অভিজিৎ হত্যার মিডিয়া ট্রায়াল নয়, প্রকৃত বিচারের অগ্রগতি জানতে চাই
আরিফ জেবতিক
প্রিন্টঅঅ-অ+
একটি হত্যা মামলা তদন্তাধীন থাকলে সেটা নিয়ে কথা বলা অনুচিত। নিশ্চিত কোনো স্বাক্ষী প্রমান না থাকলে সবগুলো সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়েই তদন্ত এগিয়ে যায় এবং কখনো কখনো আমাদেরকে সারপ্রাইজড করে দিতে পারে। প্রায়শই দেখা যায় যে লোকটি মৃতের জানাজায় এসে কান্নাকাটি করে গেছে পরে দেখা যায় অপহরনের মূল হোতা সেই একই লোক।
এরকম পরিস্থিতিতে বুয়েট শিক্ষক ডক্টর ফারসীম মান্নান মোহাম্মদীর দিকে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার যে ইঙিত উঠেছে সেটা নিয়ে চূড়ান্ত কথা বলা বিপজ্জনক। তবে সংশ্লিষ্টরা যদি বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রমাগত সন্দেহের তীর ছুড়ে না দিয়ে পুলিশের কাছে উথাপন করেন, তাহলে সেটা যৌক্তিক হয়।
ডক্টর ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী এমন একটি বিজ্ঞান চক্র এবং পত্রিকার সঙ্গে জড়িত যাদের সাথে (তাঁর ভাষাতেই) বেঠিক মানুষের সংশ্লিষ্টতা আছে। সেই বেঠিক মানুষ বলতে আমার বুদ্ধিতে প্রথমেই ত্রিভুজকে বুঝলাম। বাংলা ব্লগে 'ছাগু' শব্দটির উৎপত্তি এই ত্রিভুজকে দিয়ে, এর পরে বহু বহু ছাগুদিকপাল ইন্টারনেট জগত আলোকিত করেছে এবং ব্লগীয় বিবর্তনে ত্রিভুজ সম্ভবত বহুদিন ধরেই আলোচনার বাইরেই ছিল কিন্তু যেহেতু একটা খুন সংগঠিত হয়েছে, তখন শেষ বৈঠকের আয়োজক সংগঠনে ত্রিভুজের সংশ্লিষ্টতার কারনে বিষয়টি একটু গুরুত্ব পেয়েছে বৈকি। 'পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরে না' এমন বিজ্ঞান শিক্ষকও এই পৃথিবীতে অস্তিত্বমান, সুতরাং বিজ্ঞান চর্চার অধিকার সকলেরই আছে, এমনকি ত্রিভুজ কিংবা তার বন্ধুবান্ধবদেরও এরকম একটি পত্রিকা ও সংগঠন চালানোর অধিকার আছে। এবং অভিজিৎ যদি সেই বৈঠকে হাজির থাকতে চান, সেটাও তার ইচ্ছাধীন।
কিন্তু শুধুমাত্র একটি বৈঠক আয়োজনের কারনেই ফারসীমকে বলির পাঠা বানানোর তৎপরতা ভালো লক্ষন নয়।
ঘটনা হচ্ছে, এরকম আড্ডা/বৈঠক বইমেলায় আকছার ঘটে। বিষয়টি এমন নয় যে 'বৈঠকে ডেকে এনে হত্যা করা হয়েছে'-সুতরাং আহ্বানকারীরা দায়ী হবে। এর আগে হুমায়ূন আজাদের উপর হামলা, রাজিবকে হত্যা কিংবা আসীফ মহিউদ্দিনকে হামলার সময় এরকম কোনো বৈঠক করে খুনি আর ভিকটিমকে সম্মিলিত করে দিতে হয়নি। বিশেষ করে রাজীবের বাড়িঘরের ঠিকানা আক্রমনকারীরা আগে থেকেই জানত, রেকি করে এসেছে বলে গ্রেফতারকৃতদের ভাষ্যে বেরিয়ে এসেছে। একই অবস্থা হয়েছে আসিফ মহিউদ্দিনের উপর হামলার সময়ও, আসিফ যে উত্তরায় একটি অফিসে কাজ করেন এবং কোন সময় বের হন এটা খুব প্রকাশ্য তথ্য না হওয়া সত্ত্বেও সেটা আক্রমনকারীরা ঠিকই বের করে ফেলতে পেরেছিল। এই তুলনায় বইমেলায় অভিজিৎকে চিহ্নিত করা অনেক বেশি সহজ কাজ ছিল, তিনি প্রকাশ্য ছিলেন এবং নিয়মিত বইমেলায় উপস্থিত হচ্ছিলেন। অভিজিৎকে হত্যা করার ক্ষেত্রে তাই এই বৈঠক খুনিদেরকে আলাদা কোনো সুবিধা এনে দিয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে না।
এর বাইরে অভিজিৎ হত্যার পরবর্তীতে ফারসীম এবং ঐ বিজ্ঞান সংগঠন/পত্রিকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ফেসবুকে নীরবতাও নিয়েও অনেককে প্রশ্ন করতে দেখা যাচ্ছে। এটাকে আমি অস্বাভাবিক ব্যাপার বলে দেখি না।
যখন অপরিচিত ঘাতকদলের উদ্যোগে একটি হত্যা সংগঠিত হয়, তখন ভয় পাওয়াটা মানুষের স্বাভাবিক ব্যাপার। সাধারন মানুষ 'কোনো ঝামেলায়' জড়িত হতে চায় না, অচেনা ভয়ে কুকড়ে যায়। এর বাইরে পরিচিত কোনো মানুষের এমন নৃশংস খুন যে কাউকেই বিচলিত, বিমর্ষ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। এমন কোনো আইন নেই যে কেউ খুন হওয়ার পরেই নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে সবাইকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে হবে।
অভিজিৎ খুনের সঙ্গে কারা জড়িত সেটি রাষ্ট্রকেই খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের গোয়েন্দা দল অত্যন্ত দক্ষ, তাঁরা এর আগেও রাজীবের খুনিদের অধিকাংশকেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
আমাদের উচিত হচ্ছে এবারও যাতে খুনিরা ধরা পড়ে এজন্য রাষ্ট্রকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করা এবং তারা যাতে এই কাজে ব্রতী থাকে তারজন্য জনমতের চাপ তৈরি করে রাখা।
এর বাইরে গণহারে মিডিয়া ট্রায়াল চালিয়ে অভিজিৎ এর খুনিদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।
লেখক: সাংবাদিক, ব্লগার এণ্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।