- হোম
- >
- ধর্ম ও জীবন
- >
- দেখে এলাম এক নতুন ধর্মের উৎপত্তি
দেখে এলাম এক নতুন ধর্মের উৎপত্তি
এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। অনাধীকাল ধরে বিভিন্ন সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব ধর্মে বিশ্বাস করে আসছে। মুসলমান সম্প্রদায় ইসলাম, হিন্দুরা সনাতন ধর্মে, তেমনি অন্যান্যরা স্ব-স্ব ধর্মে বিশ্বাসী। কবে কোথা থেকে এই সকল ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে তা অনেকেই বলতে পারবে না। তবে বিশ্বের প্রায় সকল মানুষই কোন না কোন ধর্মে বিশ্বাসী, এটাই বাস্তবতা, সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়তবা হাতে গোনা কিছু রয়েছে। যারা বস্তুবাদে বিশ্বাস করে, ধর্ম বলতে কিছু নেই, এটাই তাদের দাবি। কিন্তু করে একটি ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছে, এই বিষয়টি একটি নতুন অভিজ্ঞতারই অংশ।
বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সঙস্থা শারি’র উদ্যোগে এবং দাতা সংস্থা মিসেরিয়র এর সহযোগিতায় ভারতের কর্নাটক ও অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যে সফরে গেলে এই নতুন অভিজ্ঞতার জন্ম হয়। ঢাকা থেকে রওনা হয়ে সন্ধ্যায় কলকাতা এয়ারপোর্ট হয়ে রাগ দেড়টায় ব্যাঙ্গালোর এয়ারপোর্টে পৌঁছলে সেখানের এনজিও ‘রেডস’ আমাদের নিয়ে যায় টুমকুর জেলার তাদের রেস্ট হাউসে। সেখানে রাত্রি যাপনের পরের দিন চুমকুরের দলিত অশ্রমে গেলে এই নতুন অভিজ্ঞতার জন্ম হয়। সেখানে ওই এলাকার দলিতদের জন্য তৈরী করা হয়েছে এই আশ্রম। এই আশ্রমের নাম দেয়া হয়েছে ভূ-শক্তি কেন্দ্র। এই ভূ-শক্তি কেন্দ্র থেকেই পরিচালিত হয় টুমকুর জেলার দলিতদের উন্নয়ন কার্যক্রম। রেডস সংস্থার কর্ণধার এম.সি রাজ এবং জ্যোতি। যারা টুমকুরের দলিত জনগোষ্ঠীর কাছে দেবতা। এরা টুমকুরে দলিতদের নিয়ে দীর্ঘ ২০ বছর যাবত কাজ করছে। এই সংস্থার কাজের ফলেই ওই এলাকার দলিতরা জমি পেয়েছে। চাকুরীর সুযোগ পাচ্ছে, বিভিন্ন দপ্তরে কোটা বরাদ্দ পাচ্ছে।
এখানের দলিতদের জন্য সবচেয়ে ব্যতিক্রমী বিষয় হ’ল তারা একটি নতুন ধর্মের জন্ম দিয়েছে। তাদের ধারনা ভূ-শক্তি হ’ল; মাটি ফুঁড়ে যে শক্তি আসে। তাদের এই আন্দোলনেও ভূ-শক্তি সাহস জোগাচ্ছে। এ জন্যই তারা নিজেরাও ভূ-শক্তির নামেই একটি ধর্মের জন্ম দিয়েছে। তৈরী করেছে মূর্তি। “মায়ের ঘাড়ে শিশু”। এই হ’ল তাদের পূজার মূর্তি। এই মূর্তি ছাড়া অন্য কোন মূর্তিতে তারা বিশ্বাসী নয়। এমনকি কোন মন্দিরেও তারা যায় না। এই ভূ-শক্তি কেন্দ্রই তাদের মন্দির। কোন ধর্মীয় আচার আচরণের সাথে তারা সম্পৃক্ত হয়না। ওই এলাকার দলিত শ্রেণী এম.