নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য নয়: ইডব্লিউজি
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল, ২০১৫
প্রিন্টঅঅ-অ+
নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল ইলেকশন ওয়ার্কিং (ইডব্লিউজি) গ্রুপ বলেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অনিয়ম ও সহিংসতার ঘটনায় ভরপুর ছিল। তাই নির্বাচনের দিন সংগঠিত ‘অপকর্ম’ এবং অনিয়মের কারণে ইডব্লিউজি এ নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করে না।
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা তাদের পর্যবেক্ষণের প্রাথমিক তথ্য তুলে ধরেন। সম্মেলনে জানানো হয়, তিন সিটিতে ৬১৯টি কেন্দ্র থেকে তাদের ৬১৯ জন পর্যবেক্ষকের দেওয়া ভোট চিত্রের তথ্য দেখে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত তথ্য তুলে ধরেন ইডব্লিউজি’র পরিচালক আবদুল আলীম। এ সময় নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ইডব্লিউজি’র স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, তালেয়া রেহমান ও কামরুল হাসান।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এ নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক ব্যালট ছিনতাই করে সিল মারার ঘটনা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভোট কক্ষ দখল এবং নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা পরিলক্ষিত হয়েছে। পর্যবেক্ষিত অনেক ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ কার্যক্রমের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হলেও নানা ধরনের নির্বাচনী অনিয়মের কারণে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সার্বিক সততা ক্ষুণ্ন হয়েছে।
ইডব্লিউজি বলেছে, তাদের পর্যবেক্ষিত কেন্দ্রের মধ্যে ঢাকা উত্তরে ৫৫ টি, দক্ষিণে ৪৬টি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ৩৭টি কেন্দ্রে জোরপূর্বক ব্যালট পেপারে সিল মারার ঘটনা ঘটে। ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয় ঢাকা উত্তরে ৩৩ টি, দক্ষিণে ৩৯টি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ৩০টি কেন্দ্রে। এ ছাড়া সহিংসতার ঘটনা ঘটে ঢাকা উত্তরে ৬৬ টি, দক্ষিণে ২৬টি ও চট্টগ্রামে ৭২টি কেন্দ্রে।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং সততা ক্ষুণ্ন হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে আলিম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন পর্যবেক্ষকদের গতিবিধি নির্দিষ্ট করতে, কয়েকটি ওয়ার্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করে। কোনো নোটিশ না দিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষক কার্ড প্রদানে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে।’
পরিকল্পিতভাবে ৩ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম সহিংসতার ঘটানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচনে যেসব জালিয়াতি হয়েছে তা নির্বাচনী ফলাফলকে পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।’
অনিয়মের কারণে ইডব্লিউজিসি এ নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করে না বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া, ভোট কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া ও ভোট কেন্দ্রের ভেতরে গ্রেপ্তার চিত্র তুলে ধরে হয়। এ রকম কয়েকটি ঘটনার সুনির্দিষ্ট উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়, এসব অনিয়ম ও সহিংস ঘটনা ব্যাপক ঘটনার অংশমাত্র। এসব ঘটনার মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে তিন সিটি করপোরেশনে যেসব জালিয়াতির ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তা নির্বাচনী ফলকে পরিবর্তনের উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। অধিকন্তু এসব ঘটনার প্রতিটি ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা, নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রার্থীর এজেন্ট ও নিরাপত্তা বাহিনীর সামনেই ঘটেছে।
ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ নেতৃবৃন্দ ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রেই প্রয়োজনীয় নির্বাচনী মালামাল নিশ্চিত করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে তাদের কাছে কোন ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়নি।
ভোটগ্রহণও শুরু করা হয় যথাসময়ে। সব কেন্দ্রেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত ছিলেন।
ভোটগ্রহণকেন্দ্রগুলোতে গড়ে ৬জন করে নারী ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় বলেও উল্লেখ করেন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ নেতৃবৃন্দ।
তবে তাদের পর্যবেক্ষণে অনিয়মগুলোর উল্লেখযোগ্য ছিল- ভোটকেন্দ্রের অবস্থান ও প্রস্তুতিতে ত্রুটি থাকার কারণে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভোটাররা সমস্যার সম্মুখীন হন।১৪ শতাংশ ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসাররা বিধি অনুয়ায়ী ফলাফল তালিকা কেন্দ্রে টাঙ্গিয়ে দেননি।
চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে ইডব্লিউজি ‘র পর্যবেক্ষণ হলো- ৮নং ওয়ার্ডে মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৩৫মিনিটে ২৫/৩০ জন নির্বাচন কেন্দ্রে জোর করে ঢুকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে বেশিরভাগ ভোটার ওই কেন্দ্র ছেড়ে চলে যায়। যারা যেতে চাননি তাদের মারধোর করা হয়।বহিরাগতরা ব্যালট পেপার ছিনতাই করে সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে দেয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ জানান, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৬ সালে বাংলাদেশের ২৮টি প্রতিষ্ঠিত সিভিল সোসাইটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত হয় ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ।
সংবাদ সম্মেলনে প্রথমে এসব ঘটনার পেছনে একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের কথা বলা হলেও পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব বলা হয় এই রাজনৈতিক দলটি সরকার সমর্থক।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।