লালমনিরহাটে তীব্র শীতে অসহায় দিন কাটাচ্ছেন ছিন্নমূল জনগোষ্ঠী
তীব্র শীতের সঙ্গে হিমেল হাওয়া বইছে সর্ব উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে। শীত বস্ত্রের অভাবে অসহায় জীবন-যাপন করছে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়া ছিন্নমূল ও নদী তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ। এসব শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারি সাহায্য সহযোগিতার পাশাপাশি সমাজের বৃত্তবানদের এগিয়ে আসার প্রত্যাশা ভুক্তভোগী অসহায় মানুষজনদের।
ঘন কুয়াশা আর ঠাণ্ডা বাতাশে সীমান্তবর্তী লালমনিরহাটে শীতের তীব্রতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ জেলায় গত দুই দিনে সূর্যের দেখা মেলেনি। ফলে সড়ক পথে গাড়ি গুলিকে দিনের বেলায় হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
এবার প্রথম দফা শৈত্য প্রবাহেই কাবু হয়ে পড়েছে ছিন্নমূল পরিবারসহ তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলের দরিদ্র্য পরিবার গুলো। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্টের শিকার হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। সূযের তাপ না পাওয়ায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে শীতার্ত মানুষ। শীতের প্রকোপ থেকে রেহাই নেই পশু পাখিদেরও।
আয় কমে গেছে দিন মুজুরদের। হতদরিদ্র্য এ সকল শীতার্ত মানুষের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারি সাহায্য। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরকারি বরাদ্দ পাওয়া গেছে একবারে অপ্রতুল।
গ্রামাঞ্চলের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষজন গরম কাপড়ের অভাবে নিদারুণ কষ্টের দিন কাটাছে। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে শিশু, বৃদ্ধ ও শ্রমজীবি খেটে খাওয়া মানুষজন। এসব এলাকার ছিন্নমূল মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। অস্বাভাবিক ঠান্ডায় জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যেও মন্দাভাব দেখা দিয়েছে।
জেলা শহরে ঠান্ডা নিবারণের জন্য পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই তা কিনতে পারছে না। সব মিলিয়ে শীত ও হিমেল হাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এ বছর জেলায় অপ্রতুল শীতবস্ত্র আসায় জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয়-স্বজন ছাড়া তা প্রকৃত শীতার্ত মানুষের ভাগ্যে জুটেনি।
আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় সারাদিনেও সূর্য্যরে মূখ দেখা যায়নি। এ কারণে বিপনী দোকানগুলোতে দিনের বেলায় লাইট জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। এ দিকে শৈত প্রবাহে বৃদ্ধ ও শিশুরা সর্দ্দিজ্বর, আমাশয়, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, এজমা সহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পাড়ে কনকনে বাতাসে চরাঞ্চলের মানুষ কাতর হয়ে পড়েছে। অনেকে খড়কুটো জড়ো করে শিশুদের নিয়ে আগুন পোহাচ্ছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় রাস্তাঘাটে স্বল্প পরিমানে যানবাহন চলাচল করছে। গত ৩ দিন ধরে থেমে থেমে শৈত্য প্রবাহ ও তীব্র শীতে কাবু করে ফেলেছে জেলাবাসিকে।
সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে এলাকার হাট বাজার গুলোতে পুরাতন শীত বস্ত্র কেনার জন্য ভীড় জমাচেছ হত দরিদ্ররা। গত ২৪ ঘন্টায় সুযের মুখ দেখা যায়নি। সারা দিন ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল আকাশ। রাত-দিন বৃষ্টির মত শিশির পড়ে। বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাহিরে যায় না। রাস্তা ঘাটে যান বাহন চলাচল কমে গেছে। ঢাকা গামী বাস-ট্রাক ঘন-কুয়াশার কারনে গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হচেছ। ঘন কুয়াশার কারণে নৌ-পথের ইঞ্জিন চালিত স্যালো-বোট গুলো সময় মত ঘাট থেকে ছেড়ে যেতে পারছেনা। অপরদিকে, দিন মুজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ গুলো পড়েছে বিপাকে। ঠান্ডায় কাজ কর্ম না করে অলস সময় কাটাচ্ছে ঘরে বসেই।
রংপুর আবহওয়া অফিস জানায়, সোমবার এ অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, সরকারি ভাবে বেশ কিছু কম্বল বরাদ্ধ পাওয়া গেছে, যা ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। শীতার্ত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে শুধু সরকারি সাহায্যই যথেষ্ট নয় বেসরকারি উদ্যোগও জরুরি এমনটাই প্রত্যাশা শীতার্ত মানুষদের।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।