- হোম
- >
- শিল্প-সাহিত্য
- >
- ‘মুজিব আমার পিতা’ বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ আসছে কাল
‘মুজিব আমার পিতা’ বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ আসছে কাল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রচিত ‘মুজিব আমার পিতা’ বইয়ের প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে গেছে মেলার প্রথম ১২ দিনেই। দ্বিতীয় সংস্করণ আসছে আগামীকাল শনিবার।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রথম দিন ‘মুজিব আমার পিতা’ বইটি মেলায় আসে। বইটির চাহিদা বেশি থাকায় প্রথম সংস্করণ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। বইয়ের প্রকাশক আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গণি বলেন, আগামীকাল দ্বিতীয় সংস্করণ মেলায় আসবে। প্রধানমন্ত্রীর রচিত অন্যান্য বইয়েরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ও পারিবারিক জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত লেখালেখির সংকলন গ্রন্থ ‘মুজিব আমার পিতা’ বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলেছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, গবেষক ও রাজনৈতিক কর্মী মোনায়েম সরকার এবং গবেষক-প্রাবন্ধিক পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এম আবদুল আলীম।
তারা বলেন, এই বইটি প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থের সংকলন। এতে তাঁর রাজনৈতিক ও পরিবারিক জীবনের স্মৃতিকথা সন্নিবেশিত হয়েছে। যা তাঁর আত্মজীবনীর অংশ। বিশ্লেষকগণ বইটিকে রাজনৈতিক মূল্যবোধের দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন বিবেচনা করেছেন, তেমনি একজন গবেষক ও প্রাবন্ধিক হিসেবে লেখনির সাহিত্যমূল্যও বিশ্লেষণ করেছেন।
মোনায়েম সরকার বলেন, এই বইতে প্রধানমন্ত্রী যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আবদুল মতিনের স্মৃতিচারণ করেন কিংবা নব্বইয়ের গণআন্দোলন, শহীদ নূর হোসেন এর স্মৃতিচারণ করেন তখন তার মধ্যে গভীর মানবিক বোধসম্পন্ন একজন রাজনীতিবিদের পরিচয় মেলে। তার দীর্ঘ রাজনীতিক জীবনে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে মানুষের প্রতি তাঁর সহমর্মিতা ও সাহসিকতার পরিচয় মেলে। পরিচয় মেলে একটি রাজনৈতিক পরিবার থেকে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা’ হয়ে ওঠার।
তার মতে, বইটি কেবল একজন প্রধানমন্ত্রী কিংবা একজন রাজনীতিকের স্মৃতিকথা নয়। বইটি হয়ে উঠেছে বাংলার মানুষের ইতিহাসের সাক্ষী। একজন মানবিক মানুষ হিসেবে, একজন নারী, কখনো পিতার আদরের সন্তান, কখনো ¯স্নেহময়ী মা এবং একজন মানবিক বোধসম্পন্ন রাজনীতিক হিসেবে তাঁর আত্মপরিচয় উঠে এসেছে এই গ্রন্থে।
ড. এম আবদুল আলীম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবেগধর্মী ভাষা, কাব্যিক মাধুর্য আর বিচিত্র তথ্যের সন্নিবেশে বইটি পরিপূর্ণ। পড়া শেষ না করে উঠার উপায় নেই। বইটি পড়তে পড়তে কখনও কখনও আবেগবিহ্বল হতে হয়। মনের অজান্তেই চোখের কোণে জল এসে পড়ে। লেখক তাঁর শৈশব-কৈশোর, শিক্ষাজীবন, পিতা-মাতা-ভাইবোনকে নিয়ে নানা স্মৃতি, পারিবারিক পরিবৃত্তের ছোট্ট ছোট্ট ঘটনা এবং রাজনৈতিক জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের বিচিত্র বিবরণ তুলে ধরেছেন। ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ হলেও মূলত এটি হয়ে উঠেছে গত শতাব্দীর বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল।
