সাঈদীর ঐতিহাসিক চন্দ্র বিজয় এবং দ্রুতগামী মেশিন
আজ ৩ মার্চ, বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি করুণ স্মরণীয় দিন। ২০১৩ সালে এই দিনে যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী চাঁদে গমনের কুদরতে বগুড়া শহর, সাতক্ষীরা, সুন্দরগঞ্জ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ ভাঙচুর ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে হাজার হাজার উগ্র ইসলামপন্থী।
এদিন ভোর আনুমানিক ৩টা থেকেই চলে জামায়াত-শিবিরকর্মীদের রাষ্ট্রদ্রোহী ধ্বংসযজ্ঞ। মোবাইলফোনে ক্ষুদেবার্তা চালাচালি ও বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের মাধ্যমে ফোনসহ পর্যায়ক্রমে মসজিদে মাইকিং করে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে বলে গুজব রটানো হয়।
জামায়াত-শিবিরকর্মীরা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করে ক্ষুব্ধ করে তোলে শিশু, কিশোর ও নারীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে। তাদের উস্কানিতে সারাদেশে শহরে এবং গ্রামে রাস্তায় নেমে পড়ে নির্বোধ কিছু মানুষ। এরপর ধ্বংসযজ্ঞের সে কী ভয়াবহতা? তাদের পরিকল্পিত তাণ্ডবের পর রাস্তায় বেরিয়ে সাধারণ মানুষের বিস্ময়ের শেষ নেই। এ কী দশা একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন ভূমির? ইট, পাথর, গাছ, গাছের গুড়ি, ইলেকট্রিক পোল, সিমেন্টের খুঁটিসহ নানা ধরনের জিনিস রাস্তায় ফেলে অচল করে দেয়া হয়েছিলো অনেক সড়ক। এরই মাঝে রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোপ ছোপ রক্তের দাগ মানুষকে করে তোলে আরও আতঙ্কিত।
জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বাদ পড়েনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রেলপথ, পুলিশ ফাঁড়ী ও থানা থেকে শুরু করে প্রায় সকল পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়। সন্ত্রাসীদের হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিক, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, ইউএনও’ও। সরকারি-বেসরকারি উন্নয়নমূলক-সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান ও তাদের যানবাহনও বাদ পড়েনি তাণ্ডবের হাত থেকে।
তৎকালীন পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, কোন শ্রেণি পেশার মানুষ বাইরে বের হয়ে নিজের পরিচয় দিতে পারেননি। সংবাদিক বুঝলেই তাকে মারধর করে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। পুলিশ জানলেই তার ওপর আক্রমণ চালায় এবং সরকারি কর্মকর্তা জানলেই তাকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়।
এদিকে সাঈদী প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে চন্দ্র বিজয় করলেও ইতিহাসের কোন পাতায় তার নাম এখনো উঠে আসেনি। বাকশালী/অবৈধ/নাস্তিক(তাদের মতে) সরকার ষড়যন্ত্র করে সাঈদীর চন্দ্র বিজয়ের রেকর্ডকে বিশ্ব ইতিহাস থেকে সরিয়ে রেখেছে কিনা সেটি তলিয়ে দেখা দরকার। চাঁদে ঘুরে এসে আন্তর্জাতিক কোন পুরস্কার সাঈদী না পেলেও, চাঁদে গমনের কুদরতে ফাঁসির দড়িতে ঝুলে মরার থেকে প্রাণে বেঁচে গেলো দ্রুতগতি সম্পন্ন মেশিনের অধিকারী এই জামায়াত নেতা।
চাঁদে কোন মানুষ কিংবা অন্যকোন প্রাণি যেতে হলে অবশ্যই কোন দ্রুতগতি সম্পন্ন যানের প্রয়োজন। সাঈদীর কাছে এমন কোন দ্রুতযান ছিলোনা। তাছাড়া যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাঈদী তখন কারাগারে বন্দি। তবু কোন সে মেশিনের জোরে সাঈদী চাঁদে চলে গেলেন তা খুঁজে বের করা দরকার (চাঁদে যাওয়ার লোভ আমারও আছে, তাই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে খুঁজতে হবে)।
চাঁদনী রাতে আকাশে চাঁদের দিকে কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে থাকলেই আমি কলেজ জীবনের প্রিয়তমার ছবি দেখতে পাই। বুঝতে পারি হৃদয় থেকে চাঁদের বুকে তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি বলেই তার ছবি চাঁদের বুকে ভেসে উঠছে। তাহলে বলতে পারা যায় ভালোবাসা নামক মেশিন’ই আমাদের প্রিয় মানুষদের দ্রুত চাঁদে পৌঁছে দিচ্ছে। কিন্তু সাঈদী কী করে চাঁদে চলে গেলো? তার প্রতিতো আমাদের কোন প্রকার ভালোবাসা নেই, সাঈদীতো যুদ্ধাপরাধী।
রিয়াজ সোহেলসারা দেশের এবং বিদেশের (বাঙালি) মানুষ একজন যুদ্ধাপরাধীকে চাঁদে দেখতে পায় কোন অনুভূতির কারণে তা সামনে তুলে আনা উচিৎ। যে অনুভূতির (মেশিন) উপর ভর করে একজন রাজাকার বন্দি থাকা অবস্থায় সারা দেশে তান্ডব সৃষ্টি করে খুনাখুনি করতে পারে, সে অনুভূতি আমরা আরো লালন করবো, নাকি বর্জন করবো, এই সিদ্ধান্তও আমাদের অবশ্যই নিতে হবে। যদি না আমরা আর কোন যুদ্ধাপরাধীকে চাঁদে, সূর্যে কিংবা বাঁশ বাগানের মাথায় দেখতে না চাই। সেই সাথে এমন অনুভূতিও খুঁজে বের করতে হবে, যে অনুভূতির চর্চা করে অপরাধীদের কারাগারে বসিয়ে উচ্ছে ভাজি আর কই মাছের ঝোল দিয়ে ভাত না খাইয়ে, ফাঁসির দড়ির দিকে ঠেলে দিবে।
লেখক, রিপোর্টার সাহস২৪.কম
sahos24.com | Online bangla newspaper
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।