- হোম
- >
- বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
- >
- মনুষের রক্তের শ্রেণির আবিষ্কার
মনুষের রক্তের শ্রেণির আবিষ্কার
মানুষের ইতিহাসে বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান একটি বৈপ্লবিক অধ্যায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এতো নাটকীয় অগ্রগতি আগেকার কোনও শতাব্দীগুলিতে দেখা যায়নি। কিছু কিছু আবিষ্কার (discovery) ও উদ্ভাবন (invention) এবং কিছু কিছু ঘটনা এই শতাব্দীতেই মানুষের জীবনে গভীর রেখাপাত করেছে ; অসংখ্যভাবে বিশ্বের সমস্ত দেশের মানুষ ও জীবের জীবনযাত্রায় ছাপ ফেলেছে। আমরা এই ধারাবাহিক নিবন্ধে (আমাদের পছন্দ করা ) কিছু কিছু আবিষ্কার ও উদ্ভাবন এবং ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
মনুষ্য-রক্তের শ্রেণির আবিষ্কার
আবিষ্কার : ১৯০১ খ্রীষ্টাব্দ
বিজ্ঞানী : কার্ল ল্যাণ্ডস্টাইনার
১৭১৮ খ্রীষ্টাব্দে হারভে 'রক্তসংবহন' আবিষ্কার করার পর থেকেই ক্রমাগত প্রচেষ্টা চলেছিল মানুষের দেহে শোণিত সংক্রমণ করার জন্য। ফরাসী দার্শনিক ডেনিস এবং শল্যচিকিত্সক মারে প্রথম চেষ্টা চালান মানুষের দেহে ভেড়ার রক্ত (১৫০ মিলিলিটার) সংক্রমন করার। পরবর্তীকালে আরও অনেকে এই প্রচেষ্টা চালান কিন্তু ফল হয় মারাত্মক। ফলশ্রুতি হিসাবে শোণিত সংক্রমণ বন্ধ হয়ে যায়।
এক শতাব্দী পরে আবার প্রচেষ্টা হয় শোণিত সংক্রমণের। ১৮১৯ খ্রী-তে ব্ল্যান্ডেল ইতিহাসে প্রথম সাফল্যের সঙ্গে শোণিত সংক্রমণ করান, একজন মানুষের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে। তবে সাধারণভাবে বলা যায় শোণিত সংক্রমণ প্রচেষ্টা হতাশাজনক হয়ে দাঁড়ায় ; কখনও বা রোগী সুস্থ হন, কখনও বা তাঁর মৃত্যু হয়। বস্তুতঃ, এর কারণ মানুষের কাছে অজ্ঞাত ছিল।
অস্ট্রিয়া-র স্কলার কার্ল ল্যাণ্ডস্টাইনার এই বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন ১৯০০ খ্রী-তে। একটা টেস্ট টিউবে তিনি নিজের লোহিত রক্তকণিকা সঙ্গে মেশালেন নিজের শরীরের রক্তাম্বু (blood serum), কোনও পুঞ্জীভবন হতে দেখলেন না : যখন বিভিন্ন ব্যক্তির রক্তকণার সঙ্গে রক্তাম্বু মেশালেন, দেখলেন পুঞ্জীভুত হচ্ছে বা কখনও কখনও হচ্ছে না। এই ঘটনা অবশ্য অনেকেরই নজরে এসেছিল, কিন্তু ল্যাণ্ডস্টাইনার ছাড়া কেহই ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। লোহিত রক্তকণিকার দু'প্রকারের বিশেষ গঠনবিন্যাস আছে যারা একত্রে অথবা আলাদা ভাবে থাকতে পারে। রক্তাম্বু-র একটি প্রতিরক্ষিকা (antibody) আছে, নাম লোহিত রক্তকণিকার ভিতরের বিশেষ গঠনের agglutinin; এই agglutinin যখন লোহিত রক্তকণিকার বিশেষ গঠনবিন্যাসের মধ্যে পড়ে, পূঞ্জীভবন হয় যা রোগীর রক্তসংবহন-কালে মারাত্মক হতে পারে। এর থেকে ল্যাণ্ডস্টাইনার একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, মনুষ্য রক্ত-শ্রেণি হল বংশাণুধৃত।
১৯০৯ খ্রী-তে সমস্যার সমাধানকল্পে ল্যাণ্ডস্টাইনার রক্তকে চারটি শ্রেণি-তে ভাগ করলেন- A, B, AB এবং O। ডাক্তাররা রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে সঠিক শ্রেণি নির্ধারণ করে রক্তসংবহন করতেন।
যেহেতু রক্ত-সংবহন পূর্বে ধারাবাহিকভাবে বিফল হয়েছে, সাধারণ চিকিত্সকরা এটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতেন ; তবে বহু সংখ্যক বিজ্ঞানী এটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাচ্ছিলেন। নাটকীয়ভাবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এনে দিল রক্ত-সংবহন পরীক্ষার এক বিশাল সুযোগ। যেহেতু যুদ্ধে আহতদের জীবন নিয়ে সমস্যা, রক্ত-সংবহন প্রথা হয়ে দাঁড়ালো আহতদের মৃত্যুর নিশ্চিত দরজা থেকে ফিরিয়ে আনার এক অস্ত্র। ডাঃ ওল্ডেনবার্গ প্রথম পুঞ্জীভবনের প্রতিক্রিয়া জানবার জন্য রক্ত-মিলান পরীক্ষা শুরু করলেন রক্ত-সংবহন প্রক্রিয়ার আগে। দু'জন ব্যক্তির মধ্যে রক্তসংবহন তখনই সম্ভব যখন কোনও পূঞ্জীভবন হবে না লোহিত রক্তকণিকা আর রক্তাম্বু মেশালে। এই প্রক্রিয়া বিশাল সাফল্য এনে দিল এবং প্রচুর জীবন বাঁচলো। পরবর্তী বত্সরগুলিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ব্যবহারের ফলে রক্ত-সংবহন হয়ে দাঁড়ালো একটি নিরাপদ ব্যবস্থা, এবং ১৯২০ খ্রী-র শেষদিকে ইয়োরোপ ও উত্তর আমেরিকায় রক্ত-সংবহন হয়ে দাঁড়ালো মেডিকেল শাস্ত্রের একটি সফল ও সর্বগ্রাহ্য প্রক্রিয়া।
আমরা এখন জানি বিভিন্ন জাতির নরনারীর রক্ত-শ্রেণী বিভিন্ন রকমের। যথা, শ্রেণী O খুবই সাধারণ UKতে, শ্রেণী B- এশিয়া মহাদেশে। O শ্রেণী হল সব থেকে পুরাণো- প্রস্তরযুগ থেকে এর অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। শ্রেণীদ্বয় A ও B পরে এসেছে অভিপ্রয়াণ মারফত্, যেমন আফ্রিকা থেকে ইয়োরোপ খ্রী-পূর্ব ২০,০০০ থেকে ১০,০০০ -এর মধ্যে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।