তামাকের ‘অভয়ারণ্য’ দীঘিনালা
তামাক চাষের আখড়া হিসেবে খ্যাত খাগড়াছড়ির দীঘিনালা এখন তামাকের ‘অভয়ারণ্য’। এখানকার ৫টি ইউনিয়নের ফসলি জমিতে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে মারাত্মক ক্ষতিকর তামাকের চাষ। বিশেষ করে উপজেলার মাইনি নদীর তীর ঘেঁষে তামাকের চাষ বেশ লক্ষ্যনীয়।
সরকার আইন প্রণয়ন করলেও মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ না থাকায় দেশি বিদেশি কোম্পানিগুলো তামাক চাষিদের প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করেই চলেছে। তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করণে জন্য সরকারি বেসরকারি কোন সংস্থা এগিয়ে আসছেনা এখনও পর্যন্ত। এর চাষের কারনে একদিকে যেমন সংকটে পড়ছে সবজি উৎপাদন অন্যদিকে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।
তথ্যসূত্রে জানাগেছে, এবার দীঘিনালায় তামাক কোম্পানীর অনুকূলে প্রায় ৪৫০-৫০০ জন চাষী আনুমানিক ২ হাজার একর ফসলি জমিতে তামাকের আবাদ করেছে। একটা সময় সবচেয়ে বেশি তামার উৎপাদিত এলাকা অন্যত্র হলেও এখন এর আবাদ ক্রমান্বয়ে বেড়ে পার্বত্য অঞ্চলের আনাচে কানাচে মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। দীঘিনালা উপজেলার মেরুং এলাকা থেকে প্রথমে তামাকের চাষ শুরু হয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো উপজেলায়। তামাক চাষের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবগত না থাকায় এবং নিরুৎসাহিত করার জন্য কেউ এগিয়ে না আসার ফলে কোম্পানিগুলো বিভিন্ন প্রলোভনের জালে কৃষকদের জড়িয়ে শত শত একর ফসলী জমি পরিনত করছে তামাক ক্ষেতে।
বিভিন্ন প্রকার রবি শষ্যসহ নানা প্রকার সবজি জাতীয় ফসলের জন্য একটা সময় বেশ সুনাম ছিল দীঘিনালার। তখন দামেও ছিল বেশ সস্তা। ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষকরা বিক্রি করে যেমন আনন্দ পেত; অপরদিকে ক্রেতারাও ইচ্ছেমত সাধ্যের মধ্যে ক্রয় করত। সেইদিন ঠিক হারিয়ে গেছে তামাক চাষের ভয়াল ছোবলে; জানান অনেকেই। তামাক চাষে গুটিকয়েক লোক লাভবান হলেও সামগ্রিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এলাকাবাসী আর দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, সেই সাথে ধ্বংস হচ্ছে পাহাড়ের সবুজ বনাঞ্চল।
সূত্রমতে, পার্বত্য জেলাগুলোর আবহাওয়া ও মাটি তামাক চাষের জন্য বেশ উপযোগী। তাই তামাক কোম্পানিগুলো এই অঞ্চলগুলোকে তামাক চাষের জন্য উপযোগী জমি হিসেবে বেছে নিয়েছে। এলাকার বেশকিছু স্থানে স্থায়ীভাবে গড়েও উঠেছে তামাক শোধনাগার।
দীঘিনালা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, এবার উপজেলার ৬৪৬ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করেছে চাষীরা। গতবারের হিসেবে ৭০৪ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছিলো। কিছু কিছু এলাকায় অধিক লাভের আশায় ব্যক্তিগত খরচেও তামাক চাষ করছে কৃষক।
দীঘিনালা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন জানান, ‘সরকারী পর্যায়ে তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কোন ধরনের প্রচার না থাকলেও উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষকদেরকে সাধ্যমত ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হয়’। তামাক চাষে কৃষকরা কেন উৎসাহী? এমন প্রশ্নের উত্তরে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন তামাক কোম্পানী থেকে কৃষকদের অগ্রীম সার, কীটনাশক, ঔষধ ও দাদনের টাকা দেয়া হয় এবং তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে কোম্পানিগুলো।
উপজেলার সবচেয়ে বড় তামাক চাষের এলাকা মেরুং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘তামাক অবশ্যই নেশা জাতীয় দ্রব্য। সকলে উদ্যোগী হয়ে এর চাষ অবশ্যই বন্ধ করা দরকার। তামাক চাষ বন্ধের আগে কৃষদেরকে বিকল্প চাষ করতে উৎসাহ যোগতে হবে। তামাকের ক্ষতিকর বিভিন্ন বিষয়ে চাষীদের সতর্ক করতে সরকারী সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারী সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসার কথা বলেন। এ ছাড়া প্রচার প্রচারনার মাধ্যমে তামাকের দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সকলকে জানানোর কথাও বলেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চাষীর সাথে কথা বলে প্রশ্ন করা হলে, তামাক চাষ কেন করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ‘তামাক চাষ পরিবেশের জন্য প্রচুর ক্ষতিকর জানি; কিন্তু লাভ বেশি তাই তামাক চাষ করি। তামাকের বিকল্প অন্য কোন ফসল চাষে যদি লাভ বেশি হয় তবে তা করার কথা জানান চাষীরা। এ ছাড়া সবজি উৎপাদন করে বিক্রির নিশ্চয়তা না পাওয়ার কথাও বলেন একাধিক কৃষক।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।