টানা অবরোধ-হরতালের কারণে ধামরাইয়ে মুরগি খামারিরা বিপাকে
সোহেল রানা, ধামরাই
প্রিন্টঅঅ-অ+
দেশব্যাপী বিরোধীদলের টানা হরতাল ও অবরোধের কারণে মুগরির খাদ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। ফলে খামারিদের ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন মুরগির খাদ্য সরবরাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সারা দেশে মুরগির মাংস এবং ডিমের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ঢাকার ধামরাইয়ের মুরগির খামার গড়ে তুলে অনেক যুবক স্বাবলম্বী হয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে সারা দেশে বিরোধী দলের টানা অবরোধ চলতে থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সব কিছুর সঙ্গে মুরগির খাদ্য ও বয়লার মুরগি ও ডিম সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। একদিকে চাহিদামতো সরবরাহ না থাকায় মুরগীর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। অপরদিকে ডিমের দাম কমে যাওয়ায় এবং বয়লার মুরগি বিক্রি করতে না পারায় ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে খামারিদের।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মুরগির খামার রয়েছে ১৩০টি। এর মধ্যে লোকসানের মুখে পড়ে ৩১টি বন্ধ হয়ে গেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে বয়লার মুরগির দাম পড়ে যাওয়ায় খামারিদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়। তারপরও ঘুরে দাঁড়াতে নতুন করে মুরগি পালন শুরু করেন খামারিরা। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ফলে মুরগির খামারিরা আবারো বিপাকে পড়েছেন।
সরজমিন বিভিন্ন মুরগির খামার ঘুরে দেখা গেছে, খামারিরা মুরগির খাবার না থাকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। কুল্লা গ্রামের মুরগি খামারি মোস্তাক মিয়া বলেন, অবরোধের কারণে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। দুই দিনের খাবার দিয়ে তিন দিন চালাতে হচ্ছে। তারপর খাবার পাওয়া না গেলে কিভাবে মুরগি বাঁচিয়ে রাখবো এ নিয়ে চিন্তায় আছি।
একই গ্রামের খামারি মনসুর মিয়া বলেন, তার খামারে বর্তমানে ৭০০ লেয়ার মুরগি রয়েছে। প্রতিদিন ৯০ কেজি খাবারের প্রয়োজন হয়। খাদ্য সংকটের কারণে যাদের বেশি খাদ্য রয়েছে তাদের কাছ থেকে দুই এক বস্তা ধার করে এনে চালাচ্ছি। শুক্রবার খাদ্যের ব্যবস্থা করতে না পারলে বিপদে পড়বো। মুরগিকে অন্য কোনো খাবার খাওয়ানো যায় না। এতে মুরগি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। খাবার কম খাওয়ালে ডিমের উৎপাদন কমে যাবে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে ৬০০-৬২০ টাকা দরে প্রতি ১০০ ডিম বিক্রি হচ্ছে। এতে এমনিতেই লোকসান গুনতে হচ্ছে, তার ওপর ডিমের উৎপাদন কমে গেলে মূলধন হারাতে হবে।
আন্দরবাড়ি গ্রামের খামারি বেলাল হোসেন বলেন, খামারের ৬০০ বয়লার মুরগির মধ্যে ৩০০ বিক্রি করেছি। অন্যগুলো ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে পারছি না। বর্তমানে প্রতিটি মুরগির ওজন আড়াই কেজি হয়েছে। অবরোধের কারণে খাদ্য পাওয়া যাচ্ছে না। কম করে খাবার দিয়ে মুরগি বাঁচিয়ে রেখেছি। তিনি অভিযোগ করেন কোনো ডিলারের কাছে খাদ্য থাকলেও বেশি দামে বিক্রি করছে। এমনকি সবাইকে দিচ্ছে না। খামারিরা মুরগির খাদ্যসহ অন্যান্য সামগ্রী বহনকারী গাড়ি অবরোধের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানান।
মুরগির বাচ্চা এবং খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় কর্মকর্তা জানান, অবরোধের কারণে দাহিদা মতো খাদ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে যে খামারির ৫ বস্তা খাদ্য চাহিদা রয়েছে তাকে দেয়া হচ্ছে ৩ বস্তা। প্রত্যাশিত খাদ্য না পেয়ে অনেক খামারি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ডিম ও সম্পূর্ণ প্রস্তুত মাংসের মুরগি পরিবহনজনিত কারণে বিক্রি করা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে খামারিদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে। এমনকি মুরগি বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার বলেন, অবরোধের কারণে ধামরাইয়ে মুরগির খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। খাদ্য সংকটের কারণে মুরগিকে খাবার কম দিলে বা অন্য কোনো খাবার খাওয়ালে ডিমের উৎপাদন কমে যাবে। ফলে খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।