- হোম
- >
- বাংলা ও বাঙালি
- >
- জ্ঞান চক্রবর্তীঃ এক ব্রিটিশবিরোধী লড়াকু সৈনিক
জ্ঞান চক্রবর্তীঃ এক ব্রিটিশবিরোধী লড়াকু সৈনিক
শেখ রফিক
প্রিন্টঅঅ-অ+
কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের শোষণমুক্তির আন্দোলনে যে সকল মানুষ আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন, তাঁদের মধ্য কমরেড জ্ঞান চক্রবর্তী অন্যতম। বিত্ত-বৈভবের মোহ তাঁকে কখনো স্পর্শ করতে পারে নি। তিনি বাবার অঢেল ধন-সম্পদ ও যশ-খ্যাতি ত্যাগ করে মেহনতি মানুষের কাঁতারে এসে তাদেরই একজন হয়ে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। গড়ে তুলেছেন শোষণমুক্তির জোরালো লড়াই-সংগ্রাম। ঢাকা জেলা কমিউনিস্ট আন্দোলনের কথা তাঁকে ছাড়া চিন্তাও করা যায় না। শুধু কমিউনিস্ট আন্দোলনই নয়, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনেও তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য।
১৯০৫ সালের জুলাই মাসে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার গোবিন্দ দাস লেনে তাঁর জন্ম হয়। পিতা যামিনী চক্রবর্তী ঢাকা শহরের একজন নাম করা আইনজীবী ছিলেন।
১৯১৭ সাল। সমগ্র ভারত জুড়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। সশস্ত্র বিপ্লববাদী দলগুলো ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীকে নিখিল ভারত থেকে স্ব-মূলে উৎখাত করার জন্য নানামাত্রিক কার্জক্রম সংগঠিত করছে। ঠিক এই সময় মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি সশস্ত্র বিপ্লববাদী সংগঠন অনুশীলন দলের শাখা সংগঠন ‘বাণী সংঘে’র সাথে যুক্ত হন। শুরু করেন ব্রিটিশকে উদচ্ছেদের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড। অনেক বছর পর গোপন কার্যকলাপ ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগের চোখে পড়ে। ১৯৩১ সালে তিনি গ্রেফতার হন। ওই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এস.সি’তে পড়তেন। তাঁকে রাজপুতনার দেউলী বন্দী শিবিরে রাখা হয়। এখানে তিনি বন্দীবস্থায় ৭ বছর ছিলেন। এই বন্দী শিবিরে বন্দী ছিলো অসংখ্য বিপ্লবী। যাঁদের কাছে তিনি সাম্যবাদের মন্ত্রে দীক্ষিত হন। মুক্তি লাভের পর তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যুক্ত হন। যুক্ত হওয়ার ৮ মাস পরে তিনি পার্টির সদস্য পদ পান।
ওই বছরেই ডিসেম্বর মাসে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন। এই সময় কমরেড জ্ঞান চক্রবর্তীর অক্লান্ত চেষ্ঠার ফলে ঢাকা, মানিকগঞ্জ , মুন্সিগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, অর্থাৎ সমস্ত ঢাকায় পার্টি শাখা-প্রশাখাশ বিস্তার লাভ করে। সারা ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টি তখন বেআইনী। পার্টি তখন প্রকাশ্য সংগঠনের পথ খুজতে থাকে। গোপন কাজের ধারাও অব্যহত থাকে।
১৯৩৬ সালে নিখিল ভারত প্রগতি লেখক সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৯ সালে ঢাকায় এই লেখক সংঘের শাখা গড়ে উঠে। ১৯৪০ সালের মাঝামাঝি কমরেড জ্ঞান চক্রবর্তী, রণেশ দাশগুপ্তের উদ্যোগে ঢাকার গেণ্ডারিয়া হাইস্কুলে প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কমরেড জ্ঞান চক্রবর্তী ছিলেন ঢাকার সাহিত্যিক ও শিল্পীদের সমন্বয়কারী। তিনিই মুলত লেখক সংঘের যাবতীয় কার্যবলী পরিচালনা করতেন। কমরেড জ্ঞান চক্রবর্তী ও রণেশ দাশগুপ্তের উদ্যোগে ঢাকায় প্রগতি লেখক সংঘ ও গোপন কমিউনিস্ট পার্টির পাঠক্রম গড়ে উঠেছিল। ১৯৪৩ সালে কমরেড জ্ঞান চক্রবর্তী ঢাকা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে মানুষকে বাঁচাতে কমরেড জ্ঞান চক্রবর্তী অমানুষিক পরিশ্রম করেন। সমস্ত ঢাকায় জনরক্ষা কমিটি করে লঙ্গরখানা চালু করেন। ১৯৪৬, ১৯৫০ ও ১৯৬৫ সালের ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সমায়ে তিনি জীবনবাজী রেখে অসীম সাহসীকতার সাথে এই দাঙ্গা মোকাবেলা করেন। পাকিস্থান আমলের পুরাটা সময় কেটেছে তাঁর জেল আর আত্মগোপনে। এ সময়ে তিনি ৩ বার গ্রেফতারসহ ১৩ বছর আত্মগোপনে ছিলেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ৫৩’ সালে ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে প্রথম যে একুশের সংকলন বের হয়, তার মূল প্রবন্ধ তিনি ছদ্মনামে লিখেন। ১৯৬২ সালের শরীফ কমিশন বিরোধী শিক্ষা আন্দোলনে, ৬৬’ সালের ৬ দফা আন্দোলনে ও ৬৯’ এর ১১
দফা আন্দোলনে একজন সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ‘ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের’ যৌথ গেরিলা বাহিনীর সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গড়ার জন্য আওয়ামীলীগ সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। তিনি ১৯৭৭ সালের ১৯ আগষ্ট মারা যান।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।