ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। এমনটিই অভিযোগ ছড়িয়ে পড়েছে সবার মুখে মুখে। গতকাল গ্রামের কাগজে ‘১১ বছর পর শুনানি’ এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় কাগজ কেনার হিড়িক পড়ে সেটেলমেন্ট অফিসপাড়ায়।

জমি নিয়ে সেটেলমেন্ট অফিসে এসে ন্যায় বিচার না পেয়ে অতিষ্ঠ হয়ে কেউ কেউ জোনাল অফিস, থানা, আদালত বা দুদকে মামলা করেছেন। শতশত ভূক্তভোগী মধ্যে এমনই একজন ভূক্তভোগী শৈলকুপা সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যাপক সদর উদ্দিন। তিনি সেটেলমেন্ট অফিসের ২ কর্মকর্তা উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার নজমুল হক, সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার চৌগাছার খলিলুর রহমানসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলার বাদী সাবেক অধ্যাপক সদর উদ্দিন ২০০২ সালের ২৯ এপ্রিল ঝিনাইদহ জেলা রেজিস্ট্রি অফিস থেকে কবলা দলিলের সহি মোহরী নকল তুলে দেখতে পান শৈলকুপা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ১৯ জুলাই’ ৬৩ তারিখে ২৯৫৩ নং দলিল সম্পাদিত হয়। 

ওই দলিলের জমির দাতা হিসেবে তার পিতা মৃত খেজমত আলী ও চাচা মৃত কেয়ামুদ্দিন মন্ডলের নাম ‘কিয়ামত মন্ডল’ বলে টিপ সহি দেখানো হয়েছে। এতে বাদীর সন্দেহ হলে ওই জমি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে দলিল জাল করা হয়েছে মর্মে ঝিনাইদহের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে দলিল গ্রহীতা মোতাহার মন্ডল (পিং মৃত নৈমদ্দিন মন্ডল) গংকে বিবাদী করে একটি দেওয়ানী মামলা করেন (দেং ১৪/২০০৩)। এ মামলা শুনানী শেষে বিজ্ঞ আদালত জাল দলিল করা হয়েছে মর্মে রায় প্রদান করেন। 

ওই মামলায় বিবাদী পক্ষের একজনের অংশীদার বাদ পড়ায় একই আদালতে অন্য একটি দেওয়ানী মামলা করেন (দেং ১১৭/২০০৫)। আদালত উভয় পক্ষের শুনানী শেষে দেওয়ানী মামলা নং দেং ১৪/২০০৩ এর রায় বহাল রেখে ১১৭/২০০৫ নং মামলাটি ১৯ মে’ ২০১৪ তারিখে খারিজ করে দেন। অপরদিকে জাল দলিলের মৌজা নং শৈলকুপা ৫১ সি,এ/এস,এ দাগ নং ২৬৩৮-৭৭ শতক দাগ নং ৩২৭৪-৪০ শতক দাগ নং ৩২৭৫-৪৩ শতক দাগ নং-৩৩৫৮-১১ শতক দাগ নং ৩৩৫৯-১০ শতক মোট ১৮১ শতকের মধ্যে ১৩৮ শতক জমির মধ্যে দাগ নং ৩২৭৪ এর ৪০ শতক জমি শৈলকুপা সেটেলমেন্ট অফিসের উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার নজমুল হক নিজে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়ে জাল দলিলের বিষয়টি অবগত হওয়া সত্ত্বেও অপরকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার পুর্বক ৩০ ধারায় গোলাম মোস্তফা পিতা আরিফ মন্ডল গংদের নামে রেকর্ড করে দিয়েছেন। 

