- হোম
- >
- আইন-মানবাধিকার
- >
- মুজাহিদ-সাকার আপিল শুনানি কার্যতালিকায়
মুজাহিদ-সাকার আপিল শুনানি কার্যতালিকায়
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল, ২০১৫
প্রিন্টঅঅ-অ+
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর আপিল মামলা শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এসেছে। বুধবারের (২৯ এপ্রিল) কার্যতালিকায় মামলা দু’টি যথাক্রমে ৪ ও ৫ নম্বরে রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এ কার্যতালিকা প্রকাশিত হয়।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদ এবং একই বছরের ১ অক্টোবর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
পরে একই বছরের ১১ আগস্ট মুজাহিদ এবং ২৯ অক্টোবর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী খালাস চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। তবে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় দু’টি মামলায়ই আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ।
এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি মুজাহিদের আপিল মামলার শুনানির দিন ধার্য থাকলেও আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনে পিছিয়ে যায়। গত ৩১ মার্চ ও ৬ এপ্রিলের কার্যতালিকায়ও ছিল মুজাহিদ-সাকার আপিল মামলা। তবে ওই দু’দিন আপিল বিভাগের কার্যক্রমের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় শুনানি হয়নি।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
বুদ্ধিজীবী হত্যা, ফরিদপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যা, একাধিক হত্যা, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন, দেশান্তরে বাধ্য করাসহ সাতটি অভিযোগে ২০১২ সালের ২১ জুন অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুজাহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। এ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তার বিচার শুরু হয়। পরে অবশ্য স্কাইপি ঘটনার কারণে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম পদত্যাগ করলে তার স্থলে নিযুক্ত হন বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর। আর ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান হন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনা ৭টি অভিযোগের মধ্যে প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর চামেলীবাগ থেকে সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনকে অপহরণ করা হয়। মুজাহিদের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণাধীন ৭-৮ যুবক তাকে ধরে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। আজ পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ ২-এ বলা হয়েছে, একাত্তরের মে মাসে একদিন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নেতৃত্বে ফরিদপুর জেলার চর ভদ্রাসন থানার বিভিন্ন গ্রামের ৩০০-৩৫০ বাড়ি পুড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা। পরে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে ৫০-৬০ জন হিন্দু নর-নারীকে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ ৩-এ বলা হয়েছে, একাত্তরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের কোনো একদিন ফরিদপুর শহরের খাবাসপুর মসজিদের সামনে থেকে রাজাকাররা ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট এলাকার রণজিৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে আটক করে। বেলা অনুমান ১১টার দিকে ফরিদপুর পুরনো সার্কিট হাউসে আসামি আলী আহসান মুজাহিদের সামনে পাকিস্তানি সেনা অফিসার মেজর আকরাম কোরাইশীর কাছে হাজির করা হয় বাবু নাথকে। তখন মুজাহিদ ওই মেজরের সঙ্গে কথা বলার পর বাবু নাথের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তার একটি দাঁত ভেঙে ফেলা হয়। নির্যাতনের পর মুজাহিদের ইশারায় তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বিহারি ক্যাম্পের উত্তর পাশে আবদুর রশিদের বাড়িতে নিয়ে রাজাকাররা আটকে রাখে। পরে রাতে রণজিৎ নাথ বাবু তার আটক ঘরের জানালার শিক বাঁকা করে ওই ঘর থেকে পালিয়ে জীবন বাঁচান।
