- হোম
- >
- কৃষিজ ও প্রাণিজ
- >
- কমলগঞ্জে বোরো চাষিদের মাথায় হাত
কমলগঞ্জে বোরো চাষিদের মাথায় হাত
মৌলভীবাজারের কৃষি অধ্যুষিত কমলগঞ্জ উপজেলায় চলতি বোরো মওসুমে পানির অভাবে সেচ সঙ্কটে পড়েছেন চাষিরা। নদীর উৎসমুখে পানি না থাকায় সেচের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।এছাড়ার উজানে বাঁধ দেওয়ায় নিম্নাঞ্চলের স্লুইস গেট ও পানি নেই। ঘন ঘন ক্রসবাঁধ, স্লুইস গেট স্থাপন করেও চাষিরা সেচের অভাবে সময়মতও বোরো আবাদ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষকরা।
সরজমিন দেখা যায়, কমলগঞ্জে উপজেলা কৃষকরা বোরা আবাদে ঝুঁকছেন। কিন্তু বোরো আবাদ করে পড়েছেন বিপদে। উপজেলা ছোট বড় নদী-খাল বিশেষ করে ধলাই, লাঘবটা, খিন্নি, জপলার, লাউয়াছড়া খালে পানি হ্রাস পেয়েছে। লাউয়াছড়া ও লাঘাটা ছড়ায় উৎসে পানি না থাকায় বোরো চাষাবাদে সেচের অভাবে রোপিত বোরো জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। খোদ নিম্নাঞ্চলের এলাকাও কৃষকরা সেচ সঙ্কটে পড়েছেন।
শতশত একর চারা রোপন করে পানি দিতে না পারায় রোপিত জমি ফেটে একাকার হয়ে যাচ্ছে। কৃষকদেরও মধ্যে চলছে হাহাকার। শুধু তাই নয় উজানে এক ইউপি চেয়ারম্যান অবৈধ ভাবে ক্রসবাঁধ দিয়ে তার এলাকার গোটি কয়েক কৃষকদেরও স্বার্থেও জন্য ভাঁটি এলাকার শত শত কৃষকদেরও সর্বনাশ করার অভিযোগ তুলেছেন কৃষকরা।
হোমেরজান, উত্তরভানুবলি, দক্ষিণ তিলকপুর, ঘোরা মারায় ও মঙ্গলপুর গ্রামের শত শত কৃষকর লাউয়াছড়া খাল হতে পানি ব্যবহার করে বিগত সময়ে বোরো আবাদ করলেও এবার খালে কোন পানি নেই। যা ছিল তা দিয়ে তারা বীজ তলা তৈরী করে চারা রোপন করেন। কিন্তু আদমপুরের উপজেলা বাজার নামক স্থানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তার এলাকার কৃষকদের স্বার্থে অবৈধ ভাবে একটি ক্রস বাঁধ নির্মাণ করেন। প্রথম কিছু পানি ছাড়লেও বর্তমানে পানি ছাড়ছেন না।
প্রবহমান একটি খালে পানি আটকে দেওয়ায় ওই ৬টি গ্রামের প্রায় ১০০ একর জমি পানি সংকটে ভুগছে। প্রকট রোদে জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। দুইটি সুইচ গেইট থাকলেও তার কৃষকদের কাজে লাগছে না বলে কৃষক আবিদ আলী জানান।
কৃষক করিম মিয়া, আজিজ মিয়া বলেন, পানি সংকটে এলাকার আরো ১০০একর জমি চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। যা করেছেন তাদের পানি দিতে না পারায় রোপিত চারা মরে যাচ্ছে।২/১ জন নিজ উদ্যোগে জলাশয় হতে পানি দিচ্ছেন।
শমশেরনগর ইউনিয়নের কৃষক মোবাশ্বির আলী বলেন, তিনি গত বছরে ২৫ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করলেও সেচের সমস্যার কারণে এ বছর মোটেই বোরো চাষাবাদ করছেন না। উপর থেকে পানি না আসায় নদী গুলিও শুকিয়ে গেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। মুন্সি বাজার ও পতনউষার ইউনিয়নের কৃষক মোজাহিদ আলী, হরমুজ মিয়া, জমসেদ মিয়া, আকতার মিয়া বলেন, তারা লাঘাটা নদীর পানির উপর ভিত্তি করে প্রতি বছর বোরো চাষাবাদ করেন।
কিন্তু নদীতে পানি কম থাকায় এবং উজানে স্লুইসগেট স্থাপন করে পানি আটকিয়ে ফেলায় চাষাবাদ করতে পারছেন না। সেচ দিয়ে পানি উত্তোলনের মতোও তারা পরিবেশ পাচ্ছেন না।
আদমপুর ইউনিয়নের আজিজ মিয়া, আক্কল আলী, করিম মিয়া, বিশ্বজিত সিংহ, লক্ষী সিংহ সহ কৃষকরা জানান, হোমেরজান, ভানুবিল, ঘোড়ামারা, মঙ্গলপুর, তিলকপুর গ্রামে প্রতি বছর কয়েক’শ একর জমি বোরো চাষাবাদ করলেও এ বছর উপজেলা বাজার এলাকায় লাউয়াছড়ায় বাঁধ দেওয়ায় নিম্নাঞ্চলে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তাদের রোপিত বোরো জমি ফেটে যাচ্ছে।
তারা আরও বলেন, ছড়ায় বাঁধ দেওয়ার ফলে ছনগাঁও এলাকায় স্লুইস গেটেও পানি নেই।
হোমেরজানের এক কৃষক বলেন, পানি বিষয়টি স্থানীয় মেম্বারকে জানালে তিনি বলেন, সব এলাকার মানুষ পানি পেতে হবে। আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদ ভুইয়া বাঁধ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, যারা অভিযোগ দিয়েছে তারা কারা জানতে চান। পানি নিতে হলে তাকে বলতে হবে বলেন জানান।
প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়ন পর্যায়ের দু’জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের তোলনায় এ বছর সেচের সঙ্কট রয়েছে। নদীতে যেটুকু পানি আছে কোন সময়ে বাড়লে পরে কমতে দেখা গেছে। এতে বোরো চাষিরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
উপজেলার সার ডিলাররা জানান, অন্যান্য বছরের মতো এবছর সার বিক্রি হচ্ছে না। কৃষকরা সঠিকভাবে চাষাবাদ করতে না পারায় সার বিক্রয়ে প্রভাব পড়ছে।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শামসুদ্দীন আহমদ পানি সঙ্কটের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন লাঘাটা নদীর উৎসব মুখেই পানি নেই। ফলে কৃষকরা কিছু ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।