- হোম
- >
- শিল্প-সাহিত্য
- >
- বাবার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দু'টি ঘটনা
বাবার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দু'টি ঘটনা
৫০ দশকের শেষ দিকে বোধ করি, টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে শেখ মুজিবর রহমান সেগুন বাগিছায় আমাদের বাড়ির পশ্চিমে বাড়িটিতে বাস করতে এসেছিলেন। হাসিনা তখন কিশোরী। সীমানা প্রাচীরের এপারে-ওপারে তার সঙ্গে আমার ভাগ্নিদের কথাবার্তা চলত। হাসিনার কোলে তার ভাই থাকত। মনে হয় কামালই হবে।
সেই সময়কার কথা। এক সন্ধ্যায় ধুম বৃষ্টি নেমেছে। আমার বাবা কাজি মোতাহার হোসেন যেন কোথা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে তাড়াহুড়ো করে নিজের বাড়ি মনে করে এক বাসায় ঢুকে পড়লেন। সেটি শেখ সাহেবের বাসা। মুজিব তাকে মাথা টা মুছিয়ে সাদরে বৈঠক খানায় বসিয়ে, চা-নাশতা দিতে বললেন বাসার লোক জনদের। নাস্তা খাওয়া হলে, বাবা ঘরের চারদিকে টাকিয়ে বলে উঠলেন, কই, এটা তো আমার বাড়ি না! ততক্ষণে বৃষ্টি ধরেছে। শেখ মুজিব হেঁসে নানা সৌজন্য করে তাকে ছাতা আর লোক দিয়ে আমাদের বাড়িতে পৌছিয়ে দিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে দাবা খেলার জন্যে বিদেশ যাবার কথা ছিল কাজী সাহেবের। দাবার কথায় তো দিন দুনিয়া বিস্মরণ হয় তার। চলে গেলেন করাচীতে। কিন্তু করাচীতে বাঙ্গালীদের ফেলে রেখে পাকিস্থানিরা বিদেশে চলে গেল খেলতে। ভাগ্যিস আমাদের ছোট বোন ওখানে চাকরি করতো। সেখানেই আটকে গেলেন বাবা। ডিসেম্বরে ভারত আমাদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ শুরু করলো। স্বাধীনতার পরে আমরা বঙ্গবন্ধুর কাছে রেডক্রসের সূত্রে বাবাকে ফিরিয়ে আনবার জন্যে দরবার করেছিলেন। রেডক্রসের আনা প্রথম ব্যাচেই, যত দূর মনে হয়, বাবাকে ফিরিয়ে আনেন বঙ্গবন্ধু। বাবা ফিরে এলে উচ্চপদস্থ কাওকে ফুল দিয়ে পাঠিয়ে ছিলেন তিনি স্রধা জানাবার জন্যে। তার পরে প্রথমে যে কয়জনকে বঙ্গবন্ধু স্রধাবরে ‘জাতীয় অধ্যাপক’ ঘোষণা করছিলেন, কাজী মোতাহের হোসেন তার অন্যতম। গুণী মানুষের প্রতি এমনি ছিল শেখ মুজিবর রহমানের স্রধা আর সন্মান বোধ।
এবার আর একদিনের ঘটনা বলি। নিজের একটা কাজে কাকভোরে বত্রিশ নম্বরে বাড়িতে গেলে সবাই জিজ্ঞেস করলো, কেন এসেছেন, কি ব্যাপার? উপরে ফোন করে বঙ্গবন্ধুকে বাবার কথা জানানো হল। ঘুম থেকে উঠে তখনো চোখে-মুখে পানি দেওয়া হয়নি দেশ প্রধানের। তিনি বললেন, শীগগির উপরে নিয়ে আয়। বলতে বলতে, আমরা সিঁড়ির কয়েক ধাপ উঠতেই লুঙ্গী পরা অবস্থাতেই নেমে আসতে লাগলেন তিনি। হাত ধরে বাবাকে নিয়ে গিয়ে বসালেন বৈঠক খানায়। হুলস্থুল লাগিয়ে বললেন, ওরে চা দে, নাস্তা দে...। আমি বললাম, উনি তো চা খান না। বললেন, কি খান তবে ? বললাম, দুধ খেতে ভালবাসেন আর ফলমূল। লোক ছুটল গোয়ালে, দুধ দুইয়ে জ্বাল দিয়ে ওকে খাওয়াবার জন্যে। বড় কাঁচের গেলাসে দুধ এল, এল ফল পাকুড়
আমার সমস্যার কথা গুল মন দিয়ে শুনলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্ত প্রতিকারের সময় হল না আর। কেন না, তার কিছুদিন পরেই পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের বীভৎস ঘটনা ঘটে গেল। সেদিন কার ঘটনার ছবি দেখেছি। দেখেছি এই নিয়ে শিল্পীর আঁকা ছবি। আমার চোখে এখনো দোতলার সিঁড়ি বেয়ে তার নেমে আসার ছবি ভাসে। তারপরেই সেই ছবি হয়ে যায় তার শেষ দিনের ছবি। দেখি, সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছেন তিনি। পড়তেই থাকেন ... পড়তেই থাকেন... ।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।