অভিযোগ ৪-এ বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৬ জুলাই সকালে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থেকে স্থানীয় রাজাকাররা মোঃ আবু ইউসুফ ওরফে পাখিকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে আটক করে। এরপর তাকে ফরিদপুর স্টেডিয়ামে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে রাখা হয়। আটক বন্দিদের মধ্যে আবু ইউসুফ পাখিকে দেখে মুজাহিদ পাকিস্তানি মেজরকে কিছু একটা বলার পরই তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। সেখানে ১ মাস ৩ দিন আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে তাকে যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ নির্যাতনে আবু ইউসুফ পাখির বুকের ও পিঠের হাড় ভেঙে যায়।
অভিযোগ ৫-এ বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট রাত ৮টায় পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের আরেক নেতা মতিউর রহমান নিজামীসহ ঢাকার নাখালপাড়ার পুরনো এমপি হোস্টেলের আর্মি ক্যাম্পে যান মুজাহিদ। সেখানে তারা আটক সুরকার আলতাফ মাহমুদ, জহির উদ্দিন জালাল, বদি, রুমি, জুয়েল ও আজাদকে দেখে তাদের গালাগাল করেন এবং পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনকে বলেন, প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আগেই তাদের হত্যা করতে হবে। আসামি মুজাহিদ অন্যদের সহায়তায় আটকদের একজনকে ছাড়া অন্য নিরীহ-নিরস্ত্র বন্দিদের অমানুষিক নির্যাতনের পর হত্যা করে লাশ গুমের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন।
অভিযোগ ৬-এ বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৭ মার্চের পর ঢাকার মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যাম্প করে। পরে রাজাকার, আলবদর বাহিনীও সেখানে ক্যাম্প করে। মুজাহিদ ছাত্রসংঘের শীর্ষ নেতা হওয়ার সুবাদে আর্মি ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। ছাত্রসংঘের ও আলবদর বাহিনীর সুপিরিয়র নেতা হিসেবে আর্মি ক্যাম্পে উপস্থিত ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী নানা অপরাধের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করতেন। এ ধরনের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুজাহিদ ১০ ডিসেম্বর থেকে পরিচালিত বুদ্ধিজীবী নিধনসহ হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়নসহ যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা সংঘটিত করেন।
অভিযোগ ৭-এ বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৩ মে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নির্দেশে রাজাকার বাহিনী ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করে। শান্তি কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
অভিযোগ-১:
১৯৭১ সালের ৪ বা ৫ এপ্রিল রাত আনুমাণিক ৯টার পর চট্টগ্রাম শহরের রামজন লেনে মতিলাল চৌধুরীর বাসায় দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন মতিলাল চৌধুরীসহ অরুণ চৌধুরী, যোগেশ চন্দ্র দে, পরিতোষ দাস, পাচক সুনীল ও তাদের বন্ধুরা। এসময় আসামি সাকা চৌধুরীর অনুগত আব্দুস সোবহান ওই বাড়িতে ঢুকে তাদের দেখে দ্রুত বাসা থেকে বের হন এবং গুডসহিলে খবর দেন। এর ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই সোবহান দুই ট্রাক পাকিস্তানি সেনা সঙ্গে নিয়ে বাসাটি ঘেরাও করেন এবং মতিলালদের ধরে ট্রাকে তুলে সাকা চৌধুরীর বাড়িতে স্থাপিত নির্যাতন কেন্দ্র গুডসহিলে নিয়ে যান। এরমধ্যে পাচক বয়সে তরুণ হওয়ায় তাকে গুডসহিলের নির্যাতন কেন্দ্র থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বাকি ৬ জনকে আটক করা হয়। তাদেরকে সেখানেই হত্যা করা হয়।
অভিযোগ-২:
১৩ এপ্রিল সকাল আনুমানিক সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে সাকা চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একদল সদস্য গহিরা গ্রামে হিন্দু অধ্যুষিত পাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে নিরীহ নিরস্ত্র হিন্দুদের হত্যা করে।
অভিযোগ-৩:
১৩ এপ্রিল সকাল আনুমাণিক ৯টার দিকে সাকা চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা গহিরা শ্রী কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে।
অভিযোগ-৪:
সাকা চৌধুরীর দুই সহযোগী আব্দুল মাবুদ ও অপর একজন একইদিন (১৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হিন্দু অধ্যুষিত জগৎমল্লপাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালান। এখানে ৩২ নারী-পুরুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ-৫:
