- হোম
- >
- বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
- >
- জৈব যৌগ পৃথকীকরণে কলাম ক্রোমাটোগ্রাফির কৃৎকৌশল
জৈব যৌগ পৃথকীকরণে কলাম ক্রোমাটোগ্রাফির কৃৎকৌশল
মানুষের ইতিহাসে বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান একটি বৈপ্লবিক অধ্যায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এতো নাটকীয় অগ্রগতি আগেকার কোনও শতাব্দীগুলিতে দেখা যায়নি। কিছু কিছু আবিষ্কার (discovery) ও উদ্ভাবন (invention) এবং কিছু কিছু ঘটনা এই শতাব্দীতেই মানুষের জীবনে গভীর রেখাপাত করেছে ; অসংখ্যভাবে বিশ্বের সমস্ত দেশের মানুষ ও জীবের জীবনযাত্রায় ছাপ ফেলেছে। আমরা এই ধারাবাহিক নিবন্ধে (আমাদের পছন্দ করা ) কিছু কিছু আবিষ্কার ও উদ্ভাবন এবং ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
জৈব যৌগ পৃথকীকরণে কলাম ক্রোমাটোগ্রাফির কৃৎকৌশল
( Column Chromatography Technique for Organic Compound Separation )
আবিষ্কার : ১৯০১ খীষ্টাব্দ
বিজ্ঞানী : মিখাইল টিভেট, রশিয়া
একটা সাদা দড়ি বা সুতা (string)-র একটা দিক ঝুলন্ত অবস্থায় রঞ্জকের পাত্রে নিমজ্জিত করে রাখলে দড়িটি রঞ্জককে শুষে নিতে শুরু করে। কিন্তু রং বিভিন্ন হলে দড়ি ধরে ওঠার দূরত্বও হবে বিভিন্ন। বহুদিন ধরেই রঞ্জক প্রস্তুতকারকরা 'ক্রোমাটোগ্রাফি' ব্যবহার করে আসছেন, মিশ্রণ থেকে বিভিন্ন রংকে আলাদা করার কাজে, বিশেষতঃ যদি মিশ্রণের উপাদানগুলি অল্প পরিমাণে হয়। এই কৃৎকৌশলটি অত্যন্ত প্রযোজ্য যখন মিশ্রণের উপাদানগুলির ভৌতিক (physical) ও রাসায়নিক (chemical) ধর্ম একই হয় এবং সাধারণ পৃথক্করণের উপায়গুলি কাজে দেয় না। 'ক্রোমাটোগ্রাফি' কথাটির অর্থ রং দিয়ে লেখা [গ্রীক ভাষায় : khromatos অর্থ রং, graphos অর্থ লিখিত]। ক্রোমাটোগ্রাফি কৃৎকৌশলটি আবিষ্কার করেন মিখাইল সোয়েট (Mikhail tswett) ১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দে।
ক্রোমাটোগ্রাফি-তে আলাদা করার কৃৎকৌশলগুলির ভিত্তি হল মিশ্রণে উপাদানগুলির বিন্যাস- স্থির (stationary) এবং সচল (mobile) অবস্থা। স্থির অবস্থাটি হতে পারে একটি শোষকের কলাম, একটি কাগজ, একটি পাতলা শোষকের আবরণ কাচের উপর, ইত্যাদি, যার মধ্য দিয়ে সচল অবস্থা যায়। সচল অবস্থাটি হতে পারে তরল পদার্থ বা গ্যাস। যখন স্থির কঠিন অবস্থাকে একটি কলাম হিসাবে নেওয়া হয়, প্রথাটিকে বলা হয় 'কলাম ক্রোমাটোগ্রাফি' ( চিত্র )।
কলাম ক্রোমাটোগ্রাফি-তে সাধারণ শোষকগুলি হল সিলিকা, আলুমিনা, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ক্যালসিয়াম ফসফেট, ম্যাগনেসিয়া, স্টার্চ, ইত্যাদি। দ্রাবক (solvent) নির্বাচন করা হয় শোষক ও দ্রাবকের প্রকৃতি বিচার করে। মিশ্রণের উপাদানগুলির কত তাড়াতাড়ি পৃথক্করণ হবে তা' নির্ভর করবে শোষকের তত্পরতা এবং দ্রাবকের বিপরীত-ধর্মিতার উপর। যদি শোষকের তত্পরতা খুব উচ্চ হয় এবং দ্রাবকের বিপরীত-ধর্মিতার খুব কম হয়, পৃথক্করণ হবে খুব ধীরে, কিন্তু তার গুণমান হবে ভাল। অন্যদিকে যদি শোষকের তত্পরতা নিম্নস্তরের হয় এবং দ্রাবকের বিপরীত-ধর্মিতার উচ্চস্তরের হয়, পৃথক্করণ হবে খুব তাড়াতাড়ি, কিন্তু গুণমান হবে নিকৃষ্ট অর্থাৎ উপাদানের পৃথক্করণ ১০০-শতাংশ বিশুদ্ধ হবে না।
শোষককে তরলায়িত (slurry) করা হয় উপযুক্ত তরল পদার্থ সংযোগে এবং ঢালা হয় একটি নলাকৃতি টিউবে যার তলাটি হল ছিদ্রপূর্ণ বা তুলা দিয়ে আটকানো। যে মিশ্রণটিকে আলাদা করতে হবে, তাকে একটি উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত করে টিউবে উপর দিক থেকে ঢালতে হবে। মিশ্রণ টিউব ধরে যত নামবে উপাদানগুলি বিভিন্ন উচ্চতায় শোষিত হবে ; যার শোষণ-ক্ষমতা সবথেকে বেশি সে থাকবে সবথেকে উপরে এবং সেই মতন নলের উপর থেকে নীচে আলাদা আলাদা ব্যাণ্ড তৈরি হবে। যে পদ্ধতিতে শোষক থেকে উপাদানগুলিকে ব্যাণ্ডে রূপান্তর করা হয়, তাকে বলে 'এলুশন'।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।