রেলে আবারও নাশকতা, বিপাকে যাত্রীরা
রেলযোগে আবারও শুরু হয়েছে নাশকতা। ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতালে নিষ্ঠুর ও বর্বরতা যেন থামছেই না বরং বেড়ে চলেছে। গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশনের আশপাশেও বড় ধরনের নাশকতা চালানো হচ্ছে। নাশকতার ফলে ট্রেন চলছে ধীর গতিতে। এতে রেলের সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে প্রতিনিয়ত। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় পুরো চাপ পড়ছে রেলের ওপর। তাই বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলতে হচ্ছে যাত্রীদের।
দেশের দুই হাজার ৮শ’ ৩৫ কিলোমিটার রেলপথে ১ হাজার ৪১ টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে নিরাপত্তা জোরদার করতে রেল কর্তৃপক্ষ ৮ হাজার ৩২৮ জন আনসার নিয়োগ দিয়েছে। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে সার্বক্ষণিক রেল নিরাপত্তা তদারকি করার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কমলকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্যকে সদস্য সচিব করে ১২ সদস্যের একটি রেল নিরাপত্তা ও মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এতে পুলিশ, আনসার, স্থানীয় সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। এ কমিটি সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি মনিটর করবে। আনসার, মনিটরিং কমিটির পেছনে ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তারপরেও রেলে নাশকতা দূর করা যাচ্ছে না।
রেলকর্তৃপক্ষ বলছে, নাশকতার হাত থেকে রক্ষার জন্য ট্রেন চালুর ১০-১৫ মিনিট আগে সতর্কতামূলকভাবে ট্রলি পরিচালনার করা হবে। ট্রলি পরিচালনা করা হলে লাইন উপরে ফেলা, প্যান্ডেল ক্লিপ খুলে নেয়া, ফিসপ্লেট তুলে ফেলার ক্ষেত্রে তথ্য পাওয়া যাওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে লাইন মেরামত না হওয়া পর্যন্ত ট্রেনটি আর চলবে না।
বাস্তবে এর কোনটাই কার্যকরী না থাকায় গত রবিবার গভীররাতে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের আমবাড়িয়া নামক স্থানে রেলপথে প্যান্ডেল ক্লিপ খুলে রাখায় ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এতে চালকসহ ২৫ জন আহত হন। তাদের স্থানীয় হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। অনেকে হাত-পা-মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন।
অন্যদিকে সোমবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের শ্রীপুরের জামালপুরগামী চলন্ত ট্রেনে অবরোধকারীরা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে আগুন লেগে ৫ জন দগ্ধ হয়।
এর আগে শনিবার রাতে ঢাকা-জামালপুর রুটে চলাচলকারী যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন গোয়ালন্দে গেলে জানালা দিয়ে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে আগুন লাগলে যাত্রীরা দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়াও গত রবিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হক জানান, নাশকতাকারীরা অনেকগুলো প্যান্ডেল ক্লিপ খুলে ফেলে। এতে রেললাইন নড়বড়ে হয়ে যায়। এই অবস্থায় ট্রেনটি আমবাড়িয়া পৌঁছুলে ইঞ্জিন ও ২টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এরপর চট্টগ্রামের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন সিডিউল বিপর্যয় ঘটে।
গত সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণ পাশে আউট সিগন্যালের কাছে ‘জামালপুর কমিউটার এক্সপ্রেস’ ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে। ট্রেনটি ঢাকা থেকে জামালপুর যাচ্ছিল।
গত শনিবার রাত ১০টার দিকে ঢাকা-জামালপুর রুটে চলাচলকারী যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি গোয়ালনন্দ গেলে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হয়। আগুন লেগে কয়েকজন আহত হয়।
আনসার নিয়োগ, মনিটরিং কমিটি, ট্রলি পরিচালনা করার পদক্ষেপ থাকলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে রেলওয়ে ফিস প্লেট খুলে ফেলা, রেললাইন কেটে ফেলা, রেললাইনে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করার চেষ্টাসহ গত এক মাসে প্রায় অর্ধশত স্থানে নাশকতা চালিয়েছে অবরোধকারীরা। এই নাশকতার মধ্যেও ট্রেন চলাচল অব্যাহত হয়েছে।
নাশকতা থেকে রক্ষার জন্য সতর্কভাবে চলানো হচ্ছে ট্রেন। ধীরে চলায় ট্রেনের শিডিউলে দেখা দিয়েছে চরম বিপর্যয়। একদিকে ট্রেনে নাশকতা, অন্যদিকে যাত্রা বাতিলের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা।
রেলওয়ের পরিচালক (ট্রাফিক) সৈয়দ জহুরুল ইসলাম জানান, গত কয়েক দিনের নাশকতার সঙ্গে রেলওয়ের কর্মীরা যুক্ত থাকতে পারেন। কারণ রেলে ট্রেড ইউনিয়ন আছে। এসব ইউনিয়নে বিভিন্ন মতাদর্শের শ্রমিক রয়েছেন।
রেলওয়ের মহাপরিচালক মো: আমজাত হোসেন জানান, রেলওয়ের লোকবলের বড় ধরনের ঘাটতি থাকায় অস্থায়ী নিয়োগ দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। তাই নাশকতার সঙ্গে অস্থায়ী লোকজন জড়িত থাকলে রেলওয়ের কিছু করার নেই।
এছাড়া নাশকতার সঙ্গে রেলওয়ের কর্মী জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগও পাওয়া যায়নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।