ঝিনাইদহ জেলার সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে
ঝিনাইদহ ডিশ ও স্যাটেলাইট চ্যানেলের প্রভাব ও পুঁজি সংকটের কারণে জেলার সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জেলার ৬ উপজেলায় ১৭টি সিনেমা হলের মধ্যে এখন মাত্র ৩টিতে ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে। বন্ধ ১৩ টি সিনেমা হল ভেঙে বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে এই শিল্পের সঙ্গে প্রায় ৩০০ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ৫টি সিনেমা হল ছিল। এর মধ্যে ১৯৫৫ সালে নির্মিত ছবিঘর ও ১৯৭০ সালে তৈরি প্রিয়া সিনেমা হল সবচেয়ে বেশি পুরাতন হিসেবে চালু রয়েছে। এরপর রমরমা বাজার ধরতে আশির দশকে গড়ে ওঠে চান্দা, হাটগোপালপুরে হ্যাপি ও ৯০ দশকে নির্মিত ডাকবাংলা বাজারের স্বর্ণালী সিনেমা হল ২০০৯সালে বন্ধ হয়ে যায়। জেলার অন্যান্য সিনেমা হলের মধ্যে রয়েছে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার গোধূলি, মল্লিকা, মৌসুমী, প্রিয়াংকা ও রংমহল। কালীগঞ্জ উপজেলায় শ্রীলক্ষী ও ছন্দা সিনেমা হল দুইটি কোন রকমে টিকে আছে। কোটচাঁদপুর উপজেলার একমাত্র লাভলী সিনেমা হলটি ২১ বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে। ভবনটি ভেঙে সেখানে বাড়িঘর তৈরি করা হয়েছে। মহেশপুর উপজেলার বিউটি ও দুলারী সিনেমা হল ৪ বছরে আগে দর্শক সংকটে বন্ধ হয়। এ ছাড়া শৈলকুপা উপজেলায় নুপুর ও কিছুক্ষণ সিনেমা হল দুইটি বন্ধ হয়েছে ৮ বছর আগে।
৪৫ বছর ধরে সিনেমা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ঝিনাইদহ শহরের প্রিয়া হলের ম্যানেজার লুৎফর রহমান লুতু জানান, মূলত নায়ক- নায়িকা সংকটের কারণে সিনেমা হলে দর্শকরা আসেন না।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের একমাত্র নায়ক সাকিব খান ও দুই নায়িকা সাহারা এবং অপু বিশ্বাসের ছবি ছাড়া দর্শকরা কারো ছবি দেখেন না। নায়ক মান্নার মারা যাওয়ার পর এই ব্যবসা আরো লাঠে উঠেছে বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে আর্টিস্টরা ভালভাবে কথাই বলতে পারেন না। এ জন্য দর্শকরা সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ডিপজলের ছবি এখন আর চলে না।
তিনি জানান, সিনেমা ব্যবসা ফ্লপ হওয়ার পেছনে প্রথমত দায়ী অশ্লীল ছবি। এরপর রয়েছে আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব ও নতুন নতুন তথ্য প্রযুক্তির দৌরাত্ম্য। আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে একটি পরিবার ঘরে বসেই সব ছবি দেখতে পাচ্ছেন। তারা কি আর সিনেমা হলে আসেন, প্রশ্ন রাখেন প্রবীণ সিনেমা ব্যক্তিত্ব লুতু মিয়া।
তিনি জানান, ঝিনাইদহ জেলায় ১৭ টি সিনেমা হল ছিল। এখন ঝিনাইদহের দুইটি ও কালীগঞ্জ উপজেলা শহরে একটি মিলে সর্বমোট ৩টি সিনেমা হল চালু আছে, তাও লোকসান দিয়ে।
ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী ছবিঘর সিনেমা হলের কর্মচারী রওশন আলী জানান, ১০ বছর আগেও সিনেমা হলে দর্শক আসতেন। কিন্তু এখন ভাল ছবি না থাকার কারণে তারা আসেন না। ঘরে বসে তারা পাঁচমিশালী বিনোদনের পাশাপাশি অন্য দেশের ভাল ছবি দেখতে পাচ্ছেন।
ঝিনাইদহের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও অংকুর নাট্যএকাডেমির পরিচালক নাজিম উদ্দীন জুলিয়াস জানান, আকাশ সংস্কৃতির পাশাপাশি দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পে অশ্লীল ছবির যে ভয়াবহ আঘাত হানে, মূলত সেখান থেকেই এই শিল্পের বারোটা বাজা শুরু হয়।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।