাহ উদ্দিন আহমদের খোঁজ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।