- হোম
- >
- শিল্প-সাহিত্য
- >
- বোকা রুপালি মাছ
বোকা রুপালি মাছ
বহু বছর আগের কথা। ভারত মহাসাগরের নীল জলে এক রুপালি মাছ বাস করত। সে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকত। সারাদিন নিজের সৌন্দর্য চর্চা ছাড়া আর কোনো দিকে খেয়াল ছিল না।
এমনিতে মাছটা দেখতে খুব সুন্দর ছিল। তার সারা গায়ে রুপালি আঁশ। যা থেকে উজ্জ্বল আলো ঠিকরে বের হতো। লেজ ও পেটের নিচটা ছিল সবুজ। দেখতে অপূর্ব লাগত। চোখ দুটো গাড় নীল। লম্বা দুটো সাদা মোচ । তার সৌন্দর্য অন্য কারও সাথে মিলত না ।
কিন্তু মাছটি এতেও সন্তুষ্ট হতো না। কি করলে আরও সুন্দরী দেখাবে এই তার একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান ছিল। সমুদ্রের সব মাছের তার এই স্বভাবের কথা জানা ছিল । কেউ যদি সত্যি করেও সুন্দরী বলত তাতেও সে রাগ করত। ভাবত তার সাথে কৌতুক করছে।
অবশ্য অন্য মাছেরা তাকে নিয়ে হাস্য-কৌতুক যে করত না তা কিন্তু নয়। একদিন একটা বড় মাছ রুপালি মাছটাকে শুনিয়ে শুনিয়ে ওর বন্ধুকে বলল, জানো এবার কোথা থেকে বিশ্বসুন্দরী হয়েছে ?
তার বন্ধু উত্তর দিল, না তো ! আমাদের এখান থেকে নাকি ?
তুমি একটা বোকার হদ্দ দেখছি ! আমাদের এখানে অত সুন্দরী মাছ কোথায় ? বলল বড় মাছ।
তাহলে ?
আটলান্টিক ওসেন থেকে। তবে তার সৌন্দর্যের মূলমন্ত্র কি সেটা আমি শুনেছি। বলল বড় মাছ।
বল না ভাই শুনি ? আগ্রহ দেখাল অন্য বন্ধু।
সত্যি-মিথ্যা জানি না। শুনলাম ওই মাছটা প্রতিদিন মধ্য সমুদ্রে গিয়ে একশ বার ডিগবাজি খায়। আর গভীর সমুদ্রে গিয়ে সাঁতরায়। তাতেই সে এত সুন্দরী হয়েছে । লেজটা তো চমৎকার বড় হয়েছে । উত্তর দিল বড় মাছ ।
বোকা রুপালি মাছটা কাছেই ছিল। সব শুনতে পেল। পরদিন থেকে সে মধ্য সমুদ্রে গিয়ে ডিগবাজি খেতে লাগল। এভাবে পুরো একমাস যাবার পর একদিন ওর বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করল, বল তো দেখি, আমি আগের থেকে বেশি সুন্দরী হয়েছি কি-না ?
