ধামরাইয়ে অবহেলায় বিলুপ্তির পথে প্রাচীন নিদর্শন
ইমতিয়াজ উল ইসলাম, সাভার
প্রিন্টঅঅ-অ+
ঢাকার অদূরে ধামরাই পৌর এলাকা থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত সানোড়া ইউনিয়ন পরিষদ। এখানেই অবস্থিত পুরোনো প্রাচীনতম কারুকার্য মণ্ডিত এই স্থাপত্য নিদর্শন।
স্থানীয়দের ধারণা প্রায় তিন’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই নিদর্শনটি তৎকালীন হিন্দু ধর্মালম্বীদের গোসাই (পুরোহিত) পরিবারের প্রাচীন বাসভবন ছিলো। ধারণা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের সময় এসব সংখ্যালঘু পরিবারের কেউ কেউ প্রাণ বাঁচাতে পাড়ি জমিয়েছেন মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায়।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ধরে কালামপুর বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে দক্ষিনে শাখা রাস্তা ধরে এগিয়ে মাত্র দুই-তিন কিলোমিটার এগুলেই চোখে পড়বে প্রাচীন ঐতিহ্য বহনকারী এই গোসাই বাড়ী। এখানকার অনেকটা জায়গা জুড়েই কিছুটা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ভাবেই অবস্থিত বেশ কয়েকটি এধরনের প্রাচীন ছোট বড় ভবন ও মন্দির। আর ভবনের সামনেই রয়েছে শানবাঁধানো প্রায় ৩২ পাকী (বিঘা) জায়গায় বিশাল এক পুকুর।
এসব স্থাপনা থেকে একটু দূরেই চোখে পড়বে বিস্তৃণ মাঠে বিশাল কয়েকটি শতবর্ষী বটবৃক্ষ শির উচুঁ করে দাড়িয়ে আছে। স্থানীয়দের মতে এখানেই প্রতি বছর পৌষ মাসের পহেলা তারিখে এখনও বসে ঐতিহ্যবাহী “শাখরান” মেলা। আর এই মেলায় সমাগম হয় আশে পাশের গ্রামের হাজারো মানুষের।
এলাকাবাসীর দাবী, কিন্তু বর্তমানে সংস্কার আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে প্রাচীন ঐতিহ্য বহনকারী এসব স্থাপনা বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। সেই সাথে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে ধীরে ধীরে বন্ধ হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী শাখরাণ মেলাও।
পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরাতন এসব ভবনের অনেকাংশেই ইট, বালু আর সুরকি গুলো খসে পড়েছে। এমনকি ভবনের অনেক অংশের ইট গুলো খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেই সাথে দরজা-জানালা গুলোও। আর যা অবশিষ্ট আছে তা দখল নিয়ে বসবাস করছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। আর যেসব ভবন গুলোর অবস্থা বেশী নাজুক সেগুলোর দুই-একটিতে চতুরতার সাথে অসহায় দরিদ্র পরিবারকে স্থান দিয়ে নিজ দখলে রেখেছ এলাকার প্রভাবশালীরা।
সেই সাথে ৩২ পাকী (বিঘা) জায়গা জুরে অবস্থিত বিশাল পুকুরটিও এখন তাদেরই দখলে। আর সর্বশেষ মেলার জায়গাটুকুও দখলের পায়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীদের অনেকেই।
জানতে চাইলে এসব ভবনের একটিতে বসবাসরত চল্লিশোর্ধ এক মহিলা জানান, বাড়ী-ঘর হারিয়ে যুদ্ধের পরে তারা এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। আর সেই সময় থেকেই তারা এই ভবনে বসবাস করে আসছেন।
এই এলাকার বাসীন্দা মুল্লুক চাঁন তার বাপ-দাদার কাছ থেকে শোনা কথার সূত্র ধরে জানান, অনেক আগে এসব স্থাপনার মধ্যে সব চেয়ে বড় ভবনটিতে বসবাস করতেন হিন্দু ধর্মালম্বী গোসাই পরিবারের কর্তা পদ্ম গোসাই নামের একজন পুরোহিত। এবং আশে পাশের অন্য ভবন গুলোতে থাকতো পদ্ম গোসাইয়ের অন্য দুই ভাই তফিজ গোসাই ও গোইরা গোসাই। তবে যুদ্ধের সময় তারা পালিয়ে যাওয়ার পর এসব ভবনের যেটির কাঠামো ভালো সেটির একটিতে বাস করেন সানোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ জহির। এবং আরেকটিতে চেয়ারম্যানের ভাই রহমান।
তবে তারা কিভাবে এখানে বসবাস করছেন এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য তাদের দ্বারস্থ হলেও এব্যাপারে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে স্থানীয়দের দাবি, প্রাচীন এ স্থাপনাটি রক্ষায় সরকারিভাবে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলে ঐতিহাসিক এ নিদর্শনটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এ প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন বহন করবে প্রাচীন সংস্কৃতি। সেই সাথে ধারণ করবে যুগ-যুগান্তরের কল্পকাহিনী এমনটাই দাবী স্থানীয়দের।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।