‘যারা অবরোধ-হরতাল দেয় তাগর তো ভাতের চিন্তা নাই’!!
‘যারা অবরোধ-হরতাল দেয় তাগর তো বাড়ি-গাড়ি সবই আছে। তাগর তো ভাত-কাপড়ের চিন্তা নাই। তাই মন চাইলেই অবরোধ ও হরতাল দেয়। কিন্তু আমরা তো গরিব মানুষ। সারাক্ষণ পেটের চিন্তা করতে হয়। টানা ১৫ দিন ধরে চলে অবরোধ ও হরতাল, ঢাকা থাইক্যা চাইল-ডাইলের কোনো ট্রাক আসতাছে না। তাই কোনো কাজকামও নাই। কাজ না থাকলে মালিক তো আমগরে টেহা দিব না। আমগর মতো গরিব মাইনষের সংসার কেমনে চলব, তা অবরোধ ও হরতাল যারা ডাকে তারা বুঝে না।
২০ দলের ডাকা টানা অবরোধ ১৫ দিন পার হওয়ার পর গত, সোমবার বিকালে এভাবেই এ প্রতিবেদকে ক্ষোভ প্রকাশ করে কথাগুলো বলছিলেন দিনমজুর মো. আউয়াল হোসেন (৩৫)। তিনি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পৌর শহরের গোডাউন রোড়ের চাউলের আড়ৎতে কয়েকটি দোকানের ট্রাক থেকে বাস্তা নামানুর শ্রমিকের কাজ করেন। আউয়াল হোসেন জানান, সারা দিন কাজ করে মালিক যে মজুরি দেন তা দিয়েই কোনোমতে ৫জনের সংসার চালান। স্বাভাবিক কর্মদিবসে ৪০০ থেকে ৫’শত টাকা মজুরি পেলেও রবিবার বাজারের দিন হলেও কোনো মজুরি পাননি সে।
অবরোধ ও হরতালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ও দুর্ভোগে পড়েন পরিবহন খাতের কর্মী ও যাত্রীরা। তাঁদেরই একজন মানিক (২৮)। বাড়ি রামগঞ্জ উপজেলায়। ঢাকা-রামগঞ্জ মহাসড়কে চলাচলকারী আল বারাকা পরিবহনের তিনি একজন চালকের সহকারী। অবরোধ ও হরতালে বাস চলাচল বন্ধ। তাই রামগঞ্জ বাস টার্মিনালে বসে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন। সে বলেন, ‘হরতালে গত মাসসহ ৫ দিন গাড়ি চলে নাই। অহন আবার চলছে টানা অবরোধ। ফলে ১৫দিন গাড়ি বন্ধ। গাড়ি বন্ধ থাকলে মালিক তো খোরাকির টাকা দেয় না। এভাবে চললে পাগল হইয়া যামু। আমরা এমন অবরোধ ও হরতাল চাই না, যেই অবরোধ ও হরতালে আমরার কামাই-রোজগার বন্ধ হইয়া যায়। বউ পোলাপান লইয়া খাইয়া না খাইয়া থাকতে হয়। বলতে পারেন কী কবে এই অবরোধ ও হরতাল বন্ধ ঘোষনা হবে। এদিকে গাড়ী চালকদের আয়-রোজগার না থাকায় খেয়ে না খেয়েই চলছে তাদের পরিবার। এক বেলা খেলে অন্য বেলায় উপোস থাকতে হয়। দেশের সহিংস রাজনীতির কারনে অলসের কারণে জমানো থাকা সামান্য সঞ্চয়টুকু শেষ। অভাব-অনটনে কী ভাবে চলবে আগামী দিনগুলো- এমন পরিস্থিতিতে দুঃচিন্তায় বিপর্যস্ত হয়ে ভালো নেই তারা। রামগঞ্জ উপজেলার এক পরিবহন মালিক ইয়াছিন হোসেন বলেন, ‘গাড়ি কিনতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। এভাবে দিনের পর দিন গাড়ি বন্ধ থাকলে ব্যাংকের ঋণ শোধ করব কীভাবে? এমন অবস্থার অবসান চাই।’
জেলা যুবলীগের সদস্য ও রামগঞ্জ পৌর শ্রমিক লীগ নেতা ইমন হায়দার বলেন, অবরোধ ও হরতালে সাধারণ মানুষের নৈতিক সমর্থন নেই। কিন্তু অবরোধ ও হরতালে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতার কারণে পরিবহনের শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। গাড়ি চালকরা গত ১৪-১৫ দিন থেকে বেকার। কোন কাজ-কর্ম নেই। খুব খারাপ অবস্থায় আছে ওরা। সাধারণ মানুষের বিষয়টি বিরোধীদলের নেত্রীর বোঝা উচিত।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।