- হোম
- >
- চিত্র-বিচিত্র
- >
- সবুজ রঙের রহস্যময় শিশু
সবুজ রঙের রহস্যময় শিশু
কালো, সাদা আর তামাটে- এ তিন বর্ণের মানুষ নিয়েই মানব জাতি। কিন্তু পরিচিত এ রঙের বাইরে কেউ যদি বিচিত্র রং নিয়ে জন্মগ্রহণ করে তাহলে তা বিস্ময়ের ব্যাপার। খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দি, ব্রিটিশ রাজা স্টিফেনের (১১৩৫-১১৫৪) শাসনামলের কথা।
পূর্ব ইংল্যান্ডের সাফক অঞ্চলের উলপিট নামের এক গ্রামে পাওয়া গিয়েছিল অদ্ভুদ দুটি শিশু, যাদের গায়ের রং ছিল পুরোপুরি সবুজ। গ্রামটি বারি সেন্ট এডমুন্ডস শহর থেকে ১১ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। গ্রামবাসীরা কৃষিকাজ করার সময় নেকড়েগুহার পাশে এ শিশুদের দেখতে পান। এদের একটি ছেলে, অন্যটি মেয়ে।
কিন্তু শিশু দুটি আদরের পাত্র না হয়ে আতঙ্কের বিষয় হয়ে গিয়েছিল। তাদের নিয়ে ছিল নানা গুজব ও ভয়ঙ্কর সব কথাবার্তা। গ্রামবাসীরা নিষ্পাপ শিশু দুটিকে আদর না করে ভয়ে পালিয়ে যেত। ভাবত, এরা কি সত্যিই মানুষ নাকি অলৌকিক কোনো প্রাণী!
শিশু দুটি তাদের সবুজ রঙের রহস্য নিয়েই বড় হতে থাকে। তারা লোকালয়ে আসত না, জানত না ভাষাও। তাদের নাম পর্যন্ত দেয়া হয়নি। তবে উলপিট গ্রামটি এ দুই শিশুর কারণে পরিচিতি পেতে থাকে।
পরবর্তী সময় তাদেরকে গ্রামের একজন শিক্ষিত অধিবাসী রিচার্ড ডি ক্যালন-এর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের খাবার দিলে কয়েকদিন কিছুই খেল না। হঠাৎ একদিন তারা কিছু সবুজ শিম খুঁজে পেয়ে আগ্রহী হয়ে খেতে থাকল। এভাবে আস্তে আস্তে একসময় সাধারণ খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং কালক্রমে তাদের সবুজ বর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়।
কিন্তু ছেলেটি পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে অল্প বয়সে মারা যায়। পরবর্তী সময়ে মেয়েটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। সে ইংরেজি ভাষা শিখেছিল। মেয়েটি নিজ সম্পর্কে এক অদ্ভুত অবৈজ্ঞানিক বর্ণনা দিত।
সে বলত তারা এমন এক জায়গা থেকে এসেছে যেখানে কোনোদিন সূর্য উদয় হয়নি। সেখানের আলো ছিল গোধূলির মতো। তাদের দেশের নাম 'সেন্ট মার্টিন ল্যান্ড'। তারা কিভাবে উলপিটে এলো তা সে বলতে পারে না। ভাইসহ সে বাবার গবাদি পশুর পালের সঙ্গে ছিল, হঠাৎ তারা একটা জোরালো গুঞ্জন শুনতে পেল এবং তারপর নিজেদের আবিষ্কার করল এক নেকড়েগুহার পাশে।
রূপকথার গল্পের মতো শোনালেও উলপিটের সবুজ শিশুদের নিয়ে ঐতিহাসিকরা কিছু গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ঐতিহাসিক পল হ্যারিসের মতে ১১৭৩ সালে ইংল্যান্ডের রাজা হেনরি ২য় ও বিরোধী শক্তি রবার্ট ডি বিউমন্ডের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে বহু ফ্লেমিশ (বেলজিয়াম অধিবাসী) হত্যা করা হয়। যুদ্ধস্থানটি ছিল সেন্ট এডমুন্ডস-এর উত্তরে।
সে সময় কোনো এক ফ্লেমিশ পরিবার যারা ফর্নহাম সেন্ট মার্টিন গ্রাম থেকে পালিয়ে এসে উলপিট গ্রামের এ নেকড়েরগুহায় আশ্রয় নেয়। দিনের পর দিন অন্ধকারে ও খাদ্যাভাবে থাকার কারণে তারা মারা গেলেও এ দুই শিশু বেঁচে যায়। এদের গায়ের ফ্লেমিশ জামাকাপড় উলপিটবাসীদের কাছে উদ্ভট লেগেছিল।
তারা শিশুদের মাতৃভাষা ফ্লেমিশ বুঝতে পারেনি। শিশুদের গায়ের সবুজ রং খাদ্যাভাবে তৈরি হওয়া ক্লোরোসিস-এর কারণে বলে মনে করা হয়। সুষম খাদ্য গ্রহণে দেহে ক্লোরোফিল নিঃসরণের মাত্রা কমে ঠিক হয়ে যায়। শিশুদের বেলায়ও সেটাই ঘটেছিল।
এ দুই শিশুর ঘটনা বিভিন্নভাবে ইংরেজি সাহিত্যে এসেছে। উলপিটের সবুজ শিশুদের নিয়ে যেসব গল্প, কবিতা লেখা হয়েছে তার মধ্যে ইংরেজ কবি হার্বার্ড রিড-এর (১৯৩১), 'ইংলিশ প্রোস স্টাইল' (১৯৩১) ও 'দ্য গ্রিন চাইল্ড' (১৯৩৪) এবং কেভিন ক্রসলি-এর 'দ্য গ্রিন গার্ল' (১৯৯৪) অন্যতম।
কিছু ব্যাখ্যা সত্ত্বেও এ দুই রহস্যময় শিশুর ঘটনা আজও রহস্যই রয়ে গেছে। তাদের নিয়ে সাড়া পড়ার মূল কারণ তাদের গায়ের সবুজ রং। সাধারণভাবে ভিনগ্রহের বাসিন্দাদের গায়ের রং সবুজ বলে ধারণা করা হয়।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।