জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করে সরকার উল্টো কথা বলছে: সেলিম
তানজিল হাসনাত
প্রিন্টঅঅ-অ+
ছবি : শাহ্ রাতুল
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, আজ ক্ষুদার্ত মানুষের পেটে ভাত নেই। শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে এর সম্পূর্ণ দায়ভার সরকারের। যেখানে অল্পকিছু মানুষ টাকা জমিয়ে ধনী হচ্ছে সেখানে খেটে খাওয়া মানুষের দেখার মত লোক নেই। মুক্তিযুদ্ধের ৪৩ বছর পার হয়ে গেলেও আজ আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে পারিনি।
অরাজক, অবরুদ্ধ ও সহিংস পরিস্থিতি থেকে দেশ ও জীবন রক্ষা, জঙ্গীবাদ নির্মূল এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দাবিতে শনিবার রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
সেলিম বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ১০০ বার বলেছে যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করবে। কিন্তু আজ বর্তমান সরকার তার উল্টো কথা বলছে। তারা বলছে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করলে তারা একটি জঙ্গি সংগঠনে পরিনত হবে অথচ বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার জন্য জামায়াতে ইসলাম দায়ী। তারা রেলে নাশকতা চালাচ্ছে, বাসে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করছে। প্রত্যেকদিন এই হরতাল অবরোধের কারণে প্রায় ২০০ কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে। যা আমাদের ১ বছরের বাজেটের ৪ ভাগের এক ভাগ। আর আমাদের জিডিবির হার ২ শতাংশ কমে আসবে যদি এইভাবে চলতে থাকে। এটা হচ্ছে খালেদার একটি ফাঁদ। যেখানে খালেদা দেখাতে পারবে এই সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে। এই সহিংসতা কেবল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের মাধ্যমেই সম্ভব।
সমাবেশে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ বলেন, আমাদের রপ্তানিযোগ্য পন্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পন্য হচ্ছে গার্মেন্ট শিল্প। ৪০ লক্ষ শ্রমিক এই গার্মেন্ট শিল্পে কাজ করে। এই শিল্পে আর উৎপাদন হচ্ছে না। বিদেশী ক্রেতারাও আসছে না বাংলাদেশে। কারণ এই ধংসযোগ্য রাজনীতি। বড়লোকে বড়লোকে ঝগড়া করছে আর গরীব মার খাচ্ছে। তাই আজ সকল গরীবদের একজোট হয়ে এই অপরাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ এর কার্যকরি সভাপতি লেখক গোলাম কিবরিয়া পিনু বলেন, আমরা মনে করি যারা মানুষ পুড়িয়ে মারছে তারা গন্ডার। তারা কেবল এক চোখ দিয়ে কিভাবে ক্ষমতায় আসবে তা ভাবছে কিন্তু তারা দেখছে না কি করে মানুষ মারা যাচ্ছে। যারা আন্দোলন করে না সাধারণ সেই মানুষগুলিই মারা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার বলেন, আমাদের দেশ গণতন্ত্র নিয়ে আজ ব্যবসা চলছে। এক মন্ত্রী বলেন ৭ দিনের মধ্যে সব পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু ৭ দিন পার হয়ে আজ ১৪ দিনেও সমস্যার সমাধান হয়নি। আমরা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাবেরী গায়েন বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ভালোভাবে হয়নি। সে সময় জামায়াত-বিএনপি জোট এক নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছিল। ঠিক তার এক বছর পর জামায়াত ও বিএনপি জোট ঠিক একই ধরণের তাণ্ডব চালাচ্ছে। একদল তাদের বর্ষপূর্তী উদযাপন করছে আর অন্যদল পেট্রোল দিয়ে মানুষ হত্যা করছে।
তিনি বলেন, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও এর ১৯ দিন পার গিয়েছে তবুও আমরা এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারছি না। তাহলে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা সম্পূর্ণ ব্যর্থ? তারা কেন তাদের দায়ভার স্বীকার করছে না।
সমাবেশে কৃষিবীদ উন্নয়নের নেতা অঞ্জন মজুমদার বলেন, সারাদেশের কৃষকরা অবরোধ ও জ্বালাও-পোড়াও এর জন্য তাদের উৎপাদিত কৃষিপন্য বাজারে আনতে পারছে না। এর ফলে তারা ফসল উৎপাদনের সময় নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এভাবে চলতে থাকলে তাদের আত্মহত্যা ছাড়া উপায় থাকবে না।
দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান।
সমাবেশের শুরুতেই দলীয় গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করেন “আমরা মানুষের জয়গান গাই গেয়ে যাই, আমরা জীবনের জয়গান গাই”, “ওরা বোমাবাজ, ওরা জঙ্গী”, “হুঁশিয়ার ও সাথী কিষাণ মজদুর ভাইসব হুঁশিয়ার” প্রভৃতি গান। এরপর সূচনা বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের ছোট্ট বন্ধু সুরম্য। তিনি দেশব্যাপী বোমাবাজির ফলে যেসব শিশু মারা যাচ্ছে ও আহত হচ্ছে তাদের প্রতি করা এ অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদ জানান। এরপর বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক। তিনি আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিতের আহবান জানান।
এছাড়া অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের নেতা আদনান রিয়াদ, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা মোতালেব হোসেন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশিদ, প্রাইভেট কার ড্রাইভার্স ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হযরত আলী, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি অধ্যাপক এ এন রাশেদা, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান তারেক চৌধুরী সোহেল, ডক্টরস ফর হেল্থ এন্ড এনভায়রনমেন্ট-এর নেতা ডা. রকিবুল ইসলাম, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম খান এবং বিভিন্ন প্রগতিশীল গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বক্তব্য ছাড়াও, প্রতিবাদ সমাবেশে একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন কাজী সামিউল আজিজ, বদরুল আহসান খান, তামান্না ডেইজি, উদীচীর সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেন। সমাবেশে প্রতিবাদী পথচিত্র বা ট্রাফিক আর্ট করেন চিত্রশিল্পীরা। প্রতিবাদ সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন।
প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজকদের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, প্রগতি লেখক সংঘ, কৃষিবিদ ইউনিয়ন, ডক্টরস ফর হেল্থ এন্ড এনভায়রনমেন্ট, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি, রণেশ দাশগুপ্ত চলচ্চিত্র সংসদ, ইঞ্জিনিয়ার এ্যান্ড আর্কিটেক্ট ফর এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বিপ্লবীদের কথা, প্রাইভেট কার ড্রাইভার্স ইউনিয়ন, ট্রাক ড্রাইভার্স এসোসিয়েশন প্রভৃতি গণসংগঠন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।