- হোম
- >
- শিল্প-সাহিত্য
- >
- জেরেমির শখ
জেরেমির শখ
কোনো এক সময়ে জেরেমি ফিসার নামের এক ব্যাঙ একটি পুরনো ঝিলের ধারে বাস করত।
ঝিলটা ছিল বড় বড় ঘাস, কচু ও নানান রকম ঝোপঝাড় দিয়ে ঘেরা।স্যাঁতসেঁতে ভেজা মাটিতে থাকতে জেরেমি পছন্দ করত। পা দুটো সব সময় ভিজিয়ে রাখতে তার ভালো লাগত।
ফিসার বেশি খুশি হতো বৃষ্টি নামলে। বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা যখন ঝিলের পানিতে পড়ত জেরেমি ফিসার তখন মনের আনন্দে ঘ্যাগোর ঘ্যাং শব্দে গান জুড়ে দিত।
এবার বষাকালের শুরুতেই ফিসার ভাবল, অনেক দিন বন্ধুদের দাওয়াত দেওয়া হয় না। এবার যদি সাতটা পুটি মাছ একসাথে ধরতে পারি তাহলে অবশ্যই ওদের দাওয়াত দেব। মজা করে দিনারটা সারা যাবে। একথা ভেবে সে আগে ছিপ ও পিঁপড়ের ডিম জোগাড় করে রাখল। ছিপ ফেলার জন্য জায়গার অভাব হবে না।
ঝিলে প্রচুর শাপলা ফুল ফুটেছে। একতা থেকে আরেকটা পাতায় লাফ দিয়ে ঝিলের মধ্যে পযন্ত যাওয়া যাবে। কোনো চিন্তা নেই। জেরেমি ফিসার বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।
পরদিন ভোরবেলা ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। জেরেমি তার ছিপ ও মাছ রাখার খালুইটা নিয়ে পুকুর পাড়ে গেল। ঝিলের দিকে তাকিয়ে সে স্থির করল ঠিক কোন জায়গাটায় মাছ ধরতে বসবে।
জেরেমি আপন মনেই বলল, এই জায়গাটাই আমার জন্য উপযুক্ত হবে। আমার সে সুন্দর ছিপ। একটা মাছও ফসকাতে পারবে না। ঝমঝম করে বৃষ্টি জেরেমির মাথা ও পিঠের ওপর পড়তে লাগল।
বৃষ্টির শব্দের সাথে জেরেমি মনের আনন্দে গান জুড়ে দিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় দুপুর পেরিয়ে গেলেও দু-একটি ছোট মাছ ছাড়া কিছুই ধরতে পারেনি। জেরেমি তার জন্য অবশ্য দুঃখিত নয়। সে বুঝতে পেরেছে তার গান আর বৃষ্টির শব্দে মাছ শুলো পালিয়েছে। যাকগে জেরেমি আপন মনে বলল, আনন্দের জন্য খাওয়া ত্যাগ করা যায়। ঝুড়িতে যা আছে ওই দিয়েই চলে যাবে।
জেরেমি তার ঝুড়ির মধ্য খেকে প্রজাপতির স্যান্ডুইচ আর টিকটিকির ডিমের ফ্রাই খেতে বসল। এমন সময় একটা পানি পোকা দোড়ে এসে যে পদ্মপাতায় জেরেমি বসেছিল ওর তলায় মাথা দিয়ে ঢু মারল। জেরেমি পা দুটো গুছিয়ে খাওয়ায় মন দিল। না, এবার অনেক গুলো পোকা এসে একসাথে গুঁতাগুঁতি করতে লাগল। জেরেমি চিন্তা করে দেখল, যদি এভাবে এরা করতে থাকে, তবে নিঘাত জলে পড়তে হবে, তার চেয়ে এখনই এ স্থান ত্যাগ করাই ভালো ।
জেরেমি তার ছিপ-ঝুড়ি হাতে নিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ঝিলের কিনারায় গেল । আরেকটা পাতার উপর বসে ছিপ ফেলল । কিছুক্ষণের মধ্যে ছিপে জোরে টান পড়ল । জেরেমি পেরেছি পেয়েছি বলে চিৎকার করে ছিপ টেনে তুলল । কি আশ্চয । একটা বড় বোয়াল মাছ এসে জেরেমির কোলের উপরে পড়ল । সে দু হাত বাড়িয়ে ওটাকে ধরার আগেই লেজের একটা বাড়ি দিয়ে ওটা জলে লাফিয়ে পড়ল ।আহত জেরেমিও পানিতে পড়ে একেবারে তলিয়ে গেল ।
জেরেমি ডুব সাঁতার দিয়ে ঝিলের মাঝখানে উঠল । চারদিকে তাকিয়ে দেখল অসংখ্য পুঁটি আর চেলা মাছ সাঁতার কাটছে । ওকে ভেসে উঠতে দেখে সবাই হেসে উঠল । একটা কচ্ছপ কাছে ভেসে এলো । বলল, মি. জেরেমি, এখান থেকে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়াই মঙ্গল হবে। বোয়াল যদি দেখতে পায় কামড়ে আপনার পা দুটো ছিড়ে ফেলবে ।
জেরেমি ভয় পেল । তাড়াতাড়ি সাঁতরে তীরে গিয়ে উঠল । নিজের ঘরে এসে হাঁফ ছাড়ল । দুঃখে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল । তার এত শখের ছিপটাও গেল ।মাছও পেল না ।
সেই দিন সন্ধ্যার পরে জেরেমির কয়েক বন্ধু বেড়াতে এলো । ইঁদুর বুদ্ধি করে প্রচুর জেলি ও পনির এনেছে । বিড়াল এনেছে বড় দেখে ইলিশ মাছ । বিড়াল জেরেমির মুখটা লক্ষ্য করে বলল, ভাই জেরেমি, মুখটা এত বিষণ্ণ কেন? জেরেমি লজ্জায় মাথা নিচু করে রইল । এবার ইঁদুর জেরেমির গলা ধরে আদর করে বলল, আমারা তোমার বন্ধু । আমাদের বলবে না কি হয়েছে?
দুঃখের সাথে বলল জেরেমি, বলতে লজ্জায় মাথা কাটা যাছে । তোমাদের দাওয়াত দেব মনে করে মাছ ধরতে গেলাম । মাছ তো পেলামই না, শুধু অপমানিত হয়ে ফিরে এলাম । তারপর জেরেমি সব ঘটনা খুলে বলল ।
সব কথা শুনে বিড়াল সান্ত্বনা দিল । বলল, দুঃখ কিসের? যা আছে তাই দিয়েই মনের আনন্দে খেতে পারব । বন্ধু খাওয়াটা বড় কিছু নয় । মনে আনন্দ পাওয়াটাই সব ।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।