ছাতকে হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় গৃহবধূর মৃত্যু
ছাতকে হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় নিহত হেনা বেগম’র শিশুপুত্র মুজাহিদুর রহমান মাকে হারিয়ে একোল থেকে অকোলে বেড়াচ্ছে। সে নির্দিষ্ট কোন স্থান পাচ্ছে না। অনাহারে অর্ধাহারে অযত্নে অবহেলায় মা ছাড়া জীবনের ১৬ দিন অতিবাহিত করেছে। মায়ের বুকের দুধের জন্য হাহাকার করছে শিশু মুজাহিদ। বর্তমানে শিশুটি কৃত্রিম খাদ্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। শিশুটি দায়িত্ব কে নেবে এ নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছে স্বজনরা।
পাষণ্ড পিতা ছাদিকুর রহমান ও তার পরিবার মাত্র ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে হাতুড়ে ডাক্তারের সাথে স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে বিষয়টি আপোষ করেছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, হাতুড়ে ডাক্তার কর্তৃক অপচিকিৎসায় একজন সুস্থ্য মাকে নবজাতক শিশুর কাছ থেকে চির-বিদায় নিতে হয়েছে। ছাতকের সাধারণ মানুষ গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তারের অপচিকিৎসায় প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছে। তাদের কাছে গরিব অসহায় মানুষরা জিম্মি রয়েছে। ডাক্তারী প্রশিক্ষণ ও ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়াই জম-জমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে অবৈধভাবে ফার্মেসী ব্যবসা পরিচালনা করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। চর্ম, যৌন, হাঁপানী, আলসার, ক্যান্সার, এইডস, জন্ডিস, অর্শ্ব-গেজ, কিডনী, হার্ট, প্যারালাইসিস, টিউমারসহ জটিল ও কঠিন রোগিদের গ্যারান্টি সহকারে চিকিৎসা প্রদান করে আসছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলের মানুষের সাধারণ রোগ হলে হাই এন্টিবাইটিকসহ মেয়াত্তীর্ণ অপ্রয়োজনীয় ঔষধ দিয়ে থাকে। হাই এন্টিবাইটিক ব্যবহারের ফলে মানুষ দিন দিন জটিল সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে। এদের মধ্যে অন্যতম দশঘর নিরাময় ফার্মেসীর মালিক হাতুড়ে ডাক্তার আবদুল হান্নান। রোগিদের কাছে সে সব রোগের বিশেষজ্ঞ। এদিকে গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে, অভিযুক্ত এ হাতুড়ে ডাক্তারকে বাঁচাতে প্রভাবশালী মহল উঠেপড়ে লেগেছে।
জানা যায়, ২২মার্চ রাত ১০টার দিকে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের দশঘর গ্রামের ছাদিকুর রহমানের স্ত্রী হেনা বেগম একটি ফুটফুটে শিশু পুত্র প্রসব করেন। সন্তান প্রসবের পর তিনি মোটামোটি সুস্থতাবোধ করেছিলেন। অভাবী পরিবারের লোকজনরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য ডাকা হয় গ্রামের নিরাময় ফার্মেসীর মালিক হাতুড়ে ডাক্তার আবদুল হান্নানকে। তিনি এসে ইনজেকশন পুষ করতে বল্লে সদ্য শিশুটির মা বাঁধা নিষেধ করেন।
এসময় হাতুড়ে ডাক্তার একমতো জোরপূর্বক ভাবে পর পর ৪টি ইনজেকশন পূষ করেন। যন্ত্রণায় কাতর শিশু পুত্রের মা হেনা শোর-চিৎকার দিতে শুরু করলে গ্রাম্য চিকিৎসক রোগির মাথায় প্রচুর পরিমানে পানি ঢালতে বলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এলাকাবাসী মর্মান্তিক এ ঘটনার নায়ক হাতুড়ে ডাক্তারের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে আসছেন। ২৫মার্চ নিহত গৃহবধূর স্বামী ছাদিকুর রহমান বাদি হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেন। ২৬মার্চ স্থানীয়ভাবে এটি আপোষ নিষ্পত্তির জন্য একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় থানা পুলিশ উপস্থিত হলে বৈঠক পণ্ড হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে।
ছাদিকুর রহমান ও তার বড় ভাই মতিন মিয়াকে আপোষ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে, তারা বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, থানা পুলিশে অভিযোগ দিলে টাকার প্রয়োজন হবে। তাই তারা থানায় অভিযোগ দায়ের করতে পারছেন না। একপর্যায়ে মতিন ভারাক্রান্ত শুরে বলেন, একটি অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে দায়ের করা হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এতে তারা সু-বিচার থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশঘর গ্রামের একাধিক ব্যক্তিরা জানান, বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আবার অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, হাতুড়ে ডাক্তারের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।
এব্যাপারে ছাতক থানার ওসি হারুন অর রশিদ জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। অভিযোগ আসলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।