নার্গিসের চোখ ও কিডনি উপড়ে নেওয়া হয়েছিল হত্যার আগে!
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল, ২০১৫
প্রিন্টঅঅ-অ+
বাংলাদেশের নার্গিসকে ভারতে ট্রেনে গণধর্ষণ-এর পর শরীর থেকে চোখ ও কিডনি উপড়ে নিয়ে হত্যা করা হয়। এমন তথ্য দিয়েছেন তার মামী রাহেলা বেগম।
তিনি বলেন ৪১ দিন পর সোমবার বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতের পুলিশ নার্গিসের লাশ ফেরত দেয়। যারা মরদেহের গোসল করিয়েছে তারা আমাকে জানিয়েছে, নার্গিসের ২টি চোখ তুলে নেওয়া হয়েছে। তার বামপাশের স্তন কাটা ও পিঠের নিচে কেটে কিডনি বের করে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া একটি হাত ও একটি পা ভাঙ্গা এবং শরীরের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল।
তিনি আরও জানান, ভারতের পুলিশ তাদের ময়নাতদন্তের কোনও প্রতিবেদন দেয়নি। বর্বরোচিত এই হত্যা ও গণধর্ষণের সুষ্ঠু বিচার ও ক্ষতিপূরণরে জন্য তারা খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে আবেদন করেছেন বলেও জানান।
নার্গিসের জন্মান্ধ বৃদ্ধা মা আনোয়ারা বেগম বলেন, 'কতো মানুষ তো বিদেশ যায়। কারও তো এমন হয় না। এ বাচ্চা মেয়েটারে নিয়ে এখন আমি কি করব?'
রাহেলা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, পাসপোর্ট-ভিসা করে তারা ৩ জনে বৈধভাবে ভারত গিয়েছিল। তবু তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলো ভারত সরকার। নিরাপত্তাহীনতায় প্রাণ দিতে হলো নার্গিসকে। গণধর্ষণ ও নৃশংস নির্যাতনের পর তাকে হত্যা করা হয়েছিল। ভারতে চিকিৎসা ও আজমির শরীফ দেখতে যাওয়ার পর লাশ হয়ে ফিরে আসলো সে।
নার্গিসের স্বামী আবুল কালাম বলেন, 'আমি কখনও নার্গিসের গায়ে হাত দেইনি । সেই নার্গিসের ওপর নরপশুরা অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে।'
নার্গিসের মামাতো ভাই শওকত হোসেন বলেন, 'কেএমপি ও বাংলাদেশ হাই কমিশনারের তৎপরতায় বোনের লাশ অন্তত পেয়েছি। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। এ মৃত্যু স্বাভাবিক না, ওরা পালিয়ে ইন্ডিয়া যায়নি। বৈধভাবে সেখানে গিয়েছে। ওই দেশে কি মানুষের কোনও নিরাপত্তা নেই? আমি আমার বোনের হত্যার ক্ষতিপূরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।'
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র বিশেষ শাখার এডিসি শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু জানান, ঘটনাস্থল এবং ময়নাতদন্ত ভারতে হওয়ায় এদেশে বসে মামলা করার সুযোগ নেই। এখন নার্গিসের পরিবার বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে লিখিত দিয়েছেন। তাদের আবেদন ভারতীয় দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ওই পরিবার আইনগত কোনও পদক্ষেপ নিতে চাইলে তারা সহযোগিতা করবেন।
উল্লেখ্য, গত ৯ মার্চ নার্গিসের চিকিৎসা ও আজমির শরীফ দেখার জন্য পাসপোর্ট ও ভিসা করে মা আনোয়ারা বেগম, নার্গিস ও কাকলী বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। ট্রেনে তারা বনগাঁ, শিয়ালদা হয়ে হাওড়া পৌঁছান। এর পরদিন ট্রেনে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ১০ মার্চ রাত সাড়ে ৩টার দিকে কয়েকজন যুবক ভুল বুঝিয়ে ট্রেন দিল্লি স্টেশনে চলে এসেছে বলে মা ও মেয়েকে নামিয়ে দেন। আর বগির মধ্যে কয়েকজন বখাটে যুবক নার্গিসের মুখ চেপে ধরে রাখে। এর মধ্যেই ট্রেন ছেড়ে দেয়। এরপর ৩ দিন আনোয়ারা ও কাকলি কানপুর স্টেশনে অপেক্ষা করেও মেয়ের সন্ধান পায়নি। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তারা দেশে ফিরে আসেন। এরপর ১৯ মার্চ খুলনার সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ খবর দেয় নার্গিসের মরদেহ ভারতে রেল স্টেশনের কাছে পাওয়া গেছে। এরপর ২০ এপ্রিল তার লাশ বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়।
স্থানীয়রা জানায়, খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন কেডিএ অ্যাপ্রোচ রোডের গলিতে গোলপাতার বেড়া এবং টিনের ছাউনির দিয়ে তৈরি একটি বাড়িতে থাকতো নার্গিস। তার মেয়ে কাকলী স্থানীয় জাগরণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। নার্গিসের স্বামী আবুল কালাম রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। নার্গিসও সেলাই এবং অন্যের বাড়িতে ফরমায়েশ খাটতেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।