রুপালি মাছের এই বোকামিতে ওর বান্ধবী সত্যি মনে কষ্ট পেল। তাই বলল রুপালি তুই দেখতে সত্যি অপূর্ব সুন্দর হয়েছিস। আর ডিগবাজি খাবার দরকার নেই । তোর লেজের মত এত সুন্দর লেজ আর কারো নেই।
বোকা মাছ খুশি হলেও ওর সুন্দরী হবার আকাঙ্ক্ষা কমল না। একদিন সে সমুদ্রের তলদেশে সাঁতরাতে গেল। ঐদিন সে শুনেছিল সমুদ্রের গভীরে সাঁতরালে সুন্দর হওয়া যায়। সে কথা সে মনে করে রেখেছে।
সমুদ্রের তলদেশে সাঁতরাতে সাঁতরাতে হঠাৎ করে শ্যাওলার জঙ্গলে একটা ভাঙ্গা বাক্স, রুপালি চেন লাগানো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখল। দ্রুত সাঁতরে ওটার কাছে গেল। বাক্সটার মধ্যে প্রচুর রত্ন খচিত গহনা রয়েছে দেখতে পেল।
বোকা মাছের আনন্দ আর ধরে না । নিজের চোখকে তার বিশ্বাস হচ্ছিল না। কোনো এক সময় জাহাজ ডুবি হয়েছিল। এগুলো তারই সম্পদ। সে ভাবল কি সৌভাগ্য তার। সে যদি এগুলো পরে তাহলে অবশ্যই তাকে সবাই বিশ্বসুন্দরী বানাবে। সে উৎসাহের সাথে ভাঙ্গা বাক্সের মধ্যে ঢুঁ মারতে লাগল। যাতে করে ওর মধ্যে থেকে গহনাগুলো বের করা যায়।
বিশেষ চেষ্টায় যেগুলো বের করতে পারল তার মধ্যে বেশিরভাগই ব্রোচ, নেকলেস আর একটা মুকুট। ব্রোচ তো শুধু পোশাকের ওপর পড়া যায়। যা নাকি মাছের আঁশের উপর লাগানো সম্ভভ নয়। নেকলেসটা গলার মধ্যে ঢুকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। অবশেষে সে রুবি ও হীরা বসানো মুকুটটা নিজের মাথায় বসাল ।
কিন্তু এটা পরে সে আগের মতো সাঁতার দিতে পারছিল না। কারণ জরে সাঁতরালে মুকুটটা ছিটকে পরে যাওয়ার ভয় ছিল। তাই স্থির পানিতে আস্তে আস্তে সাঁতরাতে লাগল।
সন্ধার আগে অন্য মাছরা সবাই যার যার বাসস্থানে ফিরে গেল। বোকা মাছটা মুকুটটা হারানোর ভয়ে উপরে উঠতে পারছিল না। কাছেই ভাঙ্গা জাহাজের খোলের মধ্যে অক্টোপাসের বাসা ছিল। পানির রঙ সন্ধ্যার অন্ধকারে কাল হলে অক্টোপাসের দল বাইরে বেরিয়ে আসে। মুকুটের পাথরের উজ্জ্বলতায় বুড়ো অক্টোপাসের চোখ ধাধিয়ে গেল। সে ভাবল এটা নিশ্চয়ই কোন সাপের কুণ্ডুলি। সে তার দুটো শুঁড় দিয়ে ওটাকে এক ঝটকায় মাছের মাথার উপর থেকে কেড়ে নিল। এবং তার ছয়টা পা দিয়ে ওটা ভেঙ্গে মুখে দিল।
কিন্তু পাথর অ সোনা শক্ত জিনিস ওটা গেলা সম্ভব নয়। সে যতবার খাওয়ার চেষ্টা করতে লাগল ততই তার মুখ অ শুঁড়গুলো ক্ষতবিক্ষত হতে লাগল। অবশেষে বিকট শব্দে আর্তনাদ করে ওটা দূরে ছুড়ে ফেলল। মুকুটের ভাঙ্গা টুকরোগুলো ছড়িয়ে পড়ল। বোকা মাছ হতম্ভভ হয়ে এসব কাণ্ড দেখছিল। অক্টোপাস যন্ত্রণায় তার শুঁড়গুলো পানিতে আছড়াতে লাগল। মাছটা তো কাছেই ছিল। যখন সচেতন হয়ে সরতে যাবে, শুঁড়ের বাড়ি এসে ওর সুন্দর লেজের ওপর পড়ল। মুহূর্তে লেজের এক অংশ ছিড়ে পরে গেল। মাছটাও যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে দ্রুত সাঁতরাতে লাগল। মনে মনে বলল, যাক বাবা, মুকুটটার জন্যই আজ প্রাণে বেঁচে গেলাম। থাক বাবা সুন্দরী হয়ে কাজ নেই আমার ।
সম্পাদনা: ঐশ্বর্য চৌধুরী
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।