কোন রুপে নারীরা নিরাপদ: লুবনা জেবিন লোপা
নারীদের কোন রুপ পুরুষকে প্রলুব্ধ করেনা? মা, বোন, স্ত্রী, বান্ধবী বা শিক্ষিকা কোন রূপে নিরাপদ নারীরা? আজকাল একের পর এক ঘটে চলেছে নারী অবমাননার ঘটনা। দিনের পর দিন এইসব অবমাননা সহ্য করে আসছে নারীরা। এইসব অবমাননাকারীদের ব্যাপারে নিরব ভূমিকা পালন করছে সরকার।
গতকালও বাংলাদেশের অন্যতম শিক্ষাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে গেল বিব্রতকর এক ঘটনা। জগন্নাথের এক শিক্ষিকা রেহাই পেল না সন্ত্রাসি ছাত্রদের কবল থেকে। যদিও তিনি নিজের সম্মান নিজেই রক্ষা করতে পেরেছিলেন কিন্তু এটা কতদিন করতে পারবেন তিনি বা তার মতো নারী শিক্ষিকারা?
এই বিব্রতকর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তার নিজস্ব কিছু কথা নিচে হুবুহু তুলে ধরা হলঃ
সারাদেশ যখন পহেলা বৈশাখে টিএসসি’তে সংঘঠিত যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে উত্তাল, ঠিক সে সময়েই আজ ২৬শে এপ্রিল ২০১৫ তারিখে দুপুর আনুমানিক ১২ টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একজন ছাত্র কর্তৃক আমি জঘন্য শারিরীক নির্যাতনের শিকার হই যা যৌন নিপীড়নের সমতুল্য। আজ দুপুরে আমি নতুন ভবন থেকে আমার বিভাগে (সামাজিক বিজ্ঞান ভবন) যাওয়ার পথে উক্ত ছাত্রের সাথে পথে দেখা হয়। তাকে পথ ছেড়ে দিতে আমি বামে যাই সেও বামে যায়। এমন তিনবার হবার পরে আমি ধারণা করি ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃত। তাই বিরক্ত হয়ে আমি জিজ্ঞেস করি, ‘কি সমস্যা?’। তখন সে আমাকে বলে নতুন উনিভার্সিটি ভর্তি হইছো? কোন ডিপার্টমেন্টে পড়? এবং সে আমার কাঁধে ধাক্কা দেয় এবং কপালের পাশে চড় দেয়। সাথে সাথে আমিও তাকে চড় দেই এবং কলার ধরে প্রক্টর অফিসের দিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করি। যাতে আমি তাকে ছেড়ে দেই সেজন্য সে আমার ওড়না ও জামা ধরে টান দেয়। তারপরও আমি তাকে জোর করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাই। ছাত্রটি তার পরবর্তী বিবরণীতে বলে যে আমি যে শিক্ষক তা সে বুঝতে পারেনি এবং বুঝতে পারলে সে এমন আচরণ করত না। তার মানে দাড়াচ্ছে আমি শিক্ষক না হয়ে ছাত্রী হলে তার আচরণ সঠিক ছিলো অথবা এই ক্যাম্পাসে আমার ছাত্রীরা প্রতিনিয়ত এই ধরণের ঘটনার শিকার হচ্ছে।
প্রতিনিয়ত আমরা দেখি নারীরা এ সমাজে স্ত্রী হিসেবে নিগৃহীত, কন্যা হিসেবে বঞ্চিত, দরিদ্র হিসেবে নিপীড়িত । আজ নতুনভাবে দেখলাম শিক্ষক হিসেবেও লাঞ্চিত। আমি নারী শিক্ষক বলেই হয়ত সে আমাকে শারীরিক আক্রমণ করে ঘটনাস্থল থেকে পালাতে চেয়েছিল। হয়ত সে ভেবেছিল আমার জামা-ওড়না ধরে টান দিলেই আমি নারী সুলভ আতংকে তাকে ছেড়ে দিব। কিন্তু আমি ছেড়ে দেইনি কারণ তখন আমার চোখে ভেসে উঠেছিল আমার অসংখ্য ছাত্রীর মুখ এবং আমি ভেবেছি আজ এই ছাত্র নামক নিপীড়ককে ছেড়ে দেয়ার মানে হল আমার প্রতিটি ছাত্রীকে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ফেলে দেয়া।
শুনছি ও পড়ছি উল্লেখিত ছাত্রটি নাকি কোন একটি প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত। আমি অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি এমন পরিস্থিতিতে নিপীড়ক ছাত্রদের কোন শাস্তিই হয় না এবং সময়ের সাথে সাথে কর্তাব্যক্তিরাও বেমালুম ভুলে যান সবকিছুই। এখন পর্যন্ত পুলিশের ভূমিকা সন্তোষজনক নয় মোটেও। তাদের বিভিন্নরকম বক্তব্য পাচ্ছি। এখনো বুঝতে পারছি না কোন বক্তব্য সঠিক। শুনছি তার নাকি বলছেন, ওই ছেলেকে একটি ছাত্র সংগঠনের নেতারা ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন। এরকমও শুনছি যে তারা বলার চেষ্টা করছেন- ওই ছেলেকে তাদের হাতে দেয়াই হয়নি। আমি বিশ্বাস করতে চাই আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ছাত্র সংগঠনই এমন ন্যাকারজনক ঘটনাকে নিয়ে কোন অপরাজনীতি করবে না এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করবে। আর আমার আইনী লড়াই আমি চালিয়ে যাবো। আর বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইতে আছি, থাকব একটি নিপীড়ন মুক্ত ক্যাম্পাস ও সমাজ গড়তে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।