গৃহশ্রমিকের স্বীকৃতি দিতে হবে গৃহকর্মীদের
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল, ২০১৫
প্রিন্টঅঅ-অ+
গৃহকর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা, জীবন-মানের উন্নয়ন এবং গৃহকর্মীদের গৃহশ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান (রামরু) এবং গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। রবিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এই গোলটেবিল বৈঠক থেকে এ দাবি জানানো হয়।
বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইসরাফিল আলম এমপি বলেন, গৃহকর্মীদের গৃহশ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সংঘবদ্ধ আন্দোলন দরকার। কিন্তু আমরা সে আন্দোলনটা করতে পারছি না। বৃহত্তর একটি আন্দোলন কেবল অধিকার আদায়েই সহায়ক হয় না, আমাদের মনোজগতেরও পরিবর্তন ঘটায়। তাই সংঘবদ্ধ আন্দোলন দরকার।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এএসএম আলী আশরাফ। রামরুর চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তাসনিমা সিদ্দিকী বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন।
সংসদ সদস্য ইসরাফিল বলেন, দেশে শ্রমিক সংগঠন দিন দিন বাড়ছে। সে অনুপাতে শ্রমিক আন্দোলন হচ্ছে না। এ সঙ্কটকে কাটিয়ে আমাদের অবশ্যই একটি আন্দোলনে আসতে হবে।
নানা প্রতিকূলতার কারণে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত গৃহকর্মীদের বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে ইসরাফিল আলম আরো বলেন, নীতিমালা, আইন অবশ্যই প্রয়োজনীয়। কিন্তু আইন করে দৃষ্টিভঙ্গী বদলানো যায় না। তাই আইন বা নীতিমালা করেই আমরা এর দায় এড়াতে পারি না।
তিনি মনে করেন, আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী খুব দ্রুত গৃহকর্মীদের গৃহশ্রমিকের মর্যাদা দিয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি।
গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনা করেন গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের সাইদ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় নারী গৃহকর্মী ইউনিয়নের আবুল হুসাইন, নারী মৈত্রীর শাহিন আকতার ডলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের শিক্ষক ফাহমিদা ইয়াসমিন রিপা, নাগরিক উদ্যোগের জাকির হোসাইন প্রমুখ।
বৈঠকে আলোচকরা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গৃহকর্মে নিয়োজিত শ্রমিকদের ওপর হয়রানি, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। সংবাদ মাধ্যমে চোখ রাখলে প্রায় প্রতিদিনই গৃহকর্মী নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণের ঘটনা চোখে পড়ে।
আলোচকরা আরো বলেন, বেঁচে থাকার তাগিদে, জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে গৃহকর্মীরা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। কিন্তু অধিকাংশ বাড়িতেই তাদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ থাকে না। পান থেকে চুন খসলেই গাল-মন্দ, মারধর এমনকি তাদের তাদের হত্যাও করা হয়।
সমাজে-সংসারের কোথাও গৃহকর্মীদের মর্যাদা নেই উল্লেখ করে আলোচকরা বলেন, গৃহকাজে নিয়োজিতদের বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। ফলে গৃহশ্রমিকদের মজুরির নিশ্চয়তাসহ সুনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নির্ধারণ এবং শ্রমিক হিসেবে মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকার পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই।
ধারণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ মানুষ গৃহকর্মে নিয়োজিত যার অধিকাংশ নারী ও শিশু। যদিও ১৯৬১ সালে প্রণীত গৃহকর্মী রেজিস্ট্রেশন অর্ডিন্যান্স এবং ২০১০ সালে গৃহীত জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন আইনে গৃহকর্মী ও শিশুশ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত আছে। তারপরও ২০০৬ সালে প্রণীত শ্রম আইনে তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ২০১০ সালে গৃহকর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা ও জীবন-মানের উন্নয়নের জন্য খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করা হলেও শ্রম আইন পরিবর্তন করে তা এখনো যুক্ত করা হয়নি।
সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী গত ৮ বছরে গৃহশ্রমিকদের ওপর ৬৪০টি অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।