- হোম
- >
- আইন-মানবাধিকার
- >
- খালাস চেয়ে আপিল করল কায়সার রাজাকার
খালাস চেয়ে আপিল করল কায়সার রাজাকার
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫
প্রিন্টঅঅ-অ+
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাজাকার সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার খালাস চেয়ে আপিল করেছেন। সোমবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় সর্বমোট ৫৬টি গ্রাউন্ডে মূল ৫০ পৃষ্ঠার আপিল আবেদনটি দায়ের করা হয়েছে।
বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন কায়সারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ রানা। কায়সারের পক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন আপিলটি দায়ের করেছে।
আপিলে সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন কায়সারের পক্ষে শুনানি করবেন বলে জানা গেছে।
গত ২৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে কায়সারকে ফাঁসির আদেশ দেন। এ রায়টি মোট ৪৮৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত মোট ১৬৬১ প্যারায় প্রণীত হয়েছে।
কায়সারের বিরুদ্ধে গণহত্যার একটি, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ১৩টি এবং ধর্ষণের দু’টিসহ মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৪টি ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়েছে। প্রমাণিত অভিযোগের মধ্যে ৩, ৫, ৬, ৮, ১০, ১২ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া ১, ৯, ১৩ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ২ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর, ৭ নম্বরে ৭ বছর ও ১১ নম্বরে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।
কায়সারের বিরুদ্ধে আনা ৪ ও ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে এ অভিযোগগুলোতে কোনো শাস্তি দেয়া হয়নি।
অভিযোগ ১: ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুর দেড়টা থেকে ৩টার মধ্যে সৈয়দ কায়সার তার কায়সার বাহিনী ও পাকিস্তানী সেনাবাহিনীসহ ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার ইসলামপুর থানা এলাকায় যায়। কায়সারের নির্দেশে ইসলামপুর থানার সামনে জনৈক শাহজাহান চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। একইদিনে একই থানাধীন কাজীবাড়ী এলাকায় নায়েব আলী নামে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজনকে নির্যাতন করা হয়। পরে কাজীবাড়ী এলাকার ১৫টি ঘরবাড়ি লুটপাটও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
অভিযোগ ২: ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল বিকাল ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে সৈয়দ মো. কায়সার তার কায়সার বাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীসহ হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানা এলাকায় মাধবপুর বাজারের পশ্চিম পাশে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়। একইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী কাটিয়ারা বাজারে ১৫০টি ঘরবাড়ি ও দোকানপাট লুটপাট করে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক কামিনী রায়, বিনোদ বিহারী মোদক, শচীন্দ্র রায়, হীরেন্দ্র রায়, রতি বাবু, অহিদ হোসেন পাঠানের সম্পত্তি আগুন দিয়ে ধ্বংস করে।
অভিযোগ ৩: ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিলহবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর বাজার থেকে আধা কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণনগর গ্রামে হামলা চালায় সৈয়দ মো. কায়সার, তার বাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সেখানে অন্তত ৫৫টি ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কায়সারের নির্দেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অহিদ পাঠান, চেরাগ আলী, জনাব আলী ও মধু সুইপারকে গুলি করে হত্যা করে।
অভিযোগ ৪: ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটার মধ্যে আসামি সৈয়দ মো. কায়সার, তার ‘কায়সার বাহিনী’র ১০/১৫ জন সদস্য এবং ৩০/৩৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিয়ে মাধবপুর বাজারের উত্তর-পূর্ব দিকে হামলা চালায়। তাদের ছোড়া এলোপাতারি গুলিতে সাত্তার, বরকত আলীসহ ১৫জন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হন। একইসঙ্গে দেড়শ থেকে দুইশ বাড়িঘর ও দোকানপাট লুটপাট করে পুড়িয়ে দেয় তারা।