ওই জমি রেকর্ড করার ফলে আরো আপত্তি কৃত জমির শুনানী অন্তে ন্যায় বিচার পাবে না মর্মে যশোর জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে আপত্তি নং ২৬১১, ২৫৩৯, ২৬১০ ও ২৫৩৬ দাখিল করেন বাদী। কিন্তু জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার চৌগাছা সেটেলমেন্ট অফিসের সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার খলিলুর রহমানকে আপত্তি নিষ্পত্তি করার জন্য দায়িত্ব দেন। তিনি এবং শৈলকুপা উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার নজমুল হক এর পরস্পর যোগসাজসে নিজে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়ে জাল দলিল করার বিষয়টি অবগত হওয়া স্বত্ত্বেও জাল দলিল কারীদের ওয়ারেশ গনের নামে ৩০ ধারায় রেকর্ড করে দিয়েছেন।

আত্মসাতের উদ্দেশ্যে জাল দলিল সৃষ্টি করে নিজে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়ে বিজ্ঞ আদালতের রায় অবগত থাকা স্বত্ত্বেও ক্ষমতার অপব্যবহার পূর্বক পরস্পর যোগসাজসে জাল দলিল সৃষ্টিকারীদের ওয়ারেশ গনের পক্ষে ৩০ ধারায় রেকর্ড করে দেয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ১০৯/ ৪০৯/ ৪২০/ ৪৬৫/ ৪৬৬/ ৪৬৭/ ৪৬৮/ ৪৭১ ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) নং ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতায় মামলা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ এমএ হাসেম খান জানান, বাদীর দাখিলকৃত এজাহারটি দুর্নীতি দমন কমিশনের তফসিলভুক্ত অপরাধের কারণে তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। শৈলকুপার পাইকপাড়া গ্রামের বিবাদী মেহেদি হাসানের জমির ( পাইকপাড়া ৭১ নং মৌজার, খতিয়ান নং এসএ ২৯০-৪২৫-৭০৬-২৮৯-৪৬৯, ডিপি খতিয়ান- ৩৪৩, দলিল নং-২৪৯৩, ৫৮১৫, ১৭৩৩, যা ৪০ বছর ধরে ভোগদখলকৃত) আপিল শুনানী নিস্পত্তি করতে উপসহকারী কর্মকর্তা নওশের আলীকে ঘুষ না দেয়ায় তা বাদীপক্ষের যোগসাজসে তা পাঠানো হয় যশোর জোনাল অফিসে। জোনাল অফিস থেকে কালীগঞ্জ পাঠানো সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার জয়নাল আবেদীন এ মামলার নিষ্পত্তি করতে ১ লাখ টাকা দাবি করে বলে মেহেদী হাসানের অভিযোগ। 

এক পর্যায়ে তাকে দেয়া হয় লাখ টাকা, কিন্ত বাদীর নিকট থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে জমি তাদের নামে রেকর্ড দেয়া হয়। মোবাইলে রেকর্ড করা আছে ঘুষ লেনদেনের সেই কথোপকথন। নিরুপায় মেহেদী এখন তার ভিটা বাড়ির জমি ফিরে পেতে দুদকে আবেদন করেছেন। শৈলকুপা মাঠপাড়া গ্রামের আলতাপ হোসেন জানান, উপসহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা নজমুল হকের যোগসাজসে কাগজপত্র থাকা স্বত্তেও জমির রেকর্ড পাননি। শৈলকুপা সেটেলমেন্ট অফিসের উপসহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা নজমুল হক, উপসহকারী কর্মকর্তা নওশের আলী এবং যশোর জোনালের খলিলুর রহমান ব্যাপক ঘুষ-দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। 

এছাড়াও প্রতিদিন শতশত মানুষ ন্যায় বিচার না পেয়ে সেটেলমেন্ট অফিসের দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ছে। সুযোগ নিচ্ছে দালালরা, অফিসারদের সাথে রয়েছে তাদের যোগসাজস। বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে শৈলকুপা সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, তাদের কিছুই করার নেই। জোনাল অফিসে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিতে পারে এবং তারাই তদন্ত করেন। এছাড়া তিনি দাবি করেন শৈলকুপা সেটেলমেন্ট অফিসে নিয়ম আনুযায়ী আপিল শুনানী ও নিস্পত্তি হয়ে থাকে।

সাহস২৪.কম । অনলাইন সংবাদপত্র