চলতি ২০১৪-১৫ আখ মাড়াই মৌসুমে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের বেধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার ধারের কাছেও পৌছাতে পারেনি চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু চিনিকল। 

গত ৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ইং তারিখে শুরু হওয়া এবারের মৌসুমে ৮৮ দিবসে ১ লক্ষ ১০ হাজার মেঃটন আখ মাড়াই করে ৮ হাজার ২৫ মেঃটন চিনি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নিয়ে মিলের মাড়াই কার্যক্রম শুরু হয়। লক্ষমাত্রার অতিরিক্ষ ৮ কার্যদিবস মিলটি চালিয়েও চিনি উৎপাদনের যে লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল তার ধারের কাছেও পৌছাতে পারেনি মিলটি। 

এবারের মৌসুমের শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার ১২ মার্চ ২০১৫ সকাল ৭ টা ১০ মিনিটে চিনিকলটি বন্ধ ঘোষণা করা পর্যন্ত ৯৬ দিবসে ৯৫ হাজার ৭শ ৫০ মেঃটন আখ মাড়াই করে মাত্র ৪ হাজার ৬ শ ৭৭ মেঃ টন চিনি উৎপাদন করেছে যা নির্ধারিত লক্ষমাত্রার অর্ধেক। ফলে এবারের মৌসুমেও চিনিকলটিকে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হতে পারে।

এছাড়া গত ৪ মৌসুমে উৎপাদিত প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত অবস্থায় চিনিকল ক্যাম্পাস এলাকার বিভিন্ন আবাসিক কোয়াটার ও বারান্দায় পড়ে আছে। এবারের মৌসুমে উৎপাদিত ৪ হাজার ৬ শ ৭৭ মেঃ চিনিও রয়েছে অবিক্রিত। লোকসান ও অবিক্রিত চিনি মিলিয়ে একশো কোটি টাকার বোঝা মাথায় নিয়ে বন্ধ হলো চিনিকলটি।

মাড়াই মৌসুম সমাপ্তি ঘোষণার সময় মিলের কর্মকর্তা, শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি-সম্পাদক সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের শ্রমিক ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে আখেরী হুইসেল বাজিয়ে মিলের আখ বহনকারী ডোঙ্গা (ক্যান কেরিয়ার) বন্ধ করা হয়।

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ইং তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাননীয় শিল্প মন্ত্রী আমির হোসেন আমু আনুষ্ঠানিক ভাবে মিলটির মাড়াই মৌসুম উদ্বোধন করেছিল। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের বেধে দেওয়া টার্গেট ছিল ৮৮ দিবসে ১ লক্ষ ১০ হাজার মেঃটন আখ মাড়াই করে ৮ হাজার ২৫ মেঃটন চিনি উৎপাদন করতে হবে। কিন্তু মিলটি গতকাল ১২ মার্চ ২০১৫ বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ৯৬ দিবসে ৯৫ হাজার ৭শ ৫০ মেঃটন আখ মাড়াই করে মাত্র ৪ হাজার ৬ শ ৭৭ মেঃ টন চিনি উৎপাদন করেছে যা নির্ধারিত লক্ষমাত্রার অর্ধেক।

এদিকে, গত ২০১১-১২ মাড়াই মৌসুমের উৎপাদিত চিনি রয়েছে ২ হাজার ৪ দশমিক ৯০ মেঃ টন এবং ২০১২-১৩ মাড়াই মৌসুমের উৎপাদিত চিনি রয়েছে ৪ হাজার ৮ শ ৮৪ দশমিক ৯০ মেঃ টন ২০১৩-১৪ মাড়াই মৌসুমের উৎপাদিত চিনি রয়েছে ৬ হাজার ৪ শত ২৬ দশমিক ১৫ মেঃ টন সাথে চলতি মাড়াই মৌসুমের চিনি উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার ৭ শ ৪২ মেঃ টন মোট ১৮ হাজার ৫৭ দশমিক ৯৫ মেঃ টন গুদাম জাত হয়ে অবিক্রিত অবস্থায় থাকলো। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩৭ টাকা প্রতি কেজি দর হিসাবে মোট ৬৬ কোটি ৮১ লক্ষ ৪৪ হাজার ১ শত ৫০ টাকা। এ নিয়ে মোট ৪ মৌসুমের চিনি বর্তমানে কেরু চিনিকল গুদামে রাখা হয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের টার্গেট অনুযায়ী চিনি আহরণের হার ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, কিন্তু বাস্তবে আখ মাড়াই করে চিনি আহরণের হার পাওয়া গেছে মাত্র ৩ থেকে ৫ দশমিক ০১ শতাংশ। অদক্ষ কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শীতা ও সঠিক তদারকি না করার কারণসহ মিলটি চলাকালীন সময় একাধিকবার কৌশলে আখের রস গুড় ড্রেন দিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়ার কারণেই লক্ষমাত্রা পূরণ হয়নি মনে করছে সচেতন মহল।

এবিষয়ে কেরুর এমডি কৃষিবিদ আজিজুর রহমান বলেন, সয়সের ভারে নূয়ে পড়ার কারণেই মিলটি সঠিক লক্ষমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। 

সাহস২৪.কম । অনলাইন সংবাদপত্র