ওই দিন ১৩ এপ্রিল বেলা আনুমাণিক একটার দিকে সাকা চৌধুরীর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে হামলা চালানো হয়। সশস্ত্র অভিযান পরিচালনার আগে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার পিতা ফজলুল কাদেও চৌধুরী, তাদের অনুসারী এবং পাক সেনারা বণিকপাড়ায় প্রবেশ করে স্থানীয় নেপাল চন্দ্র ধর, মনীন্দ্র লাল ধর, উপেন্দ্র লাল ধর ও অনিল বরণ ধরকে গুলি করে। এতে প্রথম ৩ জন নিহত ও শেষের জন আহত হন। হত্যাকান্ডের পর বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়।
অভিযোগ-৬:
১৩ এপ্রিল বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসররা হিন্দু জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্য রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে হিন্দু নর-নারীদের হত্যা করে।
অভিযোগ-৭ :
১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল দুপুর আনুমাণিক ১২টার দিকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পাকিস্তানি সেনা সদস্য রাউজান পৌরসভা এলাকার সতীশ চন্দ্র পালিতের বাড়িতে প্রবেশ করে। পাকিস্তানি সেনারা সতীশকে গুলি করে হত্যা করে এবং তার লাশ কাঁথাকাপড় দিয়ে মুড়িয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। পরে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ সৈন্যরা সবাই একসঙ্গে চলে যায়।
অভিযোগ-৮:
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা হাটহাজারী থানার খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি তিন রাস্তার মোড়ে শেখ মোজাফফর আহম্মেদ ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে স্থানীয় পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেই থেকে শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও শেখ আলমগীর নিখোজ এবং তাদের লাশও পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ-৯:
মুক্তিযুদ্ধকালে এপ্রিলের মাঝামাঝি দু’টি বড় ট্রাকযোগে পাকিস্তানি সেনা চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালীতে আসে। ওই সময় সাকা চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বণিকপাড়ার রামবাবুর ঘর-বাড়ি ও কদুরখিল হিন্দুপাড়া লুটপাট করে।
অভিযোগ-১০:
১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল পাকিস্তানিরা সাকা চৌধুরীর সঙ্গে ডাবুয়া গ্রামে মানিক ধরের বাড়িতে এসে তার জিপ গাড়ি ও ধান ভাঙ্গার কল লুট করে নিয়ে যায়। মানিক ধর সাকা চৌধুরীসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
অভিযোগ-১১:
১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল সকালবেলা মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী ও আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুগতরা চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা শাকপুরা গ্রামে সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে হিন্দুদের হত্যা করে। পরে শহীদদের মধ্যে ৫২ জনের লাশ পাওয়া যায়।
অভিযোগ-১২:
একাত্তরের ৫ মে সকাল সাড়ে ১০টায় সাকা চৌধুরীর উপস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাউজান থানার জ্যোতিমল গ্রামে গুলি করে বিজয় কৃষ্ণ চৌধুরী রাখাল, বিভূতি ভূষণ চৌধুরী ও হীরেন্দ্র লাল চৌধুরীকে হত্যা করে।
অভিযোগ-১৩:
১৫ মে সন্ধ্যার সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে তাদের সহযোগী শান্তি কমিটির সদস্য অলি আহম্মদ পাকিস্তানি বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ঘাসিমাঝির পার এলাকার বাড়িঘরে আক্রমণ, লুটপাট, গুলি করে ৬ জনকে হত্যা, ২ জনকে আহত এবং অন্তত ৫ নারীকে ধর্ষণ করে।
অভিযোগ-১৪:
১৯৭১ সালের ২০ মে বিকেল ৪টার দিকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে তার সহযোগী কয়েকজন রাজাকার সদস্য রাউজান থানার পথেরহাটের কর্তার দীঘির পারে মোঃ হানিফকে হত্যা করে।
অভিযোগ-১৫:
মে মাসের মাঝামাঝি কোন একদিন বিকেল আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে হঠাৎ করে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে দু’টি ট্রাকে পাকিস্তানি সেনা সদস্য ও বেসামরিক পোশাকে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি এসে চট্টগ্রাম শহরের রহমতগঞ্জে শেখ মায়মুন আলী চৌধুরী ও তার ভাগ্নি জামাই মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরীকে সকল কাপড়-চোপড় খুলে হাত-পা বেঁধে দৈহিক নির্যাতন করে।
