- হোম
- >
- আইন-মানবাধিকার
- >
- আজ রাতই শেষ রাত কামারুজ্জামানের
আজ রাতই শেষ রাত কামারুজ্জামানের
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি আজ সোমবার রাতেই কার্যকর করা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এমন ইঙ্গিতই দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে আজ রাতের মধ্যেই দণ্ড কার্যকরের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে রায় কার্যকরের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে কফিন, শামিয়ানা ও সাদা কাপড় কারাগারের ভেতরে নিতে দেখা গেছে। এ ছাড়া, ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুতের জন্য কারাগারের ভেতরে বাঁশসহ বিভিন্ন সরঞ্জামও নেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর সকালেই সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন,‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কামারুজ্জমানের বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রায় হয়েছে। আপিল বিভাগের রায় হয়েছে। আপিল বিভাগের রিভিউ পিটিশনের রায় হয়েছে। এখন তার দু’টি বিষয় বাকি রয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না সেটা তাকে জানাতে হবে এবং আপন জনের সঙ্গে দেখা করা। এরপর কবে তার দণ্ড কার্যকরা করা হবে তা সরকার নির্ধারণ করবে। সরকার চাইলে যেকোনো সময় কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকর করতে পারে। এ জন্য জেল কোডের বিধান প্রযোজ্য হবে না।’
অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও কামারুজ্জামানের রায় কার্যকরের ব্যাপারে একই কথা বললেন।
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রায় যতো দ্রুত সম্ভব কার্যকর করা হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার জন্য কামারুজ্জামান দুই-এক ঘণ্টা সময় পাবেন। আমার জানা মতে কারা কর্তৃপক্ষ তার আত্মীয়-স্বজনকে সাক্ষাতের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এখন তার বেলায় যেহেতু জেল কোডের বিধান প্রযোজ্য নয়, তাই যতদ্রুত সম্ভব তার রায় কার্যকর করা হবে।’
ইতোমধ্যে কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করেছে। এবং রাষ্ট্রপতির কাছে কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষা চাইবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছে।
কারাগারের প্রস্তুতি এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ট্রাইবুনালের সাথে সম্পৃক্ত ব্যাক্তিদের কথায় এটি মোটামুটি স্পষ্ট যে, আজ রাতেই কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। সোমবার সকাল ৯ টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
কামারুজ্জামানের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের খেরোখাতা:অভিযোগ-১ বদিউজ্জামান হত্যা: একাত্তরের ২৯ জুন সকালে কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আলবদররা শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার রামনগর গ্রামের আহম্মেদ মেম্বারের বাড়ি থেকে বদিউজ্জামানকে অপহরণ করে আহম্মেদনগরে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে সারারাত নির্যাতন করে পরদিন হত্যা করে লাশ পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের রায়ে কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
অভিযোগ-২ অধ্যক্ষ আবদুল হান্নানকে নির্যাতন: কামারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল হান্নানকে নগ্ন অবস্থায় শহরের রাস্তায় হাঁটাতে হাঁটাতে চাবুকপেটা করেন। এই অভিযোগে কামারুজ্জামানকে ১০ বছরের সাজা দেন ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগ-৩ সোহাগপুরে গণহত্যা: একাত্তরের ২৫ জুলাই আলবদর ও রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং নারীদের ধর্ষণ করে। এটি কামারুজ্জামানের পরামর্শে পরিকল্পিতভাবে করা হয়। সেদিন ওই গ্রামে ১২০ জন পুরুষকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার দিন থেকে সোহাগপুর গ্রাম ‘বিধবাপল্লী’ নামে পরিচিত। এই অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় কামারুজ্জামানকে।
অভিযোগ-৪ গোলাম মোস্তফাকে হত্যা: একাত্তরের ২৩ আগস্ট কামারুজ্জামানের নির্দেশে আলবদর সদস্যরা গোলাম মোস্তফাকে ধরে সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে স্থাপিত আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে কামারুজামান ও আলবদররা তাকে গুলি করে হত্যা করে। এ অভিযোগেও কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগ-৫ লিয়াকত-মুজিবুরসহ আটজনকে হত্যা: মুক্তিযুদ্ধের সময় রমজান মাসের মাঝামাঝি কামারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা শেরপুরের চকবাজার থেকে লিয়াকত আলী ও মুজিবুর রহমানকে অপহরণ করে বাঁথিয়া ভবনের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে তাদের নির্যাতনের পর থানায় ৪ দিন আটকে রাখা হয়। পরে কামারুজ্জামানের নির্দেশে ওই দুজনসহ ১৩ জনকে ঝিনাইগাতীর আহম্মেদনগর সেনা ক্যাম্পে পাঠানো হয়। পরে লিয়াকত, মুজিবুরসহ আটজনকে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ের কাছে সারিতে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। কামারুজ্জামান ও তার সহযোগী কামরান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এই অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়নি।
অভিযোগ-৬ টুনু হত্যা: একাত্তরের নভেম্বরে কামারুজ্জামানের নির্দেশে আলবদর সদস্যরা টুনু ও জাহাঙ্গীরকে ময়মনসিংহের জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। টুনুকে সেখানে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। জাহাঙ্গীরকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ অভিযোগও প্রমাণিত হয়নি।
অভিযোগ-৭ দারাসহ ছয় হত্যা: মুক্তিযুদ্ধকালে ২৭ রমজান কামারুজ্জামান আলবদর সদস্যদের নিয়ে ময়মনসিংহের গোলাপজান রোডের টেপা মিয়া ও তার বড় ছেলে জহুরুল ইসলাম দারাকে ধরে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। পরদিন সকালে আলবদররা ওই দুজনসহ সাতজনকে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নিয়ে হাত বেঁধে সারিতে দাঁড় করান। প্রথমে টেপা মিয়াকে বেয়নেট দিয়ে খোঁচাতে গেলে তিনি নদীতে লাফ দেন। আলবদররা গুলি করলে তার পায়ে লাগে। তবে তিনি পালাতে সক্ষম হন। কিন্তু অন্য ছয়জনকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। এ অভিযোগে কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের রায়গত বছরের ৯ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-২। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগগুলোর মধ্যে ১, ২, ৩, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত এবং ৫ ও ৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে রায়ে উল্লেখ করেন ট্রাইব্যুনাল।
এর মধ্যে ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ দু’টি অভিযোগ করা হয়েছে যথাক্রমে সোহাগপুর গণহত্যা ও মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফাকে হত্যার দায়ে। ১ (বদিউজ্জামান হত্যা) ও ৭ (দারাসহ ছয় হত্যা) নম্বর অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং ২ নম্বর অভিযোগে (অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নানকে নির্যাতন) ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আর প্রমাণিত না হওয়া অন্য দুই অভিযোগ থেকে কামারুজ্জামানকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ১, ২ ও ৭ নম্বর অভিযোগের ক্ষেত্রে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে।
sahos24.com | Online newspaper
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।