- হোম
- >
- কৃষিজ ও প্রাণিজ
- >
- ফিরতে যাচ্ছে সোনালি আঁশখ্যাত পাটের গৌরব
ফিরতে যাচ্ছে সোনালি আঁশখ্যাত পাটের গৌরব
ঘর সাজানোর উপকরণ থেকে শুরু করে গায়ে দেওয়ার ব্লেজার সবই এখন পাট থেকে তৈরি হচ্ছে। বৈচিত্র্যময় পাটপণ্যের এ তালিকায় আরও রয়েছে জুতা, বাহারি রঙবেরঙের ব্যাগ, মেয়েদের হাতব্যাগ, ঝুড়ি, ওড়নার মতো সব জিনিস। এমনকি মুজিব কোটও তৈরি হচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাট থেকে তৈরি সুতার কারণে। পরিবেশবান্ধব এসব পণ্যে নান্দনিকতার ছোঁয়ার কারণে রুচিশীল ক্রেতাদের নজর কাড়ছে। বাড়ছে রপ্তানিও। এভাবেই পাট তার হারানো ঐতিহ্য একটু একটু করে ফিরে পেতে শুরু করেছে।
সোনালি আঁশখ্যাত পাটের গৌরব ফেরাতেও বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে পাটপণ্য বহুমুখীকরণের এসব উদ্যোগ। জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) তথ্যানুসারে বর্তমানে তোষা পাট থেকে পাটপণ্যের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে চার থেকে পাঁচ ধরনের সুতা ও ফেব্রিক্স তৈরি হচ্ছে। এসব সুতা ও ফেব্রিক্স ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্যাটাগরির পণ্য তৈরি হচ্ছে। এসব পণ্যের মধ্যে আরও রয়েছে ব্যাগ, ফ্যাশন সামগ্রী, বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী পণ্য, গৃহসজ্জার পণ্য ও গৃহের নিত্য ব্যবহার্য বিভিন্ন আসবাব।
বৈচিত্র্যময় এসব পণ্য দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশি ক্রেতাদেরও নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। জুট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী প্রতিমাসে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকার পাটপণ্য রফতানি হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৫ দেশের বাইরেও দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্র্রেলিয়ায় এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।
পাটের প্রচলিত ব্যবহারের ধারণা থেকে বের হয়ে পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে সরকার ২০১৩ সালে জেডিপিসি প্রতিষ্ঠা করে। এ পর্যন্ত ১১ শিল্পকারখানা, ৩১ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান, ১০ মাঝারি ও ৩৮ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে কাঁচামাল সরবরাহসহ সহায়তা করছে জেডিপিসি। এ ছাড়া দেশে ও বিদেশে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এর সুফল মিলতেও শুরু করেছে।
জেডিপিসির পরিচালক মাইনুল হক সমকালকে বলেন, প্রাথমিকভাবে উদ্যোক্তদের ১৪ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে বিদেশেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তিনি জানান, সম্প্রতি প্রশিক্ষণ শেষে ২৫ প্রশিক্ষণার্থীকে তৈরি পণ্য নেদারল্যান্ডস, প্যারিস ও জামার্নির ফ্রাঙ্কফুর্টে প্রদর্শনীর সুযোগ পায় ও ক্রেতাদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়।
বৈচিত্র্যময় পাটপণ্য প্রস্তুকারক ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রবর্তনার পরিচালক শহিদ হুসেইন শামীম জানান, প্রতিমাসে সাড়ে ১২ লাখ টাকার ১৬ হাজার মিটার জুট ব্লেন্ড কটন থেকে তৈরি ফেব্রিক্স সুইজারল্যান্ডে রফতানি করছে তার প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও প্রতিমাসে জুট ব্লেন্ড কটন থেকে তৈরি বিশেষ ধরনের ৫০ হাজার শপিংব্যাগ রপ্তানি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়। দেশীয় মুদ্রায় যার মূল্য সাড়ে ১৯ লাখ টাকা।
পাটপণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না বলেন, পশ্চিমা বিশ্বসহ এশিয়ার ধনী দেশগুলোতে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে বিশ্ববাজারে ৫০০ বিলিয়ন পিস শপিং ব্যাগের চাহিদা রয়েছে। এ বাজার ধরতে উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের রফতানি করা তোষা পাট থেকে ভারতে বর্তমানে ১০৪ ধরনের সুতা ও ফেব্রিক্স তৈরি হয় উল্লেখ করে মুন্না বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে পাটশিল্পের উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশের তোষা পাট বহুমুখী সুতা ও ফেব্রিক্স তৈরির জন্য মানের দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ। আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজালে আগামী ৫ থেকে ৭ বছরে পাটের রফতানি কয়েক গুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যানে (ইপিবি) দেখা গেছে চলতি অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ৬৫ কোটি ২৮ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পাট ও পাট পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা গত অর্থবছরের নয় মাসের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি। শুধু মার্চে রফতানি হয়েছে ৮ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পণ্য। তবে পাটপণ্যের রপ্তানি বাড়লেও কাঁচাপাটের রফতানি কমেছে। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি বছরের নয় মাসে প্রায় ৮ শতাংশ কমে ৭ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের রফতানি হয়েছে।
ইইউভুক্ত দেশগুলো পরিবেশ সচেতনতার কারণে ২০১৬ সাল থেকে শপিংয়ের কাজে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করবে না। ফলে এসব দেশে পাট ও অন্যান্য পরিবেশবান্ধব পণ্যের তৈরি ব্যাগের চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশ এ সুযোগ নিতে পারে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। এ জন্য তারা সরকারকে আরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
sahos24.com | Online bangla news
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।