সবার মত আমারও বাবা ছিল
সবার মত আমারও বাবা ছিল। আমিও সবার মত বাবা’র সাথে ঘুরে বেড়াতাম। পরীক্ষা শেষে আমরা বাসায় একসাথে ক্রিকেট খেলতাম। বাবা’কে আমি আব্বু বলে ডাকতাম আর আব্বু আমাকে অনন বলে ডাকতো। বাবা অনেক রাগী ছিল। বাবা’কে অনেক ভয় পেতাম। বাবা’কে তুমি সম্বোধন করতাম আর বাবা আমাকে তুই করে ডাকতো। বাসায় বাবার বৈশিষ্ট্য ছিল, পেছন থেকে হঠাৎ করে কাঁধে জোরে চর মেরে জানান দেওয়া যে বাবা এসেছে। বাবা অনেক আদর করত। বাবা অনেক শক্ত মানুষ ছিল। যত কিছুই হয়ে যাক না কেনো বাবা কোন ভাবেই ভেঙে পড়ত না। বাবা অনেক শাসন করত। বাবা শাসন করত বলেই বার্ষিক পরীক্ষার ভালো রেজাল্ট করে চমক দেখাতাম। বাবা অনেক রসিক ছিল। বাবা বলত, মাস্টারকে কী ঘুষ দিয়েছিস, ফলাফল এত ভালো হল কীভাবে? আমি সারাদিন ধর্মের বই পড়তাম। বাবা বলত, কীরে তুই কী ধর্মে পিএইচডি করবি নাকি? খুব সুন্দর কাটছিল আমাদের সময়।
বর্ষার একদিন সন্ধ্যায়, ইসলামী মৌলবাদীরা আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। আমাকে অন্ধকারে নিয়ে ভয়াবহ রকমের অত্যাচার করে। শারীরিকভাবে নির্যাতন চালায়। মুখমণ্ডল ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। জামায়াতে ইসলামীর মৌলবাদী জঙ্গিদের কাছে কীভাবে জানি খবর পৌঁছে গিয়েছিল যে আমার বাবা দেশ ছেড়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার দূরে জার্মানিতে যাচ্ছে। দেশ ছেড়ে কবে যাবে এবং কোথায় উঠবে এর উত্তর জানার জন্য মৌলবাদীরা অনবরত আমাকে লাত্থি, ঘুষি, চর, গাছের ডাল দিয়ে প্রহার করছিল। কিন্তু আমি কোন উত্তর দেই নি। কোন মতে প্রাণে বেঁচে দৌড়ে পালিয়েছিলাম।
কয়েক ঘণ্টায় অনেক ঘটনা ঘটে গেলো। পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেক গোষ্ঠী উপস্থিত হয়েছিল। বাবা’কে দূর থেকে দেখে চিন্তিত মনে হচ্ছিল। কিন্তু একটি বারের জন্যও জিজ্ঞেশ করে নি আমি ঠিক আছি কী না? অন্য সবার বাবা’র মত আমার বাবা ছিল না। লৌহমানব ছিল বাবা। রাত প্রায় ১১ টায় বাবা আমাকে ডেকে বলেছিল, তোর ভয় লাগে নি? আমি কোন উত্তর দেই নি। অবশেষে লৌহমানব বাবা তার পুত্রকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল এত ছোট হয়েও তুই আমার জন্য এতকিছু সহ্য করলি! বাবা ছেলে দুজন দুজন’কে জড়িয়ে চোখ দিয়ে অশ্রু ফেলেছিলাম। লৌহমানবের জীবনের সাথে থেকে এবং রক্ত-হুমকি-চাপাতি-হত্যা-লাশ দেখতে দেখতে বর্তমানে আমি অনুভূতিশূন্য এক মানুষে পরিণত হয়েছি। (অসমাপ্ত, অপ্রকাশিত)
শুভ জন্মবার্ষিকী হুমায়ুন আজাদ, ২৮শে এপ্রিল ১৯৪৭
লেখক, অনন্য আজাদ
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।