ইয়েমেন দখলের লড়াই
আরও একটা নতুন যুদ্ধের ‘ফ্রন্ট’ আরব দুনিয়ায়। প্রত্যক্ষ মার্কিন সহযোগিতায় সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমেনে শুরু হয়েছে যুদ্ধ। আবারও পরের ঘরে নাক গলানো। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাষ্ট্র সংঘের হিসেবে মৃত ৬০০, তার মধ্যে শিশু ৮০ জন। আহত ৩ হাজার। স্থানচ্যুত ১ লাখের বেশি।
ইয়েমেনে ‘বিদ্রোহী’দের দমনে সৌদি আরব ২৬শে মার্চ থেকে বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। ‘বিদ্রোহী’রা হুথি উপজাতি হিসেবে পরিচিত। এরা সবাই শিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। সৌদি আরবের রাজন্য সরকারের নেতারা সুন্নি সম্প্রদায়ের। হুথি মিলিশিয়াদের দমনে সৌদি আরবের সঙ্গে আরো ১০টি সুন্নি-রাষ্ট্র যোগ দিয়েছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের সদস্য হচ্ছে বাহরাইন, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমির শাহী এবং কাতার। এই দেশ গুলির শাসকরা যুক্তভাবে সৌদি আরবকে সশস্ত্র অভিযানে সহযোগিতা করছে।
বিদ্রোহীদের অভিযানে ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি আবদেরাব্বো মনসুর হাদি রাজধানী সানা থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন সৌদির রিয়াদে। আর এই হুথি বিদ্রোহীদের দমনে সামরিক অভিযানের বলি হচ্ছেন শত শত নিরীহ মানুষ। পালিয়ে যাওয়া রাষ্ট্রপতি এমনিতেই সৌদি আরবের মিত্র, তাই রাজনৈতিক কারণেই তাঁর রক্ষাকর্তা হিসেবে এগিয়ে এসেছে সৌদি আরব এবং আরবের অন্যান্য সুন্নি সম্প্রদায় নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রসমূহ।
কিন্তু কেনই বা মার্কিন প্রশ্রয় পুষ্ট হয়ে আরব দেশগুলির সুন্নি শাসকরা বিদ্রোহী দমনে ইয়েমেনের পাশে এককাট্টা হয়ে দাঁড়িয়েছে? এর কারণ হচ্ছে প্রথমত, ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে ইয়েমেনের অবস্থান। দ্বিতীয়ত, এই অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থরক্ষা করা। লোহিত সাগরের প্রবেশপথের দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে ইয়েমেন, অন্যদিকে রয়েছে ছোট্ট রাষ্ট্র জিবুতি। জিবুতির দক্ষিণে আফ্রিকার প্রবেশ মুখে রয়েছে সোমালিয়া, উত্তরে লোহিত সাগরের উপকূলে ইরিত্রিয়া। এর মাঝামাঝি দিয়েই আরব ও আফ্রিকার রাষ্ট্রসমূহের যোগসূত্র হচ্ছে বাব-এল-মানের প্রণালী বা খাল। এর গুরুত্ব মিশরের সুয়েজ খাল থেকে কম নয়।
জিবুতিতে রয়েছে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি, তাছাড়া ড্রোন বিমান ওঠা-নামার জন্য রয়েছে অন্যত্র আরো একটি বিমান ঘাঁটি। এই স্থান থেকে লোহিত সাগর, আরব সাগরের পার্শ্ববর্তী দেশগুলির দূরত্ব অনেক কাছাকাছি। বাব-এল-মানের খাল এই অঞ্চলে এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, মার্কিন নৌবহর গুলি, তেলবাহী জাহাজ এই খালের মাধ্যমে ভূমধ্যসাগর হয়ে একদিকে ইউরোপ অপর দিকে এশিয়ার দেশগুলিতে যাতায়াত করে।
তাছাড়া আরব সাগরের সীমানায় এশিয়ার তিন দেশ ইরান, পাকিস্তান ও ভারত রয়েছে। এই ভৌগোলিক রাজনৈতিক গুরুত্ব লক্ষ্য রেখে আমেরিকা আরবে তার মিত্র দেশগুলিকে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের দমনে কাজে লাগাচ্ছে। কারণ ইয়েমেন যদি হুথি বিদ্রোহীদের কবজায় চলে যায় তাহলে এই অঞ্চলে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণও বাঁধাপ্রাপ্ত হবে। এমনিতেও আমেরিকা চায় ইয়েমেনের আল আনাদ বিমান ঘাঁটি পুনরুদ্ধার করতে, এই ঘাঁটি থেকেই ২০০৯ থেকে এখনও পর্যন্ত ড্রোন আক্রমনে ১০০০ জন নিহত হয়েছেন। বর্তমানে এই ঘাঁটি হুথিদের দখলে এসে গেছে মার্চের শেষ সপ্তাহে।
তাছাড়া বলা হচ্ছে হুথি বিদ্রোহীদের পেছনে রয়েছে ইরান, যারা শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত এবং শিয়া সম্প্রদায়ের হুথি মিলিশিয়াদের লড়াইয়ের সমর্থক। আমেরিকা এবং তার আরব মিত্র দেশ গুলি চায় না এই অঞ্চলে।
লেখক, ভারতীয় সাংবাদিক
sahos24.com | Online newspaper
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।