ফুল যতই ফুটছে, কান্না ততই বাড়ছে
পিয়ারুল ইসলাম, গাইবান্ধা
প্রিন্টঅঅ-অ+
রাত পেরুলেই সকাল আর সকাল হলেই বাগানের ফুল ফুটছে। ফুল যতই ফুটছে, কান্না ততই বাড়ছে হাবিজার রহমানের। চলমান অবরোধ-হরতালে দুই বিঘা জমির ফুল সঠিক সময়ে পরিবহণ করতে না পেরে অনেকটা ক্ষতির মুখে পড়েছেন এই ফুল ব্যবসায়ী।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের তালুকবাজিত গ্রামের দিনমজুর আবুল হোসেনের ছেলে হাবিজার রহমান ফুল উৎপাদন করে আসছেন প্রায় পাঁচ বছর যাবৎ। নিজস্ব দুই বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুল উৎপাদন করছেন তিনি। এই ফুল বিক্রির টাকা দিয়েই চলে বাবা, ছোট ভাই, স্ত্রী, দুই মেয়েসহ ছয় সদস্যের পুরো পরিবার।
হাবিজার রহমানের উৎপাদিত ফুলের মধ্যে রয়েছে, গোলাপ, সূর্যমূখী, রজনীগগ্ধা, ডালিয়া, ঘাস ফুল, গাধা, জারবারা (ইন্ডিয়া)।
জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে হাবিজার রহমান ফুল উৎপাদন শুরু করে মাত্র পনের শতাংশ জমিতে। ফুল বিক্রির লাভ থেকে তিনি এ পর্যন্ত তিন বিঘা জমি ক্রয় করেছেন, ছোট ভাইকে দোকান কিনে দিয়েছেন রংপুর সিটি শহরে, দুই মেয়ের লেখাপড়াসহ পুরো পরিবারের খরচ চলে এই ফুল বিক্রির টাকা দিয়ে।
হাবিজার রহমান জানান, বাবা আবুল হোসেন দিনমজুর। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়, ছোট ভাই আফছার আলী সৌদি আরব প্রবাসী, সব ছোট ভাই মিন্টু মিয়া ফুলের ব্যবসা করেন রংপুর শহরের পুলিশ লাইন এলাকায়। বাবা আবুল হোসেন, ছোট ভাই মিন্টু মিয়া, স্ত্রী সুফিয়া বেগম ও দুই মেয়ে নিয়ে হাবিজার রহমানের সংসার।
তিনি আরও জানান, দুই বিঘা জমিতে তিনি ফুল চাষ করেন। আর এ ফুল ছোট ভাই মিন্টু মিয়া রংপুর শহরে নিজস্ব ফুলের দোকানে বিক্রি করেন। কিন্তু চলমান অবরোধ-হরতালে সঠিক সময়ে ফুল রংপুর পৌঁছাতে না পেরে অনেকটাই বিপাকে পড়েছেন এই ফুল ব্যবসায়ী।
অনেক সময় বাগান থেকে ফুল তুলে তা পরিবহণ করতে না পেরে বাগানের ফুল বাগানেই শুকিয়ে যায়। এতে করে তিনি আর্থিকভাবে অনেকটা ক্ষতির সম্মুখিত হয়েছেন।
তিনি আরও জানান, দুই বিঘা জমিতে ফুল চাষে মাসিক ১২-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর খরচ বাদে প্রতিমাসে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো আয় হয়। বাগানের সকল প্রকার কাজে স্ত্রী সুফিয়া বেগমসহ পরিবারের সবাই তাকে সাহায্য করে। এতে করে বাগানের কাজের জন্য অন্যকোন শ্রমিক প্রয়োজন হয় না তার।
একই গ্রামের নুরুল হক জানালেন, হাবিজার রহমান কিছু দিন আগে অনেক কষ্টে দিনাতিপান করেছেন। কখনও শ্রমিকের কাজ, কখনও বা ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু ফুল চাষ শুরু করার পর থেকে তার ভাগ্যের চাকা খুলে গেছে। এখন তিনি একজন সফল ফুলচাষী ও স্বাবলম্বী ব্যক্তি।
এছাড়াও ফুলের বাগানের চারপাশে কয়েক’শ লেবুর গাছ রয়েছে তার। এ থেকেও তার বাৎসরিক অনেকটা আয় হয়।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার সত্যেন কুমার জানান, হাবিজার রহমান ফুল চাষ শুরু করার পর থেকেই কৃষি অফিসের পরামর্শ গ্রহণ করতেন। হাবিজার মিয়ার দেখে ওই এলাকার অনেকেই এখন ফুল চাষের দিকে ঝুকে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।