অধ্যাপক আবদুল আলীম ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ নামক স্মৃতিকথামূলক বইটিকে “যোগ্য পিতার যোগ্য উত্তরসূরির বয়ান” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, কেবল স্বজন হারানোর বেদনা নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী আঞ্চলের মানুষদের স্বজন হারানোর বেদনায়ও তিনি সমব্যথী হয়ে পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাদের জন্য অশ্রু বিসর্জন করেছেন। বইটি পড়ে ব্যক্তি শেখ হাসিনার জীবনের বিচিত্র অনুষঙ্গ যেমন জানা যাবে, তেমনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাবে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম এই বইটি থেকে লাভ করবে ইতিহাস, মানবিকতা, দেশপ্রেম ও নেতৃত্বের শিক্ষা।
গত শতাব্দীর বাংলাদেশ-এর ইতিহাসের গৌরবজ্জল পরিবারের সন্তান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন ও কর্ম নানা বৈচিত্রে পূর্ণ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য সন্তান শেখ হাসিনা রাজনীতিতে যেমন তাঁর ছাপ রেখেছেন। তাঁর লেখনিতেও সেই বিশেষত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
“বইটি পড়তে পড়তে কখনো মনে হয়েছে তিনি একজন সাহিত্যিক। আবার কোথাও কোথাও মনে হয় তিনি রাজনীতিবিদ। তার লেখনীতে শেখ হাসিনা একজন সাহসী রাজনৈতিক নেত্রী এটা যেমন ফুটে উঠেছে, আবার বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী হিসেবে সাহিত্য চর্চা করলেও যে তিনি সফল হতেন এটিও এখানে এসেছে। তার লেখায় প্রকৃতির সাবলিল বর্ণনার মধ্য দিয়ে তার সেই সাহিত্যিক সত্তার পরিচয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে,” একজন প্রাজ্ঞ গবেষক-এর দৃষ্টিতে মোনায়েম সরকার বইটির সাহিত্য মান বিচার করেছেন এভাবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একজন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্রী। তাঁর লেখায় এর ছাপ পাওয়া যায়। একটা নিজস্ব বিশেষ আর্ট এতে আছে।
ড. আলীম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর, ’৭৫-পরবর্তী রাষ্ট্রজীবনের এক ক্রান্তিকালে শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে শেখ হাসিনা মানবিকবোধ ও নেতৃত্বের গুণাবলী দ্বারা কীভাবে বাংলার কোটি কোটি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক হয়ে উঠলেন তার আত্মকথন রয়েছে এ-বইতে। পিতা-মাতা, ভাইবোন ও আত্মীয়-স্বজন হারানোর মর্মান্তিক বেদনার কথা তিনি যে আবেগময়ী ভাষায় বর্ণনা করেছেন, তা সত্যিই মর্মস্পর্শী ও সাহিত্যগুণে পরিপূর্ণ।
বিশ্লেষণের পাশাপাশি বইটিকে একটি পরিপূর্ণ আত্মজীবনী গ্রন্থে রূপান্তর করার পরামর্শ দিয়েছেন দুই প্রাজ্ঞ বিশ্লেষক। তাঁরা বইয়ের মুদ্রণ প্রমাদ সংশোধনেরও পরামর্শ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে সামনে রেখে আগামী প্রকাশনী এ বছর শেখ হাসিনা রচিত ও সম্পাদিত মোট ১১টি বই প্রকাশ করেছে। তাঁর অন্যান্য বইগুলো হলো: সাদা কালো, ওরা টোকাই কেন, দারিদ্র্য দূরীকরণ : কিছু চিন্তাভাবনা, সহে না মানবতার অবমাননা, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, বিপন্ন গণতন্ত্র লাঞ্ছিত মানবতা, লিভিং ইন টিয়ারস, পিপল এ্যান্ড ডেমোক্রেসি, আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি (জাতীয় সংসদে প্রদত্ত ভাষণ) এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (বেবি মওদুদের সাথে যৌথ সম্পাদনা)।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।