সি রাজকে বাবুজী এবং জ্যেতিকে আম্মাজী বলে সম্বোধন করে। যে কোন কাজ শুরু করার পূর্বে তারা ওই ভূ-শক্তির পূজা করে নেয়। সেখানে ধূপের ধোয়া দিয়ে পূজার্চনা করা হয়। করা হয় নিজেদের তৈরী পূজার গান এবং পরিশেষে নিমপাতার ওপর পোড়া রুটির টুকরো দিয়ে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এই ধর্মাবলম্বীরা মনে করে ভূ-শক্তিই তাদের এই অবস্থার পরিবর্তন করেছে।
যেহেতু এই এলাকার উচ্চ বর্ণের মানুষেরা নিুবর্ণের মানুষদের ঘুণার চোখে দেখে। কোন মন্দিরে নিুবর্ণের দলিতদের ঢুকতে দেয়া হয়না। ধর্মী কোন আচার আচরনের সাথে তাদের মিশতে দেয়া হয়না। উচ্চবর্ণের মানুষ যেখানে থাকে, সেই সকল বাড়ির উঠান থেকেও এই নিুবর্ণের দলিত মানুষদের হাঁটতে দেয়া হয়না। একত্রে খাওয়ার কথাতো চিন্তাই করা যায়না। এ সকল কারণে দলিত সম্প্রদায় বাধ্য হয়ে নতুন ধর্মের অবতারনা করেছে।
এই ভূ-শক্তি কেন্দ্রে রয়েছে বিশালাকারের অঅবাসস্থল, হলরুম, ডাইনিং সহ সৌন্দর্য মন্ডিত পরিবশ। কথা হয় রেডস সংস্থার চেয়ারম্যান ও ভূ-শক্তি কেন্দ্রের মূল উদ্যোক্তা এম.সি রাজের সাথে। বংশগতভাবেই তিনি সুইপার সম্প্রদায়ের। দলিত শ্রেণীর ভাগ্যোন্নয়নে তিনি এ কাজ শুরু করেন বলে জানান। তার ধারনা সকল ধর্মের মানুষই তাদের ঘৃণার চোখে দেখে, আর তাইতো এই নতুন ধর্মের অবতারনা। তাদের রয়েছে একটি ধর্মীয় পোষাকও।নীল রংয়ের পাজামা এবং কালো রংয়ের জামা, এটি তাদের ইউনিফর্ম। এই ইউনিফর্মই পরিচয় করিয়ে দেয় ভূ-শক্তি কেন্দ্রের পুরুষ সদস্য এরা। তেমনিভাবে নারীদের জন্য রয়েছে কালো রংয়ের শাড়ি এবং নীল টিপ।
এখানাকার দলিত সম্প্রদায়ের নেত্রী জয়মা। আসল নাম সবিতা রানী। পরিচিত জয়মা নামেই। সারাদিন থাকে দলিত এলাকায়। তার কাছে ব্যাঙ্গালোর শহরের মন্দির সম্পর্কে কোঁজ নিতে গেলে জানালেন, তারা এখানকার কোন মন্দিরে যায়না। শুধু তাই-ই নয়, তার ভাষ্যমতে এখানে মন্দিরও নেই। অথচঃ বাঙ্গালোর হ’ল মন্দিরের শহর। উচ্চ বর্ণের মানুষ তাদেরকে মন্দিরে গ্রহণ না করায় এই ক্ষোভ। জয়মা আরও বরলেন, এখানকার দলিত শ্রেণী তাদের ভূ-শক্তি কেন্দ্র ছাড়া আর কোন ধর্ম বা মন্দিরে বিশ্বাস করে না।
টুমকুরের এই ঘটনা দেখে মনে হ’ল; সেই শরৎচন্দ্রের “সমুদ্রে সাইক্লোনের” কথা। তিনি ঝড় দেখে বলেছিলেন ‘ভগবান তুমি চোখ দু’টি দিয়েছিলে আজ তা সার্থক করলে।’ আমারও টুমকুরে ভূ-শক্তির নতুন ধর্মের উৎপত্তি দেখে বলতে ইচ্ছে করছে, “ ‘ভগবান তুমি চোখ দু’টি দিয়েছিলে আজ তা সার্থক হ’ল।”
(রঞ্জন বকসী নুপু, শারি’র ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর)
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।