ছাতকে লাফার্জ-হোলসিম সিমেন্ট কোম্পানী একীভূত হচ্ছে
সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায় অবস্থিত লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কোম্পানী। যত উৎপাদন, তত বিক্রি। কিন্তু চাহিদা আরো বাড়ছে। ভিন্ন পন্থায় নিজেদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াচ্ছে বাংলাদেশে অবস্থিত বহুজাতিক ছাতকের লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কোম্পানি। বৈশ্বিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে লাফার্জের সঙ্গে হোলসিম সিমেন্ট কোম্পানী একীভূতকরণের অপেক্ষায় রয়েছে। কোম্পানীর কর্মকর্তাদের মতে, জুনের মধ্যেই এটি সম্পন্ন করার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।
ছাতকে নোয়ারাই এলাকায় সুরমা নদীর তীর পার্শ্বে ২০০ একর জায়গার ওপর অবস্থিত এ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ব্যবসার পাশাপাশি শিক্ষা, নারীর অগ্রযাত্রা, সাংস্কৃতিক, রাস্তা সম্প্রসারণ, গরীব অসহায় ব্যক্তিদের মধ্যে শীত বস্ত্র বিতরণ, চক্ষু শিবির সহ সামাজিক ও পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমানে কোম্পানির নিজস্ব কারখানায় ‘সুপারক্রিট’ ব্র্যান্ডের সিমেন্ট উৎপাদন করা হয়। এর বাইরে বাজারে লাফার্জের ‘পাওয়ারক্রিট’ ব্র্যান্ডের যে সিমেন্ট পাওয়া যায়, সেটি উৎপাদিত হয় দেশীয় কোম্পানি মদিনা সিমেন্ট কারখানায়। তবে কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও ব্যবসা সম্প্রসারণের পুরো বিষয়টিই এখন এগোচ্ছে হোলসিমের সঙ্গে একীভূতকরণ বা মার্জারকে ঘিরেই।
কোম্পানি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, একীভূতকরণের কাজটি সম্পন্ন হলে ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডের আরও সিমেন্ট বাজারে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সেই সঙ্গে কারখানাও সম্প্রসারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। কোম্পানিটির কমিউনিটি রিলেশনস ম্যানেজার সাব্বির হোসেন জানায়, বর্তমানে লাফার্জের নিজস্ব দুটি সিমেন্ট কারখানায় প্রতিবছর ১৪ থেকে ১৫ লাখ টন সিমেন্ট উৎপাদন করা হয়, যা দেশের মোট চাহিদার ৭ থেকে ৮ শতাংশ।
দেশের বেসরকারি সিমেন্ট কারখানাগুলোর মধ্যে লাফার্জই হচ্ছে একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ কারখানা। সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার উৎপাদন করে সেখান থেকে সিমেন্ট তৈরি করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি তিন থেকে চার লাখ টন উদ্বৃত্ত ক্লিংকার দেশের অভ্যন্তরে ছোট ও মাঝারি মানের বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়। সেখানে অন্য বেসরকারি সিমেন্ট কারখানাগুলোকে বিদেশ থেকে ক্লিংকার আমদানি করতে হয়। এ কারণে দেশের অন্য যেকোনো সিমেন্ট কারখানার চেয়ে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় লাফার্জ বেশ এগিয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ মুহূর্তে আইনগত কারণে ভারত থেকে প্রতিবছর ২০ লাখ টনের বেশি ক্লিংকার তৈরির প্রধান কাঁচামাল চুনাপাথর আমদানি করা যায় না। এ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে প্রতিবছর ৫০ লাখ টন চুনাপাথর আমদানির অনুমতি চেয়ে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের পর্যায়ে রয়েছে। এটি হয়ে গেলে ক্লিংকার উৎপাদন-সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির অর্থ পরিচালক মাসুদ খান এ প্রতিনিধিকে জানান, ‘হোলসিমের সঙ্গে একীভূতকরণের প্রক্রিয়াকে ঘিরেই আমাদের কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। একীভূতকরণের পরই ব্যবসার নতুন পরিকল্পনা ও সম্প্রসারণের কাজে হাত দেয়া হবে।’ কোম্পানিটির ব্যবস্থাপক আনিসুজ্জামান জানান, ভারতের মেঘালয়ে লাফার্জ উমিয়াম মাইনিং প্রাইভেট লিমিটেড নামে নিজস্ব চুনাপাথর উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এটি লাফার্জেরই একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। উৎপাদিত এসব চুনাপাথর চাহিদা অনুযায়ী প্রক্রিয়াজাতের পর ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ স্বয়ংক্রিয় একটি কনভেয়ার বেল্টের (পাথর পরিবহন ব্যবস্থা) মাধ্যমে সরাসরি কারখানায় নিয়ে আসা হয়। বেল্টের ১০ কিলোমিটার বাংলাদেশ ও বাকি ৭ কিলোমিটার ভারত সীমান্তে অবস্থিত। এ জন্য এটি আন্তঃ সীমান্ত শিল্পকারখানার পরিচিতি লাভ করেছে।
এদিকে, ভারতের উচ্চ আদালতে মামলার কারণে ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কয়েক ধাপে কোম্পানিটির ক্লিংকার উৎপাদন কার্যক্রম দুই বছর বন্ধ ছিল। তবে ২০১১ সালের আগস্টে ভারতের আদালত চুনাপাথর আমদানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে রায় দেন। এরপর ওই বছর থেকে পুরোদমে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়। বিপণন বিভাগের কর্মকর্তারা জানায়, প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত পণ্যের বড় অংশই বাজারজাত করা হয় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে।
এ ছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পণ্য সরবরাহ করা হয়, যার ৭০ শতাংশই যায় নদীপথে। অন্যান্য: পরিবেশ উন্নয়নে জোর দেয়ায় লাফার্জের কারখানায় কোনো বর্জ্য হয় না। তবে তাদের ক্লিংকার তৈরির চুলিতে প্রতিদিন গড়ে বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানির অবিক্রীত ও মেয়াদোত্তীর্ণ সাড়ে তিন টন পণ্য ও বর্জ্য পরিবেশ সম্মতভাবে পরিশোধন করা হয় বলে জানায় কারখানা ব্যবস্থাপক আনিসুজ্জামান।
লাফার্জের নিজস্ব জমিতে গড়ে তোলা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে ২০০০ সাল থেকে ঐ এলাকার ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা, দরিদ্র ও অশিক্ষিত নারীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ সহ স্থানীয় জনগণকে সার্বক্ষণিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয় বলে জানায় কোম্পানিটির কর্মকর্তা সাব্বির হোসেন। এ ছাড়া ১০০ জন শিক্ষার্থীকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রম চালু করেছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।