দীবার জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিলো বখাটে আল আমিন
সৈয়দা রিনভি আক্তার দীবার (১৯) স্বপ্ন ছিলো পড়ালেখা শেষ করে ব্যাংকার হয়ে বাবা-মায়ের আশা পূরণ করা। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। পূরণ আর হলো না। হঠাৎ এক বখাটে থামিয়ে দিল তার জীবন।
প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় দীবার স্বপ্নকে খুন করেছে আখের রস বিক্রেতা বখাটে আল আমিন। এই বখাটের দায়ের কোপে নিভে গেছে দীবার জীবনপ্রদীপ। এই নৃশংস হত্যায় নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বাজনাব সৈয়দপাড়া গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
সৈয়দপাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার এই নির্মম হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। পুলিশ আল আমিনকে আটক করেছে। দীবার লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের শেষে স্বজনের নিকট হস্তান্তরের পর শুক্রবার বিকেলে তার গ্রামের বাড়ি নিয়ে এলে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। শত শত লোক দীবাদের বাড়িতে ভিড় জমায়। পরে জানাজা শেষে সন্ধ্যায় গ্রামের কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
এদিকে শনিবার বেলাব থানা-পুলিশ আল আমিনকে আদালতে প্রেরণ করবে বলে জানা গেছে।
দীবার মতো একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর এভাবে চলে যাওয়াকে মেনে নিতে পারেননি তার স্কুল-কলেজের শিক্ষকরাও।
জানা যায়, বেলাব উপজেলার সৈয়দপাড়া গ্রামের সৈয়দ সামসুজ্জামানের ছোট মেয়ে সৈয়দা রিনভি আক্তার দীবা। পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি, অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি, ২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ গোল্ডেন ফাইভ এবং মনোহরদী উপজেলার পাঁচকান্দী ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ গোল্ডেন ফাইভ পান। ভর্তি পরীক্ষায় টাঙ্গাইলের একটি কলেজে প্রথম হন। কিন্তু তার ইচ্ছা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তাই কোথাও ভর্তি না হয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে। এই জন্য টাঙ্গাইলের সুপারীবাগ এলাকায় তার বোনের বাসায় থেকে কোচিংও করছিলেন। গ্রীম্মের ছুটিতে কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকায় গত সপ্তাহে বাবা সৈয়দ সামসুজ্জামানের সঙ্গে সৈয়দপাড়া বাসায় বেড়াতে আসে। দুই সপ্তাহের পর কোচিং সেন্টার খুললে আবার চলেও যাবেন। দীবার লক্ষ্য তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতেই হবে।
এই মেধাবী ছাত্রী দীবার প্রতি দুর্বল ছিল পার্শ্ববর্তী কাজীরটেক গ্রামের মিয়ার উদ্দিনের ছেলে আল আমিন। সে একতরফাভাবে দীবাকে ভালোবাসত। কিছুদিন পূর্বে দীবাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক ছাত্রের সঙ্গে কথা বলতে দেখে সে মনে মনে খুবই রাগান্বিত হয়। পরে রাস্তায় পেয়ে দীবার কাছে আল আমিন তার প্রেমের কথা ব্যক্ত করে। এতে দীবা রাগান্বিত হয়ে তাকে এই বলে ভর্ৎসনা করে যে, আল আমিন একজন অশিক্ষিত আখের রস বিক্রেতা এবং দীবা একজন কলেজছাত্রী। হকার ও কলেজছাত্রীর মধ্যে প্রেম হতে পারে না। এতে আল আমিন তার প্রতি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে দীবা তার বান্ধবী সানজিদা আক্তার অমিকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের খানবাড়ীর রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করতে যায়। এ সময় আল-আমিন পেছন দিক থেকে দা দিয়ে দীবাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। মারাত্মক রক্তাক্ত অবস্থায় দীবা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বান্ধবী অমির চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। তারা তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে প্রথমে বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়। সেখানে রাত ৯টায় তার মৃত্যু ঘটে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকাবাসী আল আমিনকে ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।
দীবার বাবা সৈয়দ সামসুজ্জামান বলেন, ‘দীবা খুব মেধাবী ছাত্রী ছিল। সে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়ে ছিল। আমার মেয়ে এভাবে চলে যাবে আমি ভাবতেই পারিনি।’
এ সময় মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী আল আমিনের শাস্তি দাবি করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
বেলাব থানা-পুলিশ জানিয়েছে, আল আমিন দীর্ঘদিন যাবৎ দীবাকে অনুসরণ করলেও তার ভালোবাসার কথা কখনো দীবার কাছে প্রকাশ করেনি। তবে দীবা কারো সঙ্গে কথা বলুক, এটা সে সহ্য করতে পারত না।
বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম খান বলেন, ‘আল আমিনকে আটক করা হয়েছে। সে দীবাকে দা দিয়ে কোপের কথা স্বীকার করেছে। এখনো সে জানতে পারেনি দীবা মারা গেছে। আমরাও জানাইনি।’
এ দিকে দীবা হত্যার ব্যাপারে তার বড় ভাই আতিকুজ্জামান বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে আল আমিনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।শনিবার আল আমিনকে আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে ওসি বদরুল আলম খান জানান।
সরেজমিনে সৈয়দপাড়া গিয়ে দেখা যায়, দীবার মৃত্যুর খবর শুনে তাকে দেখতে প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনরা ভিড় জমায়। মেয়ের মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ মা ফরিদা বেগম। মেয়ের কথা বলে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।
sahos24.com | Online bangla news portal
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।