বাগেরহাটে মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বড়বাড়িয়া রহমানিয়া সিনিয়র ফাজিল ( ডিগ্রি) মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ বোর্ডের সামনেই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার সকালে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও: মাসুকুর রহমান ও কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি মুন্সি গাউছুল হককে শারিরীক লাঞ্চিত (জুতা পেটা) করে উত্তেজিত প্রার্থী, অভিভাবক ও কার্যনির্বাহী কমিটির অন্য সদস্যরা।
এসময় ঘটনাস্থলে হুলস্থুলের সৃষ্টি হয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বাতিল ঘোষণা করা হয় নিয়োগ প্রক্রিয়া ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, চিতলমারী উপজেলার বড়বাড়িয়া রহমানিয়া সিনিয়র ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক সামাজিক বিজ্ঞান ও সহকারী শিক্ষক কম্পিউটার এ দুটি পদে নিয়োগের জন্য মঙ্গলবার সকালে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্রে চাকরী প্রত্যাশিরা ও মাদ্রাটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত হন।
এসময়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি পছন্দের প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ে। নিয়োগ পরীক্ষার মাত্র কয়েক মিনিট আগে অন্য ক্ষুব্ধ প্রার্থী ও ম্যানেজিং কমিটির অন্য সদস্যরা তাদের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ মাও: মাসুকুর রহমান ও কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি মুন্সি গাউছুল হককে শারিরীক ভাবে লাঞ্চিত করে। এর ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করা হয়।
সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে চাকুরী প্রত্যাশী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এলাকার মোঃ আল আমিন জানান, তিনি এদিন সকালে নিয়োগ পরীক্ষা দেয়ার জন্য সরকারি পিসি কলেজে উপস্থিত হন। এসময় কিছু প্রার্থীর কাছ থেকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও সভাপতি আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে তাদের চাকুরী নিশ্চিত করছেন এ কথা প্রকাশ হয়ে পড়ে। এসময় সংশ্লিষ্টরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের লাঞ্চিত করে।
ঘটনার সময় উপস্থিত মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সদস্য মোঃ মিজানুর রহমান জানান, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে দুনীতিবাজ অধ্যক্ষ ও সভাপতি সহকারী শিক্ষক পদে সাজানো পরীক্ষা মাধ্যমে অযোগ্যদের নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করছিল। যা সবাই মিলে প্রতিহত করেছে।
বড়বাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ জাহাংগীর আলম জানান, এই মাদ্রাসায় ইতিপুর্বেও টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এমন দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ ও সভাপতির কাছে প্রতিষ্ঠান নিরাপদ নয়। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি এই অধ্যক্ষ ও সভাপতির অপসারণ দাবি করেন।
মাদ্রাসার কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ফকির এফতেখারুল ইসলাম রানা জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওঃ মাসুকুর রহমান ও কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি মুন্সি গাউছুল হককে শারিরীক লাঞ্চিত (জুতা পেটা) করে উত্তেজিত জনতা। এই দুইজনে মিলে প্রতিষ্ঠানটি ধংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। এটা অনেক দিনের জমানো ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। ইতিপুর্বেও এই অধ্যক্ষ অনিয়মের মাধ্যমে নিজ জামাতা মাওঃ মহসীনকে আরবী প্রভাষক পদে নিয়োগ দিয়েছে। কয়েকদিন আগে ইংরেজী শিক্ষক পদে ছায়না আক্তার নামের এক প্রার্থী মেধা তালিকায় প্রথম হলেও তাকে নিয়োগ না দিয়ে বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যা স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও কোন ফল হয়নি। এই দুইজনকে মাদ্রাসা থেকে অপসারণ না করলে এলাকাবাসীর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান অচিরেই ধংস হয়ে যাবে।
এবিষয়ে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মাও: মাসুকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে মোবইলে পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের অধ্যক্ষ সুকন্ঠ কুমার মণ্ডল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে এ প্রতিবেদককে জানান, এ অপত্যাশীত ঘটনা তিনি বাগেরহাট সদর থানায় জানলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে তিনি নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।