রঙ্কি-এলিয়ট তাণ্ডবে শ্রীলঙ্কার হার
ডানেডিনে সিরিজের পঞ্চম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ১০৮ রানে হারিয়ে সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড। সবুজ উইকেটে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক লাহিরু থিরিমান্নে। শুরুতে দারুণ সুইংও পেলেন লঙ্কান পেসাররা।
শৃঙ্খলিত বোলিংয়ে ২০ ওভারে ৯৩ রান তুলতেই নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেট হারায়! তারপর? এর পরের গল্পটা বলতে গেলে নিশ্চিত লঙ্কানদের দীর্ঘ একটা শ্বাস বেরিয়ে আসবে বুক চিরে! সেই দীর্ঘশ্বাসের নাম লুক রনকি ও গ্র্যান্ট এলিয়ট। দুই কিউই ব্যাটসম্যানের ষষ্ঠ উইকেট তাণ্ডবেই শ্রীলঙ্কাকে পরাজয় বরণ করতে হয়।
বিস্ময়, কেবলই বিস্ময় উপহার দিলেন রনকি-এলিয়ট। রনকিই এ বিস্ময়ের মূল কারিগর। ২০০৮-এর জানুয়ারিতে অভিষেক হলেও দলে নিয়মিত হয়েছেন মূলত ২০১৩ সাল থেকে। ৩৫ ম্যাচে (এই ওয়ানডে বাদে) ছিল না একটি সেঞ্চুরিও। আজ ব্যাটিংয়ে নামলেন দলের বিপর্যয়ে। এ ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে আবির্ভূত হলেন খুনে মেজাজে। শ্রীলঙ্কার বোলারদের যেভাবে কচুকাটা করলেন, লঙ্কানদের কাছে তা সত্যি ‘মর্মান্তিক’! রনকি ৩৮ বলে করলেন ফিফটি, ৭৪ বলে এল প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি আর ১৫০ রানে পৌঁছাতে লাগল ৯২ বল। শেষমেশ ৯৯ বলে ১৭০ রানে অপরাজিত। ইনিংস সাজিয়েছিলেন ১৪ চার আর নয় ছক্কায়। রনকির তুলনায় কিছুটা ‘শান্ত’ ছিলেন এলিয়ট। এ ডানহাতি অপরাজিত ছিলেন ৯৬ বলে ১০৪ রান করে।
এলিয়ট-রনকির অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে ১৮০ বলে এল ২৬৭ রান। ওয়ানডেতে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে এটিই সর্বোচ্চ রান। আর নিউজিল্যান্ডের ওয়ানডে ইতিহাসে যেকোনো উইকেটে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আর ৭ রান হলেই ছুঁতে পারত ২০০৮ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মার্শাল-ম্যাককালামের উদ্বোধনী জুটিতে করা কিউইদের সর্বোচ্চ ২৭৪ রানের রেকর্ডটি। এলিয়ট-রনকির বীরত্বে নিউজিল্যান্ড নির্ধারিত ৫০ ওভারে তুলল ৫ উইকেটে ৩৬০ রান। শেষ ১০ ওভারে এসেছে ১২২ রান। কিউইদের হাতে সবচেয়ে নিগৃহীত হয়েছেন সুরঙ্গা লাকমল। ১০ ওভারে দিয়েছেন ৯৩ রান। লাকমলের করা ৪৮তম ওভারে রনকি একাই তুলেছেন ২২ রান!
৩৬১ রানের বিরাট লক্ষ্যে খেলতে নেমে শ্রীলঙ্কার শুরুটা বেশ ভালোই হয়েছিল। থিরিমান্নে-তিলকরত্নে দিলশানের উদ্বোধনী জুটিতে এল ৯৩ রান। এলিয়টের বলে ৪৫ রানে থিরিমান্নে ফিরলেও দিলশান ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কুমার সাঙ্গাকারা (৯) ও মাহেলা জয়াবর্ধনে (৩০) খানিকটা সঙ্গও দিয়েছিলেন দিলশানকে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। ওই ‘সামান্য’ সঙ্গ পেয়েই দিলশান তুলে নিলেন ২০তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। মিচেল ম্যাকলেনাহানের বলে ফেরার আগে দিলশানের সংগ্রহ ১১৬ রান। দিলশান ফিরে যাওয়ার পরই ত্বরান্বিত হয় শ্রীলঙ্কার পরাজয়। ৩৬.১ ওভারে ৩ উইকেটে ২১৫ থেকে ৪৩.৪ ওভারে ২৫২ রানে অলআউট। শেষ ৩৭ রানেই ৭ উইকেটের পতন। কিউইদের পক্ষে ট্রেন্ট বোল্ট নিয়েছেন সর্বোচ্চ ৪ উইকেট।
দুর্দান্ত ইনিংসের জন্য ম্যাচসেরা রনকিকে দেওয়াই যেত। কিন্তু ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি ও বল হাতে ২ উইকেট নেওয়া এলিয়টকেও ম্যাচসেরার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার উপায় ছিল না। অতঃপর দুজনকেই দেওয়া হলো ম্যাচসেরার পুরস্কার। ষষ্ঠ উইকেটে যে অবিশ্বাস্য দৃশ্যপটের রচনা করলেন, তাতে নিঃসন্দেহে দুজনই ম্যাচের নায়ক!
তথ্যসূত্র: ক্রিকইনফো, এএফপি।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।