অভিযোগ ৫: ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল দুপুর থেকে বিকালের মধ্যে হবিগঞ্জ সদরের শায়েস্তাগঞ্জ খাদ্যগুদাম এবং শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারের রেলব্রিজ এলাকায় আব্দুল আজিজ, আব্দুল খালেক, রেজাউল করিম, আব্দুর রহমান এবং বড়বহুলা এলাকার আব্দুল আলী ওরফে গ্যাদা উল্লাহ, লেঞ্জাপাড়া এলাকার মাজত আলী ও তারা মিয়া চৌধুরীকে আটক করে নির্যাতনের পর হত্যা করে সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী।
অভিযোগ ৬: ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যার পর হবিগঞ্জ সদরের পুরানবাজার পয়েন্টে সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এ বি এম মহিউদ্দিনের বাড়িতে হামলা হয়। এছাড়া লস্করপুর রেল লাইনের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং হীরেন্দ্র চন্দ্র রায়কে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর হত্যা করে সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী।
অভিযোগ ৭: সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল হবিগঞ্জ সদরের এনএনএ মোস্তফা আলীর বাড়িসহ ৪০/৫০টি বাড়িঘর, দোকানপাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
অভিযোগ ৮: মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ মে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার চাঁদপুর চা বাগানে সাঁওতাল নারী হীরামনিকে ধর্ষণ করে সৈয়দ কায়সারের বাহিনী। সৈয়দ কায়সার এ সাঁওতাল নারীকে ধর্ষণে সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন।
অভিযোগ ৯: ১৯৭১ সালের ১৫ মে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরের লোহাইদ এলাকার আব্দুল আজিজ, আব্দুল গফুর, জমির উদ্দিন, আজিম উদ্দিন, এতিমুনেছা, নূর আলী চৌধুরী, আলম চাঁনবিবি ও আব্দুল আলীকে হত্যা করে সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। এদিন আকরাম আলী চৌধুরী (বর্তমানে মৃত) নামে একজনকে জখমও করেন সৈয়দ কায়সার।
অভিযোগ ১০: এরপর ১৩ জুন হবিগঞ্জ সদর, মোকাম বাড়ি, শায়েস্তাগঞ্জ থানার আর অ্যান্ড এইচ ডাকবাংলো এবং মাধবপুর থানার শাহাজীবাজার এলাকার হামলা চালায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। এ সময় শাহ ফিরোজ আলী নামের একজনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। সাবু মিয়া নামের আরেকজনকে অপহরণের পর চালানো হয় নির্যাতন।
অভিযোগ ১১: ১৯৭১ সালের ২৩ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার হরিপুর থানার নাসিরনগরের গোলাম রউফ মাস্টার ও তার পরিবারের লোকজনদের উপর নির্যাতন চালায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। এছাড়া গোলাম রউফ মাস্টারকে অপহরণ ও আটকের পর তার ওপর নির্যাতন চলে। এক পর্যায়ে মুক্তিপণ আদায় করে তার বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এছাড়া একই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার দয়াল গোবিন্দ রায় ওরফে বাদল কর্মকারের বাড়িতে হামলা চালায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। লুটপাটের পর ওই বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
অভিযোগ ১২: সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী অগাস্টের মাসের মাঝামাঝি কোনো একদিন হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার বেলাঘর ও জগদীশপুর হাইস্কুল থেকে আতাব মিয়া, আইয়ুব মিয়া, মাজেদা বেগমকে অপহরণ করে। এক পর্যায়ে মাজেদাকে ধর্ষণ করা হয়।
অভিযোগ ১৩: ১৯৭১ সালের ১৮ অগাস্ট হবিগঞ্জের নলুয়া চা বাগান থেকে মহিবুল্লাহ, আবদুস শহীদ, আকবর আলী, জাহির হোসেনকে অপহরণ করে নরপতিতে আব্দুস শাহীদের বাড়ি ও রাজেন্দ্র দত্তের বাড়িতে স্থানীয় শান্তি কমিটির কার্যালয় এবং কালাপুরের পাকিস্তানি আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। অপহৃতদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়।
অভিযোগ ১৪: ১৯৭১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের মাধবপুরে সোনাই নদীর ব্রিজ এলাকা থেকে সিরাজ আলী, ওয়াহেদ আলী, আক্কাস আলী, আব্দুল ছাত্তারকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। তাদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়।
অভিযোগ ১৫: অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি কোনো একদিন সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরে শালবন রঘুনন্দ পাহাড় এলাকায় শাহাপুর গ্রামের নাজিম উদ্দিনকে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ ১৬: সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৫ নভেম্বর ব্রাহ্মণবড়িয়ার ভাটপাড়া থানার দাউরা, নিশ্চিন্তপুর, গুটমা, বুরুঙ্গা, চিতনা, নূরপুর, ফুলপুর, জেঠাগ্রাম, পাঠানিশা, কুলিতুণ্ডা, আন্দ্রাবহ, তিলপাড়া, কমলপুর, গঙ্গানগর, বাঘি, শ্যামপুর, কুয়ারপুর, নোয়াগাঁও, কুণ্ডা, লক্ষীপুর, করগ্রাম গ্রামের ১০৮ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।