খেলাটা কিন্তু মাঠেই
ভারত-পাক ম্যাচের মতোই ভারত বাংলাদেশ ম্যাচও এত উত্তেজনা তৈরি করবে আগে ভাবা যায় নি। ক্রিকেট বোদ্ধারা বলছেন, উত্তেজনা অবশ্যই বিশ্বকাপের কোয়াটার ফাইনাল বলে আবার উত্তেজনা বাংলাদেশ এই প্রথম কোয়াটারে খেলছে বলে।
উত্তেজনা কিন্তু আসলে এই উপমহাদেশের অন্দরেই, যেখানে ক্রিকেটকে অন্যতম ধর্ম হিসেবে মানা হয়। আর এবারে পদ্মাপাড়ের ১৬ কোটি বাঙালীর আবেগ কিন্তু দুকুল ছাপিয়ে বইছেই বিশেষ করে ইংরেজ বধ সম্পন্ন হবার পরে সেটা আরও বেড়ে গেছে।
এই উপমহাদেশের সাধারন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এত না পাওয়ার মধ্যেও কোথায় যেন ক্রিকেটে বুদ থেকে সুখ খোজার একটা প্রয়াস থাকে। এই ভাবে নাড়ির গতি বৃদ্ধি যেমন আনন্দিত করে তেমন মাঝে মাঝে আবেগে ভেসে চোখের কোনাও ভিজিয়ে দেয়।
ভারত এই বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত অপরাজিত, আর বাংলাদেশ দুটিতে পরাজিত হয়েও দুরন্ত খেলা উপহার দিয়ে এবারের অন্যতম ডার্ক হর্স। তবে যারা বাংলাদেশকে এতদিন খাটো করে দেখেছেন তাদের মুখে কিন্তু এবারে ঝামা ঘসে দিয়েছে মাসরাফি সাকিব রিয়াদ বাহিনী। অ্যান্ডারসনকে বোল্ড করে রুবেলের দৌড় যেন মনে করে দিয়েছে স্বর্ণ যুগের কার্ল লুইসকে, যে গোটা একটা জাতিকে নতুন দিনের স্বপ্ন উপহার দিয়ে দিয়েছে।
স্বাধীনতার মাসে কোয়াটার খেলার ফল যাই হোক বাংলাদেশ কিন্তু জিতে গেছে। দেশে কিন্তু সকলেই উতসবমুখর এই এগারো জনকে নিয়ে। এদিকে বুকে হাত দিয়ে মেলবোর্নের মাটিতে যখন টাইগার বাহিনী বলছে ‘মা তোর বদন খানি মলিন হলে...’ ওদিকে ঢাকা বরিশালের প্রান্তে প্রান্তে লাখো লাখো ভবিষ্যতের টাইগাররাও একই সুরে একইভাবে একই গান গাইছে একই সময়ে – এই আবেগেই বাঙালী চিরবিজয়ী। এটাই কিন্তু সত্যিকারের বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের আবেগের বাংলাদেশ যারা ধর্মান্ধ নয়।
১৯শে একদিকে ১২৫ কোটি আর একদিকে ১৬ কোটি – পৃথিবীর কোনও প্রতিবেশী দুই দেশের এত মানুষ একসাথে খেলা দেখবেন, শুনবেন, সারাদিন খবর রাখবেন- খুব কমই এমন হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া মেতে উঠেছে নানা রকম কার্টুন, ব্যঙ্গ, শ্লেষে। কেউ বলছেন ভারত দোষী, কেউ বলছেন বাংলাদেশ আগে এমন বানিয়েছে, পিছিয়ে নেই দুই দেশের পত্রপত্রিকাও, এই সুযোগে দু দিনের বাড়তি বিক্রি কে না চায় ! শুধু একটা জিনিস মাথায় রাখা উচিত – এই সুযোগে কোন ধর্মান্ধ যেন মাথা তুলে উঠে কোন বিভ্রান্তি না ছড়ায়, তাদের কোন স্বার্থ যেন সিদ্ধি না করে। দিল্লী থেকে ঢাকা- তিস্তা হোক বা কাঁটাতার -গঙ্গার বাধ থেকে পদ্মার চর- সমকালিন খাতে এসব বইছেই রাজনীতির চোরাবালিতে। আর ক্রিকেট, ব্যবসায়ীদের লাভের খেলা হলেও, সাধারন মানুষকে একদিনের জন্য সাময়িকভাবে অন্য জগতে নিয়ে যায়। আর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি – দুই দেশের ২২ জন সেরা খেলোয়াড় একই কবির লেখা গানে সুর মেলাবেন – কবিগুরু দেশ ভাগ হলেও আপনাকে কিন্তু ভাগ করা যায়নি।
খেলাটা কিন্তু মাঠেই, পঞ্চাশ ওভার শেষে খেলার ফল যাই হোক মাহি আর মাসরাফি কিন্তু হ্যান্ডশেক করবে। এই বন্ধুত্ব দুই দেশের মানুষের মাঝে বজায় থাকুক। ১৯ এর প্রাপ্তি হোক একটা দুরন্ত লড়াই, যার শেষ হাসি যেন ক্রিকেট হাসে বাকি সবকিছুকে ছাপিয়ে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।