অভিযোগ-১৬:
১৯৭১ সালের ৭ জুন রাজাকার মাকসুদুর রহমান ও আসামির পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের সহযোগিতায় জামাল খান রোড থেকে ওমর ফারুককে ধরে নিয়ে গুডসহিলের চর্টার সেলে আটক রাখেন। পরবর্তীতে আটকাবস্থায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে তাকে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়।
অভিযোগ-১৭:
১৯৭১ সালের ৫ জুলাই সন্ধ্যা আনুমাণিক সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার দিকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার ২/৩ জন সহযোগীসহ পাকিস্তানি সেনারা চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালি থানার হাজারী লেনের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পোড়াবাড়ি থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ, সিরাজ ও ওয়াহেদ ওরফে ঝুনু পাগলাকে অপহরণ করে গুডসহিলে নিয়ে যায়। সেখানে মেজর গজনফরের নেতৃত্বে ঘণ্টা দেড়েক তাদের ওপর নির্যাতনের পর চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ায় আগ পর্যন্ত তারা বন্দী ছিলেন।
অভিযোগ-১৮:
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে একদিন ভোর আনুমাণিক সাড়ে ৫টায় আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহচররা চান্দগাঁও থানার মোহারা গ্রামের মোঃ সালেহউদ্দিনকে অপহরণ করেন। এরপর তাকে গুডসহিলের টর্চার সেলে নেওয়া হয়। সেখানে সালেহ উদ্দিনকে দৈহিক নির্যাতন করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজে।
অভিযোগ-১৯:
১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই রাত আনুমাণিক সাড়ে আটটায় হাটহাজারীর নেয়ামত আলী রোডের সাহেব মিয়ার বাড়ি (রজমান টেন্ডলের বাড়ি) ঘেরাও করে তার দু’ছেলে নুর মোহাম্মদ ও নুরুল আলমকে অপহরণের পর একইভাবে নির্যাতন করা হয়। ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে গুডসহিলের নির্যাতন কেন্দ্র থেকে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগ-২০ :
২৭ বা ২৮ জুলাই বিকেল ৩/৪টায় রাজাকার বাহিনী আকলাছ মিয়াকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাকে গুডসহিলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। সেখানে তিনি নিহত হন।
অভিযোগ-২১:
১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ৫/৭ তারিখের দিকে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার বিনাজুরি গ্রামের ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী একই জেলার কোতোয়ালি থানার জেল রোডে অবস্থিত নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাগজের দোকানে যান। সেখান থেকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে অপহরণ করে গুডসহিলে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ৩/৪ দিন আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।
অভিযোগ-২২:
১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ দিকে এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন রাত আনুমাণিক ৯টায় মোঃ নুরুল আনোয়ার চৌধুরীকে অপহরণ করা হয়। আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার সহযোগী আলশামস বাহিনীর সদস্যরা মৃত আশরাফ আব্দুল হাকিম চৌধুরীর বাসভবন ৪১/২ স্ট্যান্ড রোড সদরঘাট, থানা ডবলমুরিং জেলা চট্টগ্রাম থেকে তাকে অপহরণ করে গুডসহিলে নিয়ে যান। সেখানে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাড়ে ছয় হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে নুরুল আনোয়ারকে ছেড়ে দেন।
অভিযোগ-২৩:
১৯৭১ সালে ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা আনুমাণিক সাড়ে ছয়টার সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মুসলিম ছাত্র পরিষদের সভাপতি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের আলশামস কমান্ডার হামিদুল কবির চৌধুরী খোকা, মাহবুব, সৈয়দ ওয়াহিদুর আলমসহ কয়েকজনকে চট্টগ্রাম আব্দুস সাত্তার রোড এলাকার এম সলিমুল্লাহকে গুডসহিলে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সারারাত নির্যাতন শেষে তার আত্মীয়দের অনুরোধে পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।