পুরস্কৃত করা হবে এসআই আনোয়ার হোসেনকে
রাত তখন ১১টা। সদরঘাট থানার এসআই আনোয়ার হোসেনের মোবাইলে ফোন আসে আনু মাঝির ঘাট এলাকায় একটি গুদাম থেকে কাভার্ড ভ্যানে করে চারটি কাগজের বাক্স তোলা হচ্ছে সেগুলোতে বিপুল পরিমাণ সোনা রয়েছে। সোর্সের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে কাগজের বাক্সগুলো গাড়িতে তোলার দায়িত্বে থাকা গিয়াস উদ্দিন ও এমরানকে চ্যালেঞ্জ করেন।
তিনি বাক্সগুলো তল্লাশি করতে চাইলে গিয়াস উদ্দিন ও এমরান বাধা দেন। এমরান বখশিস দেওয়ার লোভ দেখিয়ে তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এসআই আনোয়ার অনড় থাকলে গিয়াস উদ্দিন এসি মেলার মালিকের সঙ্গে ফোনে তাকে যোগাযোগ করিয়ে দেন। মালিক বাক্সগুলো তল্লাশি না করার জন্য তাকে অনুরোধ জানান।
একপর্যায়ে এক কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দেন। কিন্তু মাত্র ক’দিন আগে পবিত্র ওমরাহ পালন করে আসা এসআই আনোয়ার হোসেন এক কোটি টাকা ঘুষের অফার ফিরিয়ে দেন। এর পর ওই বাক্সের যে সোনা ও অলঙ্কার রয়েছে প্রয়োজনে তার অর্ধেক আনোয়ার হোসেনকে দিয়ে দেয়ারও প্রলোভন দেন এসি মেলার মালিক। এতেও লোভ সংবরণ করে শেষ পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে খবর দিয়ে সন্দেহজনক গুদাম ও কার্টন তল্লাশির ব্যবস্থা করেন।
বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় ঘটনাস্থল আনু মাঝির ঘাট এলাকায় একে একে ছুটে যান পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডলসহ পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা। ছিলেন সদরঘাট থানার ওসি আবুল কালাম আজাদও। পরে সংবাদকর্মীদের সামনে খোলা হয় এসব কার্টন। কার্টনের ভেতর থাকা ইলেকট্রনিক্স পণ্য এসি এবং মাইক্রোওভেনের ভেতর থেকে একে একে বের হতে থাকে সোনার বার ও অলংকার। চারটি কার্টন থেকে উদ্ধার করা হয় ১২০ পিস সোনার বারসহ ২০ কেজি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।
সিএমপির কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার শাহ মো. আবদুর রউফ জানান, তল্লাশিতে ১২০টি সোনার বার পাওয়া গেছে যার ওজন ১৪ কেজি ২০০ গ্রাম। আর ১৬ আইটেম সোনার অলংকার পাওয়া গেছে যেগুলোর ওজন ৫ কেজি ৮০০ গ্রাম।
কোটি টাকার ঘুষের অফার প্রত্যাখ্যান করে অবৈধভাবে বিদেশ থেকে আনা সোনা জব্ধ করেন এসআই আনোয়ার হোসেন। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে নিজ কার্যালয়ে ডাকেন পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল। এ সময় আনোয়ারের কৃতিত্বে প্রশংসা করেন তিনি। এ জন্য তাকে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হবে বলেও পুলিশ কমিশনার ঘোষণা দেন। আগে থেকেই সদরঘাট থানার অন্য সহকর্মীদের কাছে আনোয়ার একজন সৎ নিষ্ঠাবান পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত।
সদর ঘাট থানার এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে পুলিশে যুক্ত হয়েছি। এটিকে কখনও চাকরি হিসেবে দেখিনি। মনে করেছি দেশ, মানুষের সেবা করার বড় দায়িত্ব পেয়েছি। আনোয়ার হোসেনের বাড়ি কুমিল্লা জেলার বুড়িচং এলাকার আবিদপুর গ্রামে। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক।
গুদামের মালিক বলেন, যে গুদাম থেকে সোনা পাওয়া গেছে তার মালিক হচ্ছেন ফাতেমা বেগম। তার স্বামী কামাল মাস্টার। পৈতৃক সূত্রে ফাতেমা বেগম ওই গুদামের মালিক হয়েছেন। ফাতেমা বেগমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, গত ২-৩ মাস আগে এসি মেলা নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে গুদামটি ভাড়া দিয়েছি। গুদামে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের আড়ালে সোনা চোরাচালান ব্যবসা ছিল তা আমার জানা নেই।
গুদামটি ভাড়া নেওয়া হয় এসি মেলা নামে একটি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের নামে। পুলিশ কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে কোটি টাকা ঘুষের অফারও দিয়েছিল এসি মেলার ওই মালিক। পুলিশ ওই মালিককে গ্রেফতারের জন্য খুঁজছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।