লালমনিরহাট ফেঁসে যাচ্ছেন বিএডিসির ডিলারসহ ৬ ব্যবসায়ী
লালমনিরহাটের সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর বাফা গোডাউনে সার খালাস না করে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র গোডাউন কর্মকর্তার কাগজপত্র জালিয়াতি করে দুই ট্রাক ইউরিয়া সার পাটগ্রামে বিক্রির ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। জালিয়াত চক্রের সদস্যেদের ধরার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে তদন্ত শুরু করেছেন।
এ ঘটনায় একদিকে মামলার প্রস্তুতি চলছে অনদিকে খোয়া যাওয়া সারগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি নিয়ে গতকাল রবিবার পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ কৃষি অফিসারের কার্যালয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় একটি মহল ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লেগেছে।
লালমনিরহাট বাফার গোডাউন সূত্র ও ট্রাক চালক চাঁন মিয়া জানায়, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাসট্রিজ করপোরেশনের সিরাজগঞ্জ বাঘাবাড়ী ট্রানজিটপয়েন্ট থেকে গত ২২ ডিসেম্বর ও ২৪ ডিসেম্বর লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগর বাফার গোডাউনে (ঢাকা-মেট্রো-ট-১৪৭৫১৮ ও ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৫০৯১ নম্বর ট্রাকে) ৪০ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার(কাফকো) পাঠানো হয়। বিসিআইসির নিয়োগপ্রাপ্ত পরিবহন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের সরবরাহকৃত (৮শ-বস্তা) সারগুলো লালমনিরহাট মহেন্দ্রনগর বাফার গোডাউনে খালাস করার কথা ছিল। কিন্তু সেখান থেকে ওই দুই ট্রাক সার বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের স্থানীয় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র ট্রাক চালকের যোগসাজশে বাফার মহেন্দ্রসগর ইনচার্জ হানিফ মিয়ার স্বাক্ষর ও সিল জাল করে বিএসডিসির নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলার লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার মেসার্স করিম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারি আব্দুল লতিফ সুজন সারগুলো নিজের গোডাউনসহ কয়েকজন খুচরা সার বিক্রেতার গোডাউনে খালাস করে নেন।
এদিকে, অনেক খোঁজাখুজির পর ট্রাক মালিকদের দেওয়া তথ্য মতে খোয়া যাওয়া ওই ৮শ বস্তা সার খালাসের তথ্য পায় বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত বিসিআইসি (রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সার সরবরাহ ও তদারকির দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা) কর্মকর্তা শামীম আকতার। গোপন অনুসন্ধানে সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হকের কার্যালয়ে রোববার কয়েক দফায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন কর্মকর্তারা। এ বৈঠকে বিসিআইসি সার ডিলার সমিতির লালমনিরহাট জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মনোয়ার হোসেন দুলু, পাটগ্রাম বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক সার ও বীজ ব্যবসায়ী শামসুল আলম দুলালসহ একাধিক ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে বাউরার মেসার্স করিম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুল লতিফ সুজনের সেলফোনে(০১৭১৭-৪২৩৩৩৮) একাধিকবার যোগযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি ইতোমধ্যে ঝামেলা এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন।
লালমনিরহাট বাফার গোডাউন ইনচার্জ মোহাম্মদ হানিফ মিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, একটি চক্র আমার স্বাক্ষর ও সিল জালিয়াতি করে দুই ট্রাক ইউরিয়া সার(৮-বস্তা) প্রতারণা করে নিয়ে গেছে। এসব ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
বিসিআইসি সার ডিলার সমিতির লালমনিরহাট জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মনোয়ার হোসেন দুলু জানা, ‘আমি তদন্ত কমিটি এবং পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়েছি। এছাড়া বিএডিসির সার ডিলারদের কৃষিবিভাগ জড়িত কি না সেটাও তদন্ত করার অনুরোধ করেছি। অপরাধী যতবড়ই হোক তাদেরকে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন বলে তিনি দাবি করেন।’
পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুর আলম জানান, জালিয়াতি করে ৪০ মেট্রিকটন ইউরিয়া (কাফকো) সার উপজেলার মের্সাস এডি এন্টারপ্রাইজ ১শ বস্তা, মের্সাস বাঁধন ট্রেডার্স ১শ বস্তা, মেসার্স জান্নাত ট্রেডার্স ২শ বস্তা, মেসার্স আব্দুল জব্বার ২শ বস্তা ও মেসার্স গোলাম রব্বানী ২শ বস্তা করে ভাগাভাগি করে দেন বিএডিসির সার ডিলার বাউরার মেসার্স করিম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুল লতিফ সুজন।
নরসিংদীর মেসার্স পোটন ট্রেডার্সে প্রতিনিধি গোলাম রব্বানী রুবেল জানান, ‘এ ঘটনায় ট্রাক মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে লালমনিরহাট সদর থানায় দুইটি সাধারন ডায়েরি করা হয়েছে। এখন আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সার উদ্ধার এবং ট্রাক মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্ততি চলছে।’
বগুড়ার ট্রাক মালিক শামীম মাহমুদ জানান, ‘চালক চাঁন মিয়া কাগজপত্র মতে পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা বাজারের মেসার্স করিম ট্রেডার্সের মালিকের কথামতো পাটগ্রাম পৌরবাজারের মেসার্স ইমরান ও সুমন ট্রেডার্সের গোডাউনে ৪শ বস্তা ইউরিয়া সার বুঝিয়ে দিয়ে রশিদ গ্রহন করেন। পরে জানতে পারি কাজগপত্র জালিয়াতি করা হয়েছে। এঘটনায় আমরাও ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে গত ১৪ জানুয়ারী লালমনিরহাট সদর থানায় (জিডি নম্বর-৫৮৫) জিডিও করেছি। প্রয়োজনে মামলা করা হবে।’
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল হক বৈঠকের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘সার কেলেংকারির বিষয়ে উচ্চতর তদন্ত চলছে। স্থানীয় ৬ খুচরা সার ব্যবসায়ীর স্বীকারোক্তি পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবে।’
বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত বিসিআইসি (রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সার সরবরাহ ও তদারকির দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা) কর্মকর্তা শামীম আকতার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে মাঠপর্যায়ে তদন্ত কার্যক্রমসহ পাটগ্রাম উপজেরা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হকের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’
লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) এএইচএম মাহফুজুর রহমান সাধারণ ডায়েরির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমি ফোনে জানতে পেরেছি ঘটনার সবকিছু উদঘাটিত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এখন